বিজ্ঞাপন

ধনরাজন রাধাকৃষ্ণন এ ভাবেও চলে যাওয়া যায়!

ধনরাজন রাধাকৃষ্ণন এ ভাবে চলে না গেলেই হচ্ছিল না? শান্ত, স্নিগ্ধ, চুপচাপ এক কেরালিয়ান। যাঁর ঠোঁটের কোণায় সবসময় লেগে থাকত একটা হালকা হাসি।
বিজ্ঞাপন

ফেসবুকের কভারে মেয়ের সঙ্গে এই ছবি আজও উজ্জ্বল।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

নরাজন রাধাকৃষ্ণন এ ভাবে চলে না গেলেই হচ্ছিল না? শান্ত, স্নিগ্ধ, চুপচাপ এক কেরলিয়ান। যাঁর ঠোঁটের কোণায় সব সময় লেগে থাকত একটা হালকা হাসি। কথা বলতে গেলে খুব বেশি কিছু পাওয়া যেত না। এক-দু’শব্দেই সেরে ফেলতেন জবাব। সেই ধনরাজন রাধাকৃষ্ণন কলকাতা ফুটবল ছেড়েছেন তা-ও কয়েক বছর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কো‌ন ক্ষমতায় আজও তিনি রয়ে গিয়েছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীর মনে তা তিনিই জানেন। না হলে কখনও তারকা না হয়ে ওঠা একজন ফুটবলার এ ভাবে থেকে যেতে পারে? যা আরও এক বার প্রমাণ হল তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর।

গত ২৯ ডিসেম্বর মাঝ রাতে কলকাতার এক সাংবাদিকের ফোনটা সাময়িক সময়ের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছিল সব কিছু।
‘‘খবর শুনেছ?’’
‘‘কী?’’
‘‘ধনা আর নেই’’…
‘‘সেভেন আ সাইড ম্যাচ খেলার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। মাঠেই সব শেষ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।’’

আর কিছু শুনতে চাইনি। ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম।

তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ভিন্ দেশের, ভিন রাজ্যের কয়েক জন। তাঁর মধ্যে এক জন ধনরাজন রাধাকৃষ্ণন। অনেক সময় কেটে যেত এই দলের অনুশীলনে, ম্যাচে। তাই হয়তো ধনরাজনের সঙ্গেও বন্ধুত্বটাও গাঢ় হয়ে উঠেছিল।

ধনরাজনের চ্যারিটি ম্যাচে মিলে গিয়েছিল সব খেলা

তখন চুটিয়ে সাংবাদিকতা করছি। ফুটবল মাঠই তখন আমার ঘর-বাড়ি। দারুণ একটা দল বানিয়েছিলেন নবাবদা (নবাব ভট্টাচার্য), আলোদারা (আলোকেশ কুণ্ডু)। ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব। যখন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো বাংলার ঐতিহ্যশালী দলে বাঙালি ফুটবলারের হাহাকার, তখনই এক ঝাঁক বাঙালির উপর ভরসা রেখেছিলেন এই দুই বাঙালি কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ভিন্ দেশের, ভিন রাজ্যের কয়েক জন। তাঁর মধ্যে এক জন ধনরাজন রাধাকৃষ্ণন। অনেক সময় কেটে যেত এই দলের অনুশীলনে, ম্যাচে। তাই হয়তো ধনরাজনের সঙ্গেও বন্ধুত্বটাও গাঢ় হয়ে উঠেছিল।

একরাশ হতাশা ঝরে পড়েছিল সে দিনের ওই মেসেজটায়। ভবানীপুরে সই করে মেসেঞ্জারে জানিয়েছিলেন। আমি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম।
মাঝে মাঝেই লিখতেন, ‘‘ভুল গ্যায়ি কেয়া?’’


এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন

ভিভা কেরল থেকে তিনি চলে এসেছিলেন বাংলার ক্লাবে। দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে ক্লাবকে প্রথম ডিভিশন আই লিগে তোলার পরই বাংলার এই ক্লাবের অফার যায় তাঁর কাছে। কোচ চাটুনির উপদেশে শেষ পর্যন্ত কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। সেই শুরু। তার পর টানা কলকাতার তিন প্রধানে দাপিয়ে খেলেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান ছাড়াও বাংলা দলের হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেন ২০১০-এ। সে বার সন্তোষ ট্রফি জিতেছিল বাংলা অনেক বছর পর আরও এক কেরলিয়ান ডেনসন দেবদাসের গোলে।

ধনরাজনের চ্যারিটি ম্যাচে তাঁর এক সময়ের সতীর্থরা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার ফুটবল ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়েছিলেন ধনরাজন। কিন্তু, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। ফেসবুক মেসেঞ্জার খুললে ধনরাজনের অনেক স্মৃতি। কলকাতা ছাড়ার আগে লিখেছিলে‌ন, ‘‘বুড়ো হয়ে গিয়েছি, তাই কলকাতার দলে আর জায়গা হবে না। ফিরে যাচ্ছি।’’

একরাশ হতাশা ঝরে পড়েছিল সে দিনের ওই মেসেজটায়। ভবানীপুরে সই করে মেসেঞ্জারে জানিয়েছিলেন। আমি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম।

মাঝে মাঝেই লিখতেন, ‘‘ভুল গ্যায়ি কেয়া?’’

২০১৯-এর অগস্টে শেষ বার মেসেঞ্চারে লিখেছিলেন, ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে।’’ আমার কখনও ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়নি। কিন্তু ধনা কখনও ভোলেনি আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে।

খবরটা পাওয়ার পর থেকে বার বার সেই মেসেঞ্জারটা দেখছিলাম। আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। কোনও কথা বলেই লিখত, ‘‘এটা কাউকে বোলো না কিন্তু।’’ তাই অনেক কিছুই এখানে বলা হল না। আমি কথা রেখেছি।

২০১৯-এর অগস্টে শেষ বার মেসেঞ্চারে লিখেছিলেন, ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে।’’ আমার কখনও ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়নি। কিন্তু ধনা কখনও ভোলেনি আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে।

ধনরাজনের স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে তাঁর প্রথম ক্লাবের দুই কর্তা নবাব ভট্টাচার্য (বাঁ দিক) ও আলোকেশ কুন্ডু (ডান দিক)।

কলকাতা ছাড়ার পর সে রকম ভাবে পেশাদার ফুটবলে তাঁকে আর দেখা যায়নি। কিছুটা অভাবের মধ্যে দিয়েই জীবন কাটাচ্ছিলেন স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত স্পোর্টস কাউন্সিলে চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই চাকরিতে আর যোগ দেওয়া হল না। এই জানুয়ারিতেই যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

কেরালা যাওয়ার নিমন্ত্রণও করেছিল। আমি এত ঘুরি দেখে বলেছিল, ‘‘কী মজা তোমার কত ঘুরে বেড়াও। এবার কেরালা এসো। আমি ঘোরাব।’’
হয়তো কখনও যাওয়া হবে কিন্তু ধনরাজনের সঙ্গে আর দেখা হবে না।

১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলার ফুটবলাররা মিলে চ্যারিটি ম্যাচের আয়োজন করেছিল কলকাতায়। সেখান থেকে ওঠা টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে ধনরাজনের স্ত্রীর হাতে। সাধুবাদ দীপঙ্কর রায়, অভ্র মণ্ডল-সহ যাঁরা যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সবাইকে। পাশে থাকা হল না জানি। কী ভাবেই বা পাশে থাকতাম? সাংবাদিক হিসেবে? না, থাকতে চাইনি। তার বাইরেও যে একটা বিরাট জগৎ রয়েছে। পেশাদার সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে বন্ধুত্বটাই থাক মনে।

কেরালা যাওয়ার নিমন্ত্রণও করেছিল। আমি এত ঘুরি দেখে বলেছিল, ‘‘কী মজা তোমার কত ঘুরে বেড়াও। এবার কেরালা এসো। আমি ঘোরাব।’’

হয়তো কখনও যাওয়া হবে কিন্তু ধনরাজনের সঙ্গে আর দেখা হবে না।

‘‘কথা রাখলে না, রাগ হচ্ছে খুব’’।

তবুও ভালো থেকো ধনা…

জনৈক সাংবাদিকের কলম থেকে

ছবি: ধনরাজন, দীপঙ্কর রায়, নবাব ভট্টাচার্য-র ফেসবুক থেকে


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on February 22, 2020 5:32 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন