বিজ্ঞাপন

অপেশাদার কর্মী আর উচ্ছৃঙ্খল পর্যটকের দায় কার

অদ্ভুত এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সবাই। কারও মধ্যে কোনও ধৈর্য্য নেই, নেই সহনশীলতা, সহানুভূতির লেশমাত্র। পান থেকে চুন খসলেই মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: অদ্ভুত এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সবাই। কারও মধ্যে কোনও ধৈর্য্য নেই, নেই সহনশীলতা, সহানুভূতির লেশমাত্র। পান থেকে চুন খসলেই মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে মনুষ্যত্ব। সেখানে দাঁড়িয়ে নির্বাক পশুদের থেকে ঠিক কী আশা করতে পারি আমরা। মানে ভ্রমণ রসিক মানুষ। যাঁরা এটা বলে গর্ব করেন বেড়ানোটা আমার প্যাশন। কেউ বলেন পাহাড় তো কেউ জঙ্গল ,সমুদ্র, মরুভূমি। কিন্তু কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি এই প্যাশনের বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি প্রকৃতির কথা। এখন কিন্তু সময় এসেছে সেটা ভাবার। যখন ক্রমশ ধসে পড়ছে পাহাড়, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে বন্যপ্রাণ, ফুলে ফেপে উঠছে সমুদ্রের জল— তখন এটা বুঝে নিতে হবে থামার সময় এসেছে বু্দ্ধির দাস মানুষের।

এত কথা কেন লিখছি নিশ্চই ভাবছেন। লিখতে বাধ্য হচ্ছি। সদ্য যেভাবে জলদাপাড়া অভয়ারন্যে জঙ্গল সাফারির একটি গাড়ি উল্টে পর্যটকরা আহত হলেন তার পর আর না বলে পারছি না। জানি, অনেকেই প্রশ্ন করবেন, ‘‘তাহলে কি ঘুরতে যাব না।’’ নিশ্চই যাবেন, তবে নিজেদের সীমাটাও মনে রাখতে হবে।

সেদিন ঠিক কী হয়েছিল সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে এতদিনে সবাই দেখে ফেলেছেন। গন্ডার রাস্তা পার হবে। আমাদের এতই লোভ যে আমরা ক্রমশ এগিয়ে চলেছি তার দিকে। আরও কাছ থেকে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে তো। কী হল তার ফল?  ঘুরতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন তাঁরা। তার মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই তো কিছুদিন আগের কথা। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে হাতির পিঠে সাফারি করতে বেরিয়েছিলেন পর্যটকরা। মাঝ জঙ্গলে তেমনই দুটো হাতির মধ্যে শুরু হয় ঝামেলা, শুঁড়োশুঁড়ি। যার জেরে হাতির পিঠ থেকে সটান নিচে আছড়ে পড়েন দুই পর্যটক। কী বিপুল পরিমাণ তাতে চোট লাগতে পারে সেটা যাঁরা হাতির পিঠে চড়েছেন তাঁরা খুব ভাল করে জানেন। আর যে ভয়ঙ্কর ঘটনার ক্ষত এখনও দগদগে, সেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়া ছেলেটাকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মেড়ে পিষে মারল হাতি তারই বাবার সামনে। ভাবুন তো যন্ত্রণার জায়গাটা যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে এক হতভাগ্য বাবাকে।

এগুলো এক একটা উদাহরণ যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তাদের জগতে মানুষের নিত্য আনোগানো মেনে নিতে পারছে না পশু-পাখিরা। একটু বন্ধ হোক না। তাতে আপনার, আমার বেড়ানোর খুব একটা ক্ষতি হবে না। ওরা শান্তিতে থাকুক। ভাবুন তো যদি জঙ্গলের পশুরা ভাবতো মানুষ দেখতে যাবে। তাহলে আমাদের কী অবস্থা হতো। আসলে বেড়াতে গেলেই প্রকৃতিপ্রেমী হওয়া যায় না আর এটাই সব থেকে বড় সমস্যার কারণ। কেন বলছি?

দেখবেন, একদল পর্যটকদের সঙ্গে এখন মাঝে মাঝেই দেখা হয়ে যায় যারা পাহাড়ের শান্ত পরিবেশে গিয়েও প্রবল জোড়ে বক্স চালিয়ে গান শোনেন, মদ খেয়ে মাতলামো করেন, চিৎকার করে কথা বলেন, অযথা গালিগালাজ করেন, হুল্লোর করেন, আরওনা জানি কী কী করেন। তাদের কাছে এটাই আনন্দ। এঁরা পুজোর প্যান্ডালে, পাড়ার পিকনিকে, রকের আড্ডায় যা করেন সেটাই প্রকৃতির কাছে গিয়েও করেন। তাঁরা আসলে প্রকৃতি ভালবাসে না। তাঁরা প্রকৃতির শব্দ চেনে না। তাঁরা প্রকৃতির অনুভূতি পায় না। আর এই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পর্যটকদের জন্যই যক গন্ডোগোল।

ভেবে দেখুন জঙ্গলে সাফারির সময় চুপ করে থাকতে হয়। কথা বলতে হয় না, শব্দ করতে হয় না, শুধু দেখতে হয়, উপভোগ করতে হয়, ছবি তুলতে হয় কিন্তু শাটারের শব্দ বন্ধ করে। কিন্তু ভিডিওটা দেখলে বুঝতে পারবেন সকলে মিলে কথা বলছিল। গন্ডারটি ভয় পেয়ে গিয়েছিল। দৌঁড়ে বেরতে গিয়ে সামনে পড়ে গিয়েছিল গাড়িটি। কিন্তু সে গাড়িটিকে তাড়া করেনি। বরং এতটাই অপেশাদার, অযোগ্য গাড়ি চালক আর নিরাপত্তারক্ষী যে প্রাণ সংশয় হয়ে গেল পর্যটকদের।

প্রশাসনের ভাবার সময় এসেছে। সাফারির গাড়ি  চালক ভয় পেয়ে যদি গাড়ি চালাতেই ভুলে যায় তাহলে তেমন লোক রাখা কেন? আর নিরাপত্তারক্ষী তো ল্যাজ গুটিয়ে পালাচ্ছিল। ওদের কাছে বন্দুক থাকে হাওয়ায় ফায়ার করলে শব্দে জন্তুরা পালিয়ে যায়। কোথায় কী। আর দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ির চালক তো গাড়ি ব্যাকে আনতে গিয়ে স্টিয়ারিংয়েই কন্ট্রোল রাখতে পারলেন না। জঙ্গলে সাফারির জন্য সঠিক ট্রেনিং ছাড়া অনুমতি দেওয়া উচিত নয় গাড়ি চালক বা নিরাপত্তারক্ষীকে। সঙ্গে বেঁধে দেওয়া উচিত গাড়ির সংখ্যা। দিনে ক’টা গাড়ি জঙ্গে ঢুকতে পারবে সেটা না ঠিক করে দিলে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি ঢুকবে জঙ্গলে তাতে নষ্ট হবে প্রকৃতির ভারসাম্য। বিরক্ত হবে বন্যপ্রাণ। প্রশাসন তাদের কাজ করুক সঙ্গে আমরাও ভাবি একটু। দায় তো সাধারণ মানুষেরও আছে। বন্ধ হোক না কয়েক বছরের জন্য এই জঙ্গল সাফারি।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

0
0

This post was last modified on February 27, 2023 5:18 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন