বিজ্ঞাপন

কলকাতা আছে কলকাতাতেই, বাইপাসের ঘটনা মনে করিয়ে দিল ‘দহন’ সিনেমার প্রেক্ষাপট

কলকাতা আছে কলকাতাতেই (Kolkata City) একটুও বদলায়নি। সেদিনটিও এমনই ছিল। এমনই এক নিরীহ মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়েছিল এক নারী। বাঁচিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই যে সমাজ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

কলকাতা আছে কলকাতাতেই । একটুও বদলায়নি। সে দিনটিও এমনই ছিল। এমনই এক নিরীহ তরুণীকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়েছিলেন এক নারী। বাঁচিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই যে সমাজ! বাঁচতে বাঁচতেও একটি মেয়েকে ঠেলে দেয় হতাশার দিকে। তবুও এটা ভেবে আজও ভাল লাগছে, নব্বইয়ের দশকের সেই তরুণী ২৮ বছর পরেও বেঁচে আছে। আর এটা ভেবে আঁতকে উঠি যে, সেই পুরুষরাও এই সমাজে রয়ে গিয়েছে। আজও রাতের কলকাতায় নিরাপত্তা নেই একটি মেয়ের! লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


দিন: ২৪ জুন, ১৯৯২। স্থান‌: রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন চত্বর। সময়: সন্ধ্যা ৬টা।

ফিরে যাই ওই দিনটায়। এই কলকাতা শহরের বুকে ভরসন্ধ্যায় একদল দুষ্কৃতীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছিলেন এক তরুণী ও তাঁর পুরুষ সঙ্গী। ভরা শহরের রাস্তায় তখন ইতিউতি উঁকিঝুঁকি দেওয়া মানুষগুলো কেমন যেন ছিটকে যাচ্ছিলেন— একটু একটু করে। না, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি কেউই। মেট্রো স্টেশনের এক রক্ষী ছাড়া। কিন্তু, সেই দুষ্কৃতীদের লোহার চেনের আঘাতে ছিটকে পড়েন তিনি। পুরুষ সঙ্গীটিকেও বেধড়ক মারধর করা হয় লোহার চেন দিয়ে। ট্যাক্সিতে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে দুষ্কৃতীরা। ঠিক তখনই সেই যুগলের কাছে ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন এক সাংবাদিক।

যাঁরা সেই যুগলকে হেনস্থা করছিলেন, তাঁদের হাত থেকে রক্ষা করেন তিনিই। যদিও কাছের মানুষদের হাত থেকে রক্ষা পাননি শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া সেই মহিলা। সে তো অন্য কথা, তা নিয়ে আলোচনা করতে বসলে অনেক কথা বলতে হবে।

দিন: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০। স্থান‌: ইএম বাইপাসে, আরআর প্লট। সময়: রাত সাড়ে ১২টা।

শনিবার কলকাতা শহরে আবারও ঘটে গেল সেই ঘটনা। রাতের শহর। না, গভীর রাতের শহর। সদ্য পরিচিত হওয়া এক যুবকের সঙ্গে সময় কাটাতে বেরিয়েছিলেন এক তরুণী। কে জানত যাঁকে রক্ষক ভেবে রাস্তায় আনন্দ করতে বেরিয়েছিলেন মেয়েটি, তিনি-ই ভক্ষক হয়ে যাবেন! গাড়ির মধ্যেই সেই তরুণীর শ্লীলতাহানি করেন তাঁর পুরুষ সঙ্গী। চিৎকার শুনে নিজের গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে আসেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। যিনি আজ দু’টুকরো হয়ে যাওয়া সিনবোন নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছেন। তাঁকে এগিয়ে আসতে দেখে তরুণীকে গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পালানোর চেষ্টা, আর তখনই নীলাঞ্জনার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন ওই ব্যাক্তি।

সে দিনের সেই মহিলা সাংবাদিক বা আজকের নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, এঁরা আজও মানুষের পাশে থাকতে পারেন সর্বস্ব দিয়ে। শুধু যাঁদের জন্য এই মহিলারা নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়েছিলেন বা ঝাঁপালেন, তাঁরা যেন সাহস করে রুখে দাঁড়াতে পারেন, মুখ না লুকিয়ে। না হলে যে আর কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না।

জানি কাল থেকেই প্রশ্ন উঠবে, অত রাতে একটি ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল? তা হলে তো হবেই। যেন রাতের শহর শুধু এই সব পুরুষদের জন্যই কেনা রয়েছে। যেন রাতের শহরে একা মহিলা বেরলেই তাঁর শ্লীলতাহানি করার অধিকার জন্মে যায়!

ঠিক যে ভাবে ২৮ বছর আগে ওই তরুণীর ব্লাউজের পিঠ কতটা কাটা ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যেন পিঠ-কাটা ব্লাউজ পরলেই তাঁকে ধর্ষণ করা যায়? কোথায় লেখা রয়েছে, মেয়েদের সর্বস্ব ঢেকে রাস্তায় বেরতে হবে? কেন একটা মেয়ে রাতের শহরকে উপভোগ করতে পারবে না? কেন ধর্ষিত হওয়ার দায় সেই মেয়েটাকেই নিতে হবে?

সেই ঘটনাকে কাহিনির রূপ দিয়েছিলেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। সেই কাহিনিকে সিনেমার রূপ দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। যা দুটো জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। এ দিনের ঘটনাও হয়তো এক দিন ছাপার অক্ষরে বইয়ের মলাটে শোভা পাবে। শোভা পাবে রূপোলি পর্দায়। পুরস্কার জিতবে। কিন্তু সেই মেয়েটা! হারিয়ে যাবে সমাজের ঘৃণার গভীর খাদে। ভয়ে, লজ্জায় রুখে দাঁড়াতেই পারবেন না। বিচার কাঁদবে নিভৃতে, গুটিয়ে যাবে সাহায্যের হাতগুলো।

তার পরেও নীলাঞ্জনারা থাকবেন আমার তিলোত্তমায় চোখে চোখ রেখে লড়াই করার জন্য। স্যালুট নারী। সিনবোনের ক্ষততে লেখা থাকবে এক মেয়ের বেঁচে থাকা, সাহসের কথা।

গ্রাফিক্স: সুসেচৌ

(আরও ফিচার পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

+1
0

This post was last modified on September 8, 2020 2:54 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন