বিজ্ঞাপন

মেয়ে ইন্দুকে লেখা চিঠিগুলিই গড়ে দিয়েছিল জওহর-কন্যার ভবিষ্যৎ

মেয়ে ইন্দুকে লেখা এক এক করে তিরিশটা চিঠি। শব্দ সংখ্যা নাতিদীর্ঘ। প্রত্যেকটা চিঠিই এ জগৎ-চরাচর সম্পর্কে লেখা। বিবিধ ধারায় বয়েছে চিঠির বিষয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মেয়ে ইন্দুকে লেখা এক এক করে তিরিশটা চিঠি। শব্দ সংখ্যা নাতিদীর্ঘ। প্রত্যেকটা চিঠিই এ জগৎ-চরাচর সম্পর্কে লেখা। প্রকৃতি থেকে প্রথম প্রাণের সঞ্চার, রামায়ন-মহাভারত থেকে মিশর ও ক্রিট, চিন ও ভারতবর্ষ থেকে নানা শ্রেণির মানুষ— এমনই বিবিধ ধারায় বয়েছে চিঠির বিষয়। মেয়েকে লেখা বাবার অজস্র চিঠি। তার মধ্যে থেকে বাছাই করে সমস্ত চিঠি পরে সংকলিত হয়েছে। সমস্ত চিঠিতেই বাবা জওহরলাল মেয়ে ইন্দিরাকে তুমি সম্বোধন করে লিখেছেন। শিশু অবস্থা থেকেই গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন মেয়ের ভবিষ্যৎ। জওহরলাল নেহরু তখন দেশের বিভিন্ন জেলে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর আদরের ইন্দুর বয়স তখন বছর দশেক। শিশুকন্যা বাবার সাহচর্য পায় না। বাবাও কাছে পাচ্ছেন না মেয়েকে। প্রত্যক্ষ করতে পারছেন না মেয়ের বেড়ে ওঠা। গড়ে ওঠা। তাই চিঠি লিখে মেয়ের সঙ্গে সংলাপ তৈরির চেষ্টা করেন। সংলাপই বটে। সামনে বসে যে ভাবে গল্প বলা হয় শিশুদের, ঠিক সে ভাবেই মেয়েকে একের পর এক চিঠি লিখেছিলেন জওহর— কল্যাণীয়াসু ইন্দু। ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে একটি জাস্ট দুনিয়া প্রতিবেদন


১৯১৭ সাল। ১৯ নভেম্বর। ইলাহাবাদে জওহর-কন্যার জন্ম। কাশ্মীরি পরিবার। কিন্তু মেয়ের বয়স বছর দশেক হওয়ার আগেই বাবা জেলে। রাজনৈতিক কারণেই। সেখান থেকেই চিঠি লেখা শুরু করলেন জওহর। ওই চিঠিগুলি যখন বই হয়ে প্রকাশিত হল, ভূমিকায় জওহর লিখলেন, ‘আমার মেয়ে ইন্দিরাকে ১৯২৮ সালের শ্রীষ্মকালে, যখন সে ছিল মুসৌরীতে আর আমি ছিলাম নীচের সমতলে। এগুলি দশ বছরের একটি ছোট মেয়েকে লেখা ব্যক্তিগত চিঠি। কিন্তু বন্ধুরা এই চিঠিগুলির কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে বলেন যে, আমার উচিত এগুলি পাঠকদের কাছে প্রকাশ করা। এই বন্ধুদের পরামর্শ সাধারণত আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। জানি না এ চিঠিগুলি অন্য ছেলেমেয়েদের ভাল লাগবে কি না। আশা করি তাদের মধ্যে যারা এগুলি পড়বে তারা আস্তে আস্তে আমাদের এই পৃথিবীকে বিভিন্ন জাতি নিয়ে তৈরি একটি বৃহৎ পরিবার হিসেবে ভাবতে শুরু করবে। এবং কিছু সংশয় থাকলেও এ-ও আশা করি যে, চিঠিগুলি লেখার সময় যে আনন্দ আমি পেয়েছি এগুলি পড়ে তারাও কিছুটা সেই আনন্দ পাবে।’

১৯২৯ সালেই বই হয়ে প্রকাশ পেল মেয়ে ইন্দুকে লেখা জওহরের চিঠিগুলি। পরে ১৯৭৩ সালে ইন্দিরা এই বইয়েরই ভূমিকায় লিখলেন অনেক কথা। তত দিনে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ইন্দিরাও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি লিখলেন, ‘বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে নিজেদের মা-বাবাকে দেবতার মতো মনে করে। আমার মা-বাবা যেমন আমার পরম বন্ধু ছিলেন সে রকম কিন্তু সকলের মা-বাবা হন না। সব কিছুতেই আমার বাবার আগ্রহ ছিল। নিজের কৌতূহলকে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হতেন। অনেক রকম প্রশ্ন আমার মনে জাগত। আর এই প্রশ্নগুলির জন্যেই তিনি আমাকে পৃথিবী সম্পর্কে নানা কথা বলতে পেরেছিলেন— যে সব মানুষ এখানে বাস করত তাদের কথা, তাদের আদর্শ ও কাজকর্ম এবং সাহিত্য ও শিল্পকলার মধ্য দিয়ে কী ভাবে তারা অন্যদের মুগ্ধ করেছিল সেই সব কথা। সবচেয়ে বড় কথা হল, তিনি আমাদের এই বিস্ময়কর দেশের কথা বলতে এবং লিখতে ভালবাসতেন— দেশের অতীতকালের কীর্তি ও ঐশ্বর্ষের কথা এবং পরে কী ভাবে দেশের পতন হল এবং দেশ পরাধীন হল। একটি চিন্তাই তাঁর মনে সব সময় জেগে থাকত— তা হল স্বাধীনতা। শুধু ভারতের নয়, পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে স্বাধীনতা।’

নৈনিতালের জেলে তখন বন্দি জওহর। সেই সময় এই সব চিঠি লেখার কথা তাঁর মনে আসে। তখন হাতে সময়ও ছিল। কিন্তু জেল থেকে বেশি চিঠিপত্র লেখা যায় না এবং জেলে প্রয়োজনীয় বইপত্রও পাওয়া যায় না। তবে তার চেয়েও বড় কথা তখন ভারতে প্রতিদিন যে সব ঘটনা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছিল, সে সবই তাঁর মন জুড়ে ছিল। তখন আর একেবারে অতীতের কথা ভাবার মতো সময় ছিল না। জেল থেকে তিনি ছাড়া পেলেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে আবার সেখানে ফিরে এলেন। কয়েক মাস কাটল। ২৬শে জানুয়ারি তাঁকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জওহর নিজে মেয়ে ইন্দুকে লেখা চিঠির ভূমিকায় লিখেছেন, ‘পারিবারিক নানা বিপদে-আপদে এবং দেশের কাজের আবর্তে জড়িয়ে পড়ে আমাকে নানা জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয়। এ দিকে ইন্দিরা বড় হচ্ছে এবং তার ক্রমবর্ধমান জ্ঞানলাভের সঙ্গে হয়তো বেশিদিন আর তাল রাখতে পারব না।’

ইন্দিরার জীবনে এই চিঠি প্রবল প্রভাব ফেলেছিল। মেয়ে ইন্দুকে লেখা বাবার চিঠি সম্পর্কে মেয়ে লিখছেন, ‘আমার বয়স যখন আট কিংবা নয় তখন এই বইয়ের চিঠিগুলি লেখা হয়েছিল। পৃথিবীর প্রথম যুগের কথা এবং কীভাবে মানুষ নিজের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠল সে কথা এই চিঠিগুলিতে বলা হয়েছে। এ চিঠিগুলি শুধু একবার পড়েই ফেলে দেবার মতো নয়, এগুলি পড়ে আমি নতুন চোখে সব কিছু দেখতে শিখি। এগুলি মানুষের সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা করতে এবং চারপাশের জগৎ সম্বন্ধে আমার মনে আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল। এসব চিঠি পড়েই প্রকৃতিকে একটি বই হিসেবে দেখতে শিখেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তন্ময় হয়ে আমি পাথর, গাছপালা, পোকামাকড়দের জীবন এবং রাত্রে আকাশের নক্ষত্র লক্ষ্য করে দেখেছি।’


প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on November 20, 2021 2:29 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন