বিজ্ঞাপন

‘ভয়ের ঠেলায় শিলং ঘোরার আনন্দটুকু একেবারে চৌপাট’

বিজ্ঞাপন

ভয়ের শিলং

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মৌমিতা পাল
(শিলং ঘুরতে যাওয়া পর্যটক)


ঘুরতে গিয়ে এমন ভয় কোথাও পাইনি। বলা ভাল, ভয়ের ঠেলায় ঘোরার আনন্দটুকু একেবারে চৌপাট হয়ে গিয়েছে। আজ ফিরলাম। কিন্তু, আতঙ্কটা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। চোখ বুজলেই দৃশ্যগুলো এখনও ভাসছে। আটকাতে পারছি না।

গত রবিবার কয়েকটা পরিবার একসঙ্গে হাওড়া থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস ধরেছিলাম। গন্তব্য গুয়াহাটি। বুধবারই শিলং পৌঁছেছিলাম। বৃহস্পতিবার চেরাপুঞ্জি ঘুরে ফের শিলং। তখনও বুঝিনি এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে!

হোটেলে ঢোকার পর থেকেই কেমন একটা দমবন্ধ করা অবস্থা।  মুহুর্মুহু বোমা পড়ছে। শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ। হোটেলের জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আধাসেনার জওয়ানরা টহলদারি দিচ্ছেন। আর আমরা, হোটেলে বন্দি হয়ে বসে রয়েছি। এত জায়গায় ঘুতে গিয়েছি, এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও কোনও দিনই হয়নি।

বারে বারেই মনে হচ্ছে কবে আবার বারাসতের বাড়িতে ফিরে আসব! সোমবার গুয়াহাটি পৌঁছে পর দিন গিয়েছিলাম কাজিরাঙা। কাজিরাঙা থেকে শিলং পৌঁছেছিলাম। বুধবার দারুণ কেটেছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চেরাপুঞ্জি থেকে যখন হোটেলে ফিরছি তখনও কিছু বুঝিনি। হোটেলে ঢুকে শুনলাম স্থানীয় এক যুবককে নাকি পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। পরে জেনেছিলাম ওই খবরটি ঠিক ছিল না। কিন্তু, তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তার জেরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল।

ওই দিন সন্ধ্যায় জানলার ফাঁক দিয়েই দেখলাম আগুনের ঝলকানি। পেট্রল বোমা ছোড়া হচ্ছিল। এলাকা ঘিরে ফেলেছে সেনা। হোটেলের ঘরে শুয়ে অনেক রাত পর্যন্ত গণ্ডগোলের শব্দ পেয়েছি। উফস! কী ভয়ানক।

শুক্রবার সকালে মৌসিনরাম গিয়েছিলাম। বিকালে ফিরে আসি। সেদিনই প্রথম টের পেলাম, এই গণ্ডগোল সহজে থামবে না। চার দিক একেবারে থমথমে। গোটা শহর জুড়ে কার্ফু চলছে। শুধু পর্যটকদের বাস যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল। তা-ও হোটেল পর্যন্তও নয়। কেবল টার্মিনাল পর্যন্ত। সেখান থেকে সেনার পাহারায় হোটেল পৌঁছলাম। ঢোকামাত্রই হোটেলের ম্যানেজার বললেন, ‘‘কেউ বাইরে বেরোবেন না। ঘরের আলো নিভিয়ে দিন। কোনও রকমের শব্দ করবেন না।’’ পর দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সেনা জওয়ানরা পাহারা দিয়ে গুয়াহাটির বাসে তুলে দিলেন আমাদের।

যে ভাবে প্রাণ নিয়ে ভয়কে সঙ্গী করে ফিরেছি, তাতে আর শিলং কখনও যাব কি না ভাবছি। আর ভাল লাগার রেশটাই তো কেটে চৌপাট হয়ে গিয়েছে।

উত্তপ্ত শিলং থেকে এখন বেরতে পারলে বাঁচেন পর্যটকেরা

0
0

This post was last modified on June 5, 2018 12:35 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন