বিজ্ঞাপন

দেশের সেরা ফুটবল লিগে ভারতসেরা ম্যাচ খেলতে তৈরি দুই পক্ষ

দেশের সেরা ফুটবল লিগে ভারতসেরা ম্যাচ আসন্ন। রাত পোহালেই সেই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে শুক্রবার সকাল থেকে। মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগান ও এসসি ইস্টবেঙ্গল।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দেশের সেরা ফুটবল লিগে ভারতসেরা ম্যাচ আসন্ন। রাত পোহালেই সেই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে শুক্রবার সকাল থেকে। সন্ধ্যায় ফতোরদা স্টেডিয়ামে যখন মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগান ও এসসি ইস্টবেঙ্গল, তখন দেশের সেরা ফুটবল শো-টি দেখতে পাবে দুনিয়া। ভারতীয় ফুটবলে চিরকালীন এক প্রতিদ্বন্দিতার আনন্দ উপভোগ করবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আপামর বাঙালি তথা ভারতবাসী, যার পোশাকি নাম কলকাতা ডার্বি।

সে বার আর এ বার

হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় কলকাতা ডার্বি যে প্রথমবারের চেয়েও চিত্তাকর্ষক হতে চলেছে, সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই একমত। ২৭ নভেম্বর প্রথম লেগের ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছিল এটিকে মোহনবাগান। সেটা ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের সর্বপ্রথম হিরো আইএসএল ম্যাচ। মাত্র দু’সপ্তাহের প্রস্তুতির পরে পুরোপুরি তৈরি না হয়েই নেমেছিল লাল-হলুদ বাহিনী। উল্টোদিকে ছিল গত মরশুমে চ্যাম্পিয়ন দলের বেশির ভাগ ফুটবলারদের নিয়ে তৈরি সবুজ-মেরুন ব্রিগেড, যে দল গড়ার দায়িত্বে ছিলেন হিরো আইএসএলে সফলতম কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।

৪৯ মিনিটে রয় কৃষ্ণা ও ৮৫ মিনিটে মনবীর সিংয়ের দুর্দান্ত দুই গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারায় সবুজ-মেরুন শিবির। প্রথম ম্যাচে শুরুর দিকে যে সমস্যা হয়েছিল হাবাসের দলের, সাত-আট মাস পরে ম্যাচে নেমে সেই সমস্যায় সে দিন পড়তে হয় এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদেরও। কিন্তু সেই জড়তা কাটিয়ে উঠে যে ভাবে জয়ে ফিরতে পেরেছিল এটিকে মোহনবাগান, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দী ক্লাব সে দিন তা করতে পারেনি। বিপক্ষের কড়া ডিফেন্সের দুর্ভেদ্য দেওয়াল ভেঙে গোল করার সে রকম সুযোগ তৈরিই করতে পারেনি তারা। ৫৮ শতাংশ বল পজেশন থাকলেও ম্যাচের দখল নিতে পারেনি তারা।

কিন্তু এখন সেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ডার্বির পরে তাদের লড়াকু মানসিকতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে বারবার। তার পরে আরও যে ১৬টি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তাদের, তার মধ্যে তারা হেরেছে পাঁচটিতে। বাকি এগারোটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জয় পেয়েছে তারা, ড্র করেছে আটবার। এর মধ্যে এমন একাধিক ম্যাচও ছিল, যাতে জয়ের মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা। ফুটবলপ্রেমীরা তাদের লড়াকু পারফরম্যান্স দেখে প্রশংসা না করে পারেননি। তিনটি ম্যাচে দশজনে খেলেও হারেনি লাল-হলুদ জার্সিধারীরা। একটা সময়ে টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। এই সাতটি ম্যাচের মধ্যে দু’টি ম্যাচে জয় পায় তারা।

অন্য লাল-হলুদ ব্রিগেড

জানুয়ারির দলবদলে একাধিক ভাল ফুটবলার দলে নিয়ে আসে লাল-হলুদ শিবির, যাঁরা আসার ফলে দলটার চেহারা অনেক বদলেছে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ব্রাইট ইনোবাখারে, ডিফেন্ডার রাজু গায়কোয়াড়, অঙ্কিত মুখার্জির পর দ্বিতীয় দফায় আসেন গোলকিপার সুব্রত পাল, ডিফেন্ডার সার্থক গলুই ও মিডফিল্ডার সৌরভ দাস। এঁরা আসায় দলের রক্ষণ ও মাঝমাঠ অনেক শক্তিশালী হয়েছে। পিলকিংটন, জাক মাঘোমার সঙ্গে ব্রাইট আক্রমণেও শক্তি বাড়িয়েছেন। ইদানীং তিন বিদেশিকেই আক্রমণে রেখে ও ম্যাটি স্টাইনমানকে মাঝমাঠে রেখে স্মরণীয় ফুটবল খেলছে লাল-হলুদ বাহিনী।

জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে দলে ছ-ছ’টি পরিবর্তন করে একেবারে অন্য এসসি ইস্টবেঙ্গলকে খুঁজে পাওয়া যায়। রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে সেই ম্যাচে ২-১ জয় পায় তারা। শুরুতেই ম্যাটি স্টাইনমানের গোলে এগিয়ে যায় দল। ৬৮ মিনিটে স্টাইনমানের অ্যাসিস্টেই ব্যবধান বাড়ান পিলকিংটন। ওই ম্যাচে সারাক্ষণই লাল-হলুদ বাহিনীর দাপট ছিল অব্যহত। লিগ টেবলে ছয় নম্বরে থাকা জামশেদপুর এফসি-কে একবারের জন্যও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি তারা। শুক্রবারও এমন ফুটবল খেলতে পারলে এটিকে মোহনবাগানের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সে চিড় ধরতে পারে।

সরাসরি দেখুন:

সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে

টিভিতেস্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক

স্ট্রিমিংডিজনি প্লাস হটস্টার ও জিও টিভি

ধারাবাহিকতাই শক্তি হাবাসদের

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চিরপ্রতিদ্বন্দী ক্লাবের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। মরশুমের শুরু থেকে তারা ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে আসছে এবং লিগ টেবলের সেরা চারের বাইরে একবারও বেরোয়নি তারা। ১৭টি ম্যাচের মধ্যে এগারোটিতেই জিতেছে সবুজ-মেরুন শিবির। গত চারটি ম্যাচে টানা জয় পেয়ে আসছে তারা। এই চার ম্যাচে দশটা গোল করেছে তারা, খেয়েছে মাত্র তিনটি। সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার দিক থেকেও তারা এক নম্বরে। এই ১৭ ম্যাচে মাত্র ১০ গোল খেয়েছে তারা। দিয়েছে ২৩ গোল।

গোল দেওয়া ও খাওয়া দু’দিক থেকেই যথেষ্ট ভাল জায়গায় থাকা এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে অবশ্যই বেগ পেতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে। তবে কৌশলের লড়াইয়ে যে হাবাসকে কাত করা যায়, তা যে ভাবে প্রমাণ করেছেন মুম্বই সিটি এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও জামশেদপুর এফসি-র কোচেরা, সে ভাবে এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ রবি ফাউলার প্রমাণ করতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার।

নির্বাসনে থাকা ফাউলার মাঠে থাকতে না পারলেও দলের প্রস্তুতিতে তো পুরোপুরি জড়িয়ে রয়েছেন। গত ডার্বি হারার পরে ফাউলার বলেছিলেন, “দু-আড়াই সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের ছেলেরা খুব একটা খারাপ তৈরি হয়নি তাতে। আমি অজুহাত খাড়া করতে চাই না। যত ম্যাচ খেলব আমরা, ছেলেরা আরও ধারালো হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমাদের যে জায়গাগুলোতে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো ঠিক করে নিতে হবে পরের ম্যাচগুলোতে”। এত দিনে সেই ঘাটতি পূরণ করে এটিকে মোহনবাগানকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অবস্থায় তারা আসতে পেরেছে কি না, সেটাই দেখার।

গত পাঁচ ম্যাচের মধ্যে একটি জয় ও দু’টি ড্র করা এসসি ইস্টবেঙ্গল যদি তাদের সেরা ফর্মে থাকে, তা হলে শুক্রবার ফতোরদার ম্যাচটা যে লিগ টেবলে থাকা এক নম্বরের সঙ্গে ন’নম্বরের, সেটা বুঝতেও অসুবিধা হতে পারে অনেকের।  কারণ, গত কয়েক সপ্তাহে লড়াকু দল হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে ফাউলারের দল। কিন্তু লড়াই করা সত্ত্বেও কোনও বারই ভাগ্য তাদের সহায় হচ্ছে না বলে সাফল্য হয়ে উঠছে না বলে দাবি ফাউলার ও তাঁর সহকারীদের।

বাঙালির দাপট!

তবে এ বারের কলকাতা ডার্বিতে বাংলার ফুটবলারদের আধিপত্য দেখে এ রাজ্যের ফুটবলপ্রেমীরা তৃপ্তি পেতে পারেন। গত কয়েক বছরে ডার্বিতে বিদেশি বা ভিনরাজ্যের ফুটবলারদের দাপট বরাবরই বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, বাঙালিরা ফুটবলাররা কি তা ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছেন?

এ বার কলকাতা ডার্বিতে সম্ভবত সেই দুশ্চিন্তা আর থাকবে না তাঁদের মনে। হিরো আইএসএলে প্রবেশের পর কলকাতার দুই প্রধানে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই তাঁদের ফুটবলের মানও এখন অনেক ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বার দুই দলেই ন’জন করে বাঙালি ফুটবলার রয়েছেন (নীচে দুই দলের স্কোয়াড দেখুন)। শুধু তাই নয়, দুই দলেরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে বাংলার স্থানীয় ছেলেদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।

এগারোজনের দলে পাঁচজন বিদেশি। বাকি ছয় ভারতীয় ফুটবলারের মধ্যে এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম এগারোয় পাঁচজনই বাংলার ছেলে। অন্যদিকে, এটিকে মোহনবাগানে তিন বা চারজন বেশির ভাগ ম্যাচেই প্রথম এগারোয় থাকেন। সবুজ মেরুন শিবিরের অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, প্রণয় হালদাররা যেমন নিয়মিত খেলোয়াড়। তেমনই লাল-হলুদ বাহিনীর দেবজিৎ মজুমদার, সুব্রত পাল, অঙ্কিত মুখার্জি, সার্থক গলুই, নারায়ণ দাস, সৌরভ দাস, মহম্মদ রফিকরা এখন নিয়মিত মাঠে নামছেন ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনও করছেন।

অনেক বছর পরে দুই প্রধানে বাঙালিদের এই দাপট দেখে বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ হওয়ারই কথা। তবে তার চেয়েও বেশি আনন্দ তাঁরা পাবেন, যদি শুক্রবার দুই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের লড়াই জমে ওঠে এবং উতেতজনায় ঠাসা ম্যাচে যোগ্য দলই শেষ হাসি হাসে। কলকাতা ডার্বির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ভর্তি গ্যালারি। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উপচে পড়া দর্শকের ভিড় ডার্বির অতি পরিচিত এক দৃশ্য। করোনার আবহে এ বার সেই সেই চেনা ছবি পাওয়া না গেলেও দুই চিরশত্রুর ফুটবল-যুদ্ধে যে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠবে, এমনটা আশা করা যেতেই পারে।    

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on February 19, 2021 1:33 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন