বিজ্ঞাপন

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচ থেকেও লাল-হলুদের ঘরে এল হার। প্রথম এগারোয় আটটি পরিবর্তন সঙ্গে নতুন কম্বিনেশনেও শেষরক্ষা হল না।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচ থেকেও লাল-হলুদের ঘরে এল হার। প্রথম এগারোয় আটটি পরিবর্তন করে সম্পুর্ণ নতুন কম্বিনেশনে খেলে ফের হারল এসসি ইস্টবেঙ্গল। চলতি হিরো আইএসলের এই নিয়ে আট নম্বর হার হল তাদের। এ দিন কলকাতার দলকে ২-১ হারিয়ে সেরা চারের মধ্যে ঢুকে পড়ল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। ১৯ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন হায়দরাবাদ এফসি-কে পিছনে ফেলে চার নম্বরে উঠলেও এই জায়গাটা ধরে রাখতে গেলে তাদের শেষ ম্যাচে (কেরালা ব্লাস্টার্স) জিততেই হবে।

মঙ্গলবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে মূলত মাঝমাঠনির্ভর ও নিষ্ফলা ফুটবল হওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভিপি সুহেরের গোলে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট। ৫৫ মিনিটের মাথায় লাল-হলুদ ডিফেন্ডার সার্থক গলুইয়ের আকস্মিক আত্মঘাতী গোলে সেই ব্যবধান বেড়ে যায়। সেই সার্থকই ৮৭ মিনিটের মাথায় অসাধারণ হেডে গোল করে ব্যবধান কমালেও তার পরে আর বিপক্ষের ডিফেন্সে চিড় ধরাতে পারেনি তাঁর দল। ৭১ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার রাজু গায়কোয়াড় ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ফলে লাল-হলুদ রক্ষণ আরও কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের দল।

এ দিন আমূল বদলে দল নামায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। হার-জিতের কথা না ভেবেই দলের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে এক ঝাঁক খেলোয়াড়কে এ দিন মাঠে নামানো হয় তাঁদের পরখ করার জন্য। যেমন গোলকিপার মিরশাদ মিচু, মহম্মদ রফিক, তোম্বা সিং, অজয় ছেত্রী, বিকাশ জায়রু, অ্যারন হলোওয়ে ও জেজে। মোট আটজন ভারতীয় ফুটবলারে দল নামায় তারা।

জাক মাঘোমা ও ড্যানিয়েল ফক্স চারটি হলুদ কার্ড দেখায় এ দিন এমনিতেই খেলতে পারেননি। তবে অ্যান্থনি পিলকিংটন ও ব্রাইট ইনোবাখারেকেও এ দিন পুরোপুরি বিশ্রাম দেওয়া হয়। ডাগ আউটেও দেখা যায়নি তাদের। তিনজন বিদেশিকে মাঠে দেখা যায় এ দিন। ডাগ আউটে ছিলেন না কোনও বিদেশি। দেবজিৎ মজুমদার, নারায়ণ দাস, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়রা অবশ্য পরিবর্তদের তালিকাতেই ছিলেন।

এই ম্যাচে জয়টা যতটা না জরুরি ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের, তার চেয়ে অনেকগুন বেশি জরুরি ছিল নর্থইস্টের কাছে। কারণ, এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেয়ে সেরা চারে ওঠার আশা জিইয়ে রাখতে পারল ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের দল, যিনি কি না লাল-হলুদ ক্লাবেরও প্রাক্তন কোচ। তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে তারা। দেশর্ন ব্রাউন ও লুই মাচাডোর সাঁড়াশি আক্রমণে লাল-হলুদ ডিফেন্স চাপে ছিল ঠিকই, কিন্তু সেই চাপ তারা সামলে নেয়। লিগের ১৯ তম ম্যাচে সম্পুর্ণ নতুন একটি কম্বিনেশন নিয়ে এ দিন মাঠে নামা লাল-হলুদ ব্রিগেড মাঝে মাঝে পাল্টা আক্রমণেও ওঠে, কিন্তু ফিনিশিংয়ের যথেষ্ট অভাব দেখা যায়।

অন্যদিকে, ব্রাউনকে তৎপর ভূমিকায় দেখা গেলেও তাঁর সতীর্থ লুই মাচাডোকে কিন্তু তাঁর চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। সক্রিয় লাল-হলুদ ডিফেন্সের জন্যও তাঁরা বারবার বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে প্রশংসা করতে হবে প্রথম হিরো আইএসএল ম্যাচে নামা গোলকিপার মিরশাদের। তিনি যথেষ্ট সতর্ক ও সাবধান ছিলেন এ দিন। প্রথম ম্যাচ বলে খুব একটা চাপে ছিলেন বলে মনে হয়নি মিরশাদকে দেখে। একবার ব্রাউনের গোলের সামনে থেকে নেওয়া শট ও আর একবার ভিপি সুহেরের দূরপাল্লার শট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই সেভ করেন তিনি।

প্রথমার্ধে বল মূলত মাঝমাঠে ঘোরাফেরা করে ও দুই দলেরই রক্ষণের তৎপরতায় আক্রমণকারীরা কেউই সে ভাবে সুবিধা পাননি। ৩৫ মিনিটের মাথায় অজয় ছেত্রীর কর্নার থেকে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার একটা ভাল সুযোগ পেয়ে যান জেজে। কিন্তু তিনি গোলে বল রাখতে পারেননি। তার পরে আর কোনও দলই গোলের সহজ সুযোগ তৈরি করতে পারেননি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বিপক্ষের রক্ষণের দেওয়াল ভেঙে গোল করে দেয় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। লাল-হলুদ ডিফেন্সের ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেন ভিপি সুহের। ইমরান খান লাল-হলুদ বক্সের মধ্যে বল পাঠালে অজয় ছেত্রীর পায়ে লেগে তা সুহেরের কাছে যায় ও তিনি প্রথম সুযোগেই গোলে শট নেন। সুহেরের সামনে সার্থক থাকলেও তাঁকে বাধা দিতে পারেননি। মিরশাদের কিছু করার ছিল না।

এর পাঁচ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান দেশর্ন ব্রাউন। মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে তিন ডিফেন্ডারকে পিছনে ফেলে একা বিপক্ষের বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন। কিন্তু বক্সের মধ্যে তাঁর শট আটকে দেন মিরশাদ।

এ যাত্রায় দলকে মিরশাদ বাঁচিয়ে দিলেও ৫৫ মিনিটের মাথায় সার্থক গলুই যেটা করলেন, তা দেখার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। ডান দিকের উইং দিয়ে ওঠা নিম দোরজি এসসি ইস্টবেঙ্গল বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়ালে, তা ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই বল ঠেলে দেন সার্থক। এমন দুঃস্বপ্নের পারফরম্যান্স এ বারের লিগে সার্থকের কাছ থেকে আর কখনও দেখা যায়নি বোধহয়।

৬১ মিনিটের মাথায় অজয় ছেত্রীর বদলে সুরচন্দ্র সিংকে নামান সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট। এর পরেই তোম্বাকে বসিয়ে ইউমনাম সিংকেও নামানো হয়। তবে তাতে যে খুব একটা লাভ হয়েছে, তা বলা যায় না। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের মোটিভেশনের স্তর একেবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল।

তাদের সমস্যা আরও বাড়ে, যখন ৭১ মিনিটের মাথায় ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যেতে হয় রাজু গায়কোয়াড়কে। গোলমুখী ব্রাউনকে টেনে মাঠে ফেলে দেওয়ায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রাজু। বাধা না দিলে হয়তো সেই সুযোগে গোল করে দিতেন ব্রাউন। তার আগে থ্রো ইন করতে গিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্ক করে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি।

৭৭ মিনিটে ফরোয়ার্ড জেজের জায়গায় ডিফেন্ডার অঙ্কিত মুখার্জি নামেন। বিকাশের জায়গায় নামেন নারায়ণ দাস। অভিজ্ঞ ও নিয়মিত খেলোয়াড়রা মাঠে এসে যাওয়ার পরে ক্রমশ চেহারা পাল্টাতে থাকে লাল-হলুদ বাহিনীর। এই সময়ে ৮৭ মিনিটের মাথায় অসাধারণ হেডে গোল করে প্রায়শ্চিত্ত করেন সার্থক গলুই।

কর্নার থেকে সবাইকে ছাপিয়ে লাফিয়ে উঠে তিনি হেডে ফ্লিক করে দেন গোলের দিকে। নর্থইস্টের বাঙালি গোলকিপার শুভাশিস রায় গোল লাইন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় সেই বল আটকাতে পারেননি। এ দিন হিরো আইএসএলে ৫০তম ম্যাচ খেলেন শুভাশিস। কিন্তু এমন একটা স্মরণীয় ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে না পারার আক্ষেপ হয়তো থেকে যাবে তাঁর। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এ বারের হিরো আইএসএলে এই প্রথম লাল-হলুদ বাহিনীর কোনও ভারতীয় ফুটবলার গোল করলেন।

শেষ দশ মিনিটে আক্রমণের ঝড় তোলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। কিন্তু ততক্ষণে রক্ষণে কার্যত দেওয়াল তুলে দেয় নর্থইস্ট ইউনাইটেড।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলমিরশাদ মিচু (গোল), স্কট নেভিল, রাজু গায়কোয়াড়, সার্থক গলুই, ম্যাটি স্টাইনমান, মহম্মদ রফিক (ওয়াহেংবাম লুয়াং), তোম্বা সিং (ইউমনাম সিং), অজয় ছেত্রী (সুরচন্দ্র সিং), বিকাশ জায়রু (নারায়ণ দাস), অ্যারন হলোওয়ে, জেজে লালপেখলুয়া (অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়)

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েব সাইট)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on February 24, 2021 2:57 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন