বিজ্ঞাপন

প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় ফুটবলে থেকে যাবে তাঁর ভোকাল টনিক

প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় । শুক্রবার দুপুর ২.০৮-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবাদপ্রতীম এই ফুটবলারও কোচ। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন নার্ভের সমস্যায়। হাত কাঁপত সারাক্ষণ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় । শুক্রবার দুপুর ২.০৮-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবাদপ্রতীম এই ফুটবলারও কোচ। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন নার্ভের সমস্যায়। হাত কাঁপত সারাক্ষণ। তা নিয়েই কখনও এই মাঠ তো কখনও ওই মাঠ সঙ্গে ফুটবলের নানা অনুষ্ঠানে ডাক পড়লেই ছুটতেন ফুটবলের টানে। যতদিন পেরেছেন গিয়েছেন। কিন্তু থেমে গেল উইংয়ের দৌঁড়। ২ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বাইপাসের ধারের হাসপাতালে। সেখানেই ছিলেন শেষ পর্যন্ত। মাঝে সুস্থ হয়ে ওঠার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন প্রতিবারের মতো। এক চিলতে আশাও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হ‌ল না। ভেন্টিলেশনেই মৃত্যু হল তাঁর।

হাসপাতাল থেকে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে। সেখান থেকে সরাসরি কেওরাতলা মহাশ্বশানে। কোনও ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেই জানা গিয়েছে।

ভারতীয় ফুটবলে তাঁর হাত ধরে তৈরি হয়েছে নানা কীর্তি যা লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। প্রয়াণের খবরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোকপ্রকাশ করেছেন। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল ছেত্রীরা। রয়েছে টলিউডের পরিচিত মুখেরাও। এমন‌ই ছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়।

(এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন)

পিকে যতটা না ছিলেন‌ ফুটবলার পিকে তার থেকে অনেক বেশি ছিলেন কোচ পিকে। তাঁর কোচিংয়ে ভারতীয় ফুটবল পেয়েছে একাধিক রত্ন।

খেলোয়াড় জীবন

যুব ফুটবলে তাঁর শুরু ১৯৫১তে বিহারে। এর পর পেশাদার সিনিয়র ফুটবল খেলতে চলে আসেন কলকাতায়। প্রথমে এরিয়ান এবং পরে ইস্টার্ন রেল। ১৯৫৪-তে এক বছর এরিয়ানে খেলার পর ১৯৫৫তে চলে যান ইস্টার্ন রেলে। সেখানেই খেলেন ১৯৬৭ পর্যন্ত।

তিনি দেশের জার্সিতে ৮৪ ম্যাচে ৬৫টি গোল করেছিলেন।

১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে রাইট উইংয়ে খেলেছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ঢাকায় কোয়াড্র্যাঙ্গুলার টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়। এর পর থেকে তিনি দেশের হয়ে তিনটি এশিয়ান গেমসে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬) খেলেন। মেলবোর্ন সামার অলিম্পিক (১৯৫৬)-এ ভারতীয় দলে ছিলেন তিনি।

১৯৬০-এর সামার অলিম্পিকে রোমে দেশের অধিনায়কত্বও করেন তিনি। যেখানে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিল তাঁর গোল। মারডেকা কাপে ভারতের হয়ে তিনবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। যেখানে দু’বার রুপো ও একবার ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত।

ক্লাব কোচিং

কোচিং শুরু বাটা স্পোর্ট ক্লাব থেকে (১৯৬৯)। এর পর ১৯৭২-৭৫ ইস্টবেঙ্গলে। সেবার প্রথম বছরই ক্লাবকে পাঁচটি ট্রফি এনে দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিল কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, বলদোলোই ট্রফি। সেবার ইস্টবেঙ্গল কোনও গোল হজম করেনি। ৭৩-এ আবারও পাঁচটি ট্রফি । তার মধ্যে কলকাকা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডিসিএম, রোভার্স কাপ, বরদোলুই ট্রফি। সে বার পিয়ং ইয়ং সিটিকে হারিয়ে শিল্ড জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ডকরোড্যাংকে হারিয়ে ডিসিএম জয় যে দলে ছিলেন ন’জন বিশ্বকাপার। ৭৪ এবং ৭৫-এ লিগ, শিল্ড জয়। এক নাগারে ছ’বছর লিগ জয়। শিল্ড ফাইনালে ৫-০ গোলে মোহনবাগানকে হারানোও রয়েছে ঝুলিতে।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

এর পর মোহনবাগানের দায়িত্ব তুলে নেন কাঁধে। মোহনবাগানের কোচিং করান ১৯৭৬-৭৯। ৭৬-এ ছ’বছর পর লিগ জয় সঙ্গে আইএফএ শিল্ড, রোভার্স কাপ, বরদোলুই ট্রফি। ৭৭-এ শিল্ড, ডুরান্ড, রোভার্স, বরদোলুই। ৭৮-এ লিগ, শিল্ড, ফেডারেশন কাপ (যুগ্মভাবে)। ৭৯-তে লিগ, শিল্ড, ডুরান্ড।

৮০-তে আবার ইস্টবেঙ্গলে ফেরা যখন দলটা একদম ভেঙে গিয়েছিল। তিনি তুলে আনলেন মজিদ, জামশিদকে। সেবার ভারতের কোনও ক্লাবের কাছে হারেনি ইস্টবেঙ্গল।

৮৩তে ইস্টবেঙ্গল শিল্ড জেতে যুগ্মভাবে। ৮৪-তে আবার মোহনবাগানে গিয়ে মোহনবাগানকে লিগ এবং ডুরান্ড এনে দেন। ৮৫-তে আবার  ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে ফেডারেশন কাপ জয়। ৮৮-তে ইস্টবেঙ্গলের কলকাতা লিগ জয়, ৮৯-এ লিগও ডুরান্ড জয়। ৯০-এ মোহনবাগানকে লিগ এনে দেন।

৯৬-৯৭-এ ইস্টবেঙ্গলের টিডি করা হয়ে তাঁকে। ৯৭-এ শিল্ড ছাড়া আর কিছু পায়নি ইস্টবেঙ্গল। ৯৮-এ চলে যান আবার মোহনবাগানে। শিল্ড জেতে মোহনবাগান।

ভারতীয় দল

ভারতীয় দলের সাফল্য বলতে তাঁর হাত ধরে দুটো। ১৯৭০-এ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জেতে ভারত। এর পর ১৯৮৫তে সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।

তাঁর সেরা ছাত্ররা

গৌতম সরকার, মহম্মদ আকবর, সুভাষ ভৌমিক (ঘুরে দাঁড়ান পিকের কোচিংয়ে), রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বোস, সমর ভট্টাচার্য, কল্যান চৌবে, অনিত ঘোষ, শঙ্করলাল চক্রবর্তী, লোলেন্দ্র সিং, রেনেডি সিং, দীপেন্দু বিশ্বাস।

0
0

This post was last modified on March 24, 2020 7:09 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন