বিজ্ঞাপন

Train Station 5: সবুজ ‘দুন’ থেকে হাতছানি দেয় মুসৌরি পাহাড়

ওই যে বলেছিলাম, পাহাড়মুখি রেল স্টেশনের মাদকতাই আলাদা। অদ্ভুতভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে আমাকে। জানি না আর কারও এমন অনুভূতি হয় কিনা রেল স্টেশন নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: এই স্টেশনে নামলে দূরের মুসৌরি পাহাড়টা হাতছানি দিয়ে ডাকে। মুসৌরিকে ‘ঘিঞ্জি’ আখ্যা দিয়ে অনেকেই মুখ ব্যাকান। কিন্তু এই পাহাড়ি শহরের যে মাদকতা রয়েছে তা আর কোথাও নেই। সত্যি ভিড়ে থিক থিক করা মুসৌরি মলে কখন যে একা হয়ে যাবেন টেরই পাবেন না। রেলিংয়ের ধার ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখ আটকে যাবে দূরের দেহরাদুন ভ্যালিতে। রাতের অন্ধকার নামতেই যখন দুন ভ্যালির আলোগুলো জ্বলে উঠবে তখন যে মায়াবি পরিবেশটা তৈরি হবে সেটা আর কখনও কোথাও পাওয়া যাবে না। মুসৌরির সব থেকে আকর্ষন এটাই। প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন যে মুগ্ধতা কাজ করেছিল বহু বছর পর সেই একই মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়েছি। ঠিক একই অনুভূতি দেহরাদুন স্টেশনকে ঘিরে।

ওই যে বলেছিলাম, পাহাড়মুখি রেল স্টেশনের মাদকতাই আলাদা। অদ্ভুতভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে আমাকে। জানি না আর কারও এমন অনুভূতি হয় কিনা রেল স্টেশন নিয়ে। স্মৃতি যদি খুব ধোকা না দেয় তাহলে প্রথমবার দেহরাদুনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২০০৩ সাল হবে। বাবা, মা, বোন, আর দুই বন্ধুর সঙ্গে আমরা সেবার পাড়ি দিয়েছিলাম মুসৌরির উদ্দেশে। সেটাই প্রথম দেহরাদুন স্টেশনকে দেখা সঙ্গে মুসৌরির প্রেমে পড়াও। মনে আছে সে বার একটি বিশেষ কারণে বেশ অনেকটা সময় দেহরাদুন স্টেশনে থাকতে হয়েছিল।

কলকাতা থেকে সকাল সকালই দেহরাদুন স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিল দুন এক্সপ্রেস। মুসৌরিতে আমাদের কোনও হোটেল আগাম বুকিং করা ছিল না। ট্রেনেই এক রেল কর্মীর সঙ্গে আলাপ হওয়ায় তিনি জানান, রেলের হলিডে হোম কম টাকায় পাওয়া যায়। কারণ মুসৌরিতে হোটেলের ভাড়া অনেক বেশি। আমার বাবাও রেলে চাকরী করতেন। জানা গেল দেহরাদুন স্টেশনে নেমেও সেই বুকিং করা সম্ভব। তেমনটাই হয়েছিল। আর সেটা করতে বেশ অনেকটা সময়ই দেহরাদুন স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল বাবাকে। আর সেই সময়টাই আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দিয়েছিল দেহরাদুন স্টেশনের সঙ্গে।

মনে আছে আমরা যখন নেমেছিলাম স্টেশনে তখন বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টি আমার সব সময়ই খুব প্রিয় তাও সেটা যদি হয় পাহাড়ে। দেহরাদুন স্টেশন প্রিয় হওয়ার পিছনে সেই সময় বৃষ্টির একটা বড় ভূমিকা ছিল। ছোট্ট নিচু স্টেশন। সেখান থেকে যেদিকেই চোখ যাবে শুধুই উঁচু পাহাড়। বৃষ্টির কারণে সেই পাহাড় আরও সবুজ হয়ে উঠেছিল। বৃষ্টি গায়ে মেখে প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে আলাপ হয়ে গেল বেশ কয়েকজন সেনা জওয়ানের সঙ্গে। তাঁরা সেই সময় সেখানে কেন ছিলেন তা আজ আর মনে নেই।

ঘণ্টা খানেক কাটাতে হয়েছিল সেবার। পুরো সময়টাই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছিল। এর পর গিয়েছিলাম ২০১৮-তে। সেবার দিল্লিতে ব্রেক জার্নি করে যখন রাতের ট্রেন ধরে দেহরাদুন পৌঁছেছিলাম তখনও ভোরের আলো ফোঁটেনি। রাতের অন্ধকারে অন্য রূপে দেখেছিলাম প্রিয় রেল স্টেশনকে। আলো আধারিতে ধরা দিচ্ছিল মুসৌরি পাহাড়। হালকা একটা ঠান্ডা হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছিল। দেহরাদুন স্টেশন থেকেই ভোরের আলো ফুঁটতে দেখেছিলাম। সে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। মেলাচ্ছিলাম ১৫ বছর আগের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। আজ পর্যন্ত প্রিয় কোনও রেল স্টেশনেরই খুব একটা পরিবর্তন দেখিনি। ভাললাগাগুলোও একই থেকে গিয়েছে, বদলায়নি। ব্যতিক্রম নয় উত্তরাখণ্ডের এই অংশটাও।

সেবার ভোর হতেই গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিয়েছিলাম। এবার অবশ্য মুসৌরি নয়, সরাসরি গিয়েছিলাম ধনৌলটি। অসাধারণ সুন্দর একটা হিল স্টেশন। ধনৌলটি ঘুরে পৌঁছেছিলাম মুসৌরি। অত কাছে গিয়ে প্রিয় হিল স্টেশনে যাব না তা কী হয়? মুসৌরি হয়ে সেবার বাড়ি ফিরেছিলাম। ফেরার পথে ট্রেন ধরেছিলাম দুন স্টেশন থেকে। সেই চিরচেনা দেহরাদুন স্টেশন থেকে সেবার সন্ধে নামতে দেখেছিলাম। মুসৌরি থেকে যে দুন ভ্যালির আলোর খেলা মাতাল করে তোলে সেই দুন ভ্যালি থেকে পাহাড়ের গায়ে একটা একটা করে আলো জ্বলতে দেখেছিলাম। যেন অকাল দিপাবলী পালন হচ্ছে সেখানে।

পাহাড়ি পাকদণ্ডি বেয়ে কখনও উঠে যাচ্ছে গাড়ি, কখনও নামছে। কোথাও আলো স্থির আবার কোথাও তা চলমান। কখন যেন ঝাঁপসা হয়ে গেল সেই আলো। বুঝতে পারলাম, মেঘ নেমেছে পাহাড় থেকে। ভ্যালির বুকে ঘুরে ফিরে যাবে আবার ঘরে। ছুঁয়ে গেল দেহরাদুন স্টেশনকেও। রাতের অন্ধকার গাঢ় হল ক্রমশ। পাহাড়ের আলোর রোশনাইও কমে এল। পাহাড় সব সময় দ্রুত ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়, পাহাড়মুখি রেল স্টেশনও। কিন্তু আমাদের ট্রেন ছিল বেশ রাতে। তাই জেগে ছিল দেহরাদুন স্টেশন। ট্রেন ছাড়ল সঠিক সময়ে। বিদায় জানালাম দুন ভ্যালিকে রেল পথে সচল রাখা ছোট্ট স্টেশনকে। বিদায় জানালাম মুসৌরি পাহাড়কে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

0
0

This post was last modified on April 12, 2023 1:25 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন