বিজ্ঞাপন

Train Station 3: ‘ম্যাজিক্যাল বিউটি’ আর আমার অনুভূতি

পাহাড়মুখী স্টেশন নিয়ে আমার একটা আদিখ্যেতা রয়েছেই। যতটা ভালবাসা পাহাড়ের প্রতি ঠিক ততটাই ভালবাসা সেই স্টেশনটার প্রতি যেখানে নেমে সরক পথ ধরতে হয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: পাহাড়মুখী স্টেশন নিয়ে আমার সব সময়ই একটা আদিখ্যেতা রয়েছে। যতটা ভালবাসা পাহাড়ের প্রতি ঠিক ততটাই ভালবাসা সেই স্টেশনটার প্রতি যেখানে নেমে সরক পথ ধরতে হয় পাহাড়ে ওঠার জন্য। তার সঙ্গে কিছু কিছু স্টেশন হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে মনের মধ্যে। ঠিক যেমন ঝাঁঝা। বিহারের এক প্রত্যন্ত স্টেশন। এখন শুনেছি অনেক উন্নতি করেছে। এরকমই আরও স্টেশন রয়েছে। যেমন আই লিগ দেখতে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে দুরন্ত এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে পড়েছিল রেনিগুন্টা নামে একটি স্টেশনে। আজও সেই স্টেশনের স্মৃতি রয়েছে। তবে আজকে পাহাড়মুখী স্টেশনের কথাই বলব। আমার খুব প্রিয় এই স্টেশনে যখন ট্রেন এসে থামে তখন দু’বাহু বাড়িয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে হিমাচলের পাহাড়। আমার প্রিয় কালকা স্টেশন।

প্রথম কালকা স্টেশনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২০০৮-এ। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তিন বন্ধু মিলে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলাম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। সেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল একদিনেই। হাতে পড়েছিল আরও বেশ কিছু দিন। সঙ্গে সঙ্গেই প্ল্যান করে ফেলেছিলাম শিমলার। ব্যস, রাতারাতি হাওড়া-কালকা মেলের টিকিট কেটে পুরানো দিল্লি স্টেশন থেকে উঠে পড়েছিলাম ট্রেনে। ভোরের আলো ফোটার আগেই কালকা স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল সেই ট্রেন।

সেই আলো আধারিতে প্রথম দেখা হয়েছিল কালকা স্টেশনের সঙ্গে। ছোট্ট স্টেশন। ঝকঝক করছে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা দিক চলে গিয়েছে বাইরের দিকে। যেখান থেকে সরক পথে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। আর একটা দিক চলে গিয়েছে শিমলা গামি টয় ট্রেনের স্টেশনের দিকে। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে পা দিতেই একটা হালকা ঠান্ডা হাওয়া ছুঁয়ে গিয়েছিল। পাহাড়টা তখনও নিকষ কালো। দৌঁড়ে গিয়ে শিমলাগামী ট্রেনের টিকিট কেটে এনেছিল একজন। সেই ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা করতে করতেই ভোরের আলো ফুটেছিল কালকা স্টেশনে।

কালো পাহাড়টা সবুজ হয়ে উঠেছিল। দিনের প্রথম সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছিল ট্রেনের জানলা দিয়ে। ট্রেন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল। পাহাড় আরও সুন্দর হচ্ছিল। কিন্তু মনের কোথাও থমকে গিয়েছিল সেই স্টেশন। ফেরার পথে আর স্টেশনের পথ ধরা হয়নি। তার পর কেটে গিয়েছে কত কত বছর। কালকা স্টেশন মাঝে মাঝেই এসে বলে যেত, ‘‘আর তো এলি না।’’ ২০০৮-এর পর আবার সুযোগ এসে গেল ২০১৯-এ। ১১টা বছর পর।

তখন আমি দিল্লিতে। মা-র অনেকদিন ধরে শিমলা যাওয়ার শখ কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছে না। সেবার প্রায় জোড় করেই প্ল্যান করে ফেললাম। ব্যস, আবার সেই হাওড়া-কালকা মেলে কালকা স্টেশন। সেই অন্ধকার থাকতেই নামিয়ে দিল কালকায়। বিশ্বাস করুন, ১১ বছর আগে ঠিক যেমন অনুভূতি হয়েছিল সেই অনুভূতিটাই যেন আবার ফিরে পেলাম। দৃশ্যগুলোও যেন একটুও বদলায়নি। একই থেকে গিয়েছে। আবার সেই টয় ট্রেন, আবার সেই পাহাড় চড়া কু ঝিক ঝিক করতে করতে। আবার পাহাড় চড়তে চড়তে কালকা স্টেশনকে মনে করা। এবার কিন্তু শিমলা থেকে ফিরেছিলাম এই পথেই। রাতের অন্ধকারে একটার পর একটা টানেল পেড়িয়ে যাওয়ার রোমহর্ষক অনুভূতি। বেশ বেশি রাতেই কালকা স্টেশনে পৌঁছেছিলাম।

আর শেষ যে বার কালকা স্টেশনে গিয়েছিলাম সেটা ২০২০। ঠিক কোভিড শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগের কথা। দোলের সময়টা পাহাড়ে কাটাবো ভেবে দিল্লি থেকে ভোরের শতাব্দি ধরে পৌঁছে গিয়েছিলাম কালকা। সেই চেনা স্টেশন। সেই ভালবাসা, ভাললাগা। আবারও বলছি কিছু বদলায়নি। সেবার শিমলা নয় কালকা স্টেশনের বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম ছোট্ট সুন্দর কসৌলিতে। কালকা থেকে খুব বেশি হলে এক ঘণ্টার পথ। ফিরেও ছিলাম সেই পথেই। আবারও কালকা স্টেশন।

ফেরার পথে কালকা স্টেশন থেকে বিকেলের শতাব্দি ধরেছিলাম। সেই মুহূর্তটা অসাধারণ ছিল। সূর্য অস্ত যাচ্ছিল পাহাড়ের কোলে। কখন যেন সূর্যের সব তেজকে নিভিয়ে দিয়ে বৃষ্টি এসেছিল। আমার মতো বৃষ্টিপ্রেমীর জন্য এটা বাড়তি পাওনা। একদিকে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছিল কালকা স্টেশনের সাদা প্ল্যাটফর্মে। অন্যদিকে গোটা স্টেশনকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল বৃষ্টি। হঠাৎ করে ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসল।আবার দুম করে উধাও হয়ে গেল সেই বৃষ্টি। যখন কালকা থেকে দিল্লির উদ্দেশে ট্রেন ছাড়ল তখনও গাছের পাতা থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। প্ল্যাটফর্মের জমে থাকা জলে ট্রেনের প্রতিবিম্ব ক্রমশ ঘষে যাচ্ছিল। আমার মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরাটা অনেকক্ষণ চলেছিল কালকা স্টেশনকে ধরে রাখার জন্য। কিন্তু ভিডিও না কালকা স্টেশন রয়েছেন আমার মনের ফ্রেমে সেই ২০০৮ থেকে।

Train Station 1: একবার হঠাৎ ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ল ঝাঝায়

Train Station 2: নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশনে ছোটবেলার স্মৃতি

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

+2
0

This post was last modified on April 8, 2023 12:25 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন