বিজ্ঞাপন

নাগারকোটের সূর্যোদয় না দেখলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, শেষ পর্ব

নাগারকোটের সূর্যোদয়-এর কথা ভ্রমণপিপাসু লোকেরা খুব ভাল করেই জানে। আর কাঠমান্ডু গিয়ে সাইডসিন করতে চাইলে তার মধ্যে নাগারকোট যে থাকবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

নাগারকোটের সূর্যোদয়-এর কথা ভ্রমণপিপাসু লোকেরা খুব ভাল করেই জানে। আর কাঠমান্ডু গিয়ে সাইডসিন করতে চাইলে তার মধ্যে নাগারকোট যে থাকবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শেষ বেলায় তাই নাগারকোটের সূযোর্দয়কে সাক্ষী রেখেই কাঠমান্ডুকে বিদায় জানালেন সুচরিতা সেন চৌধুরী।


এতদিন একটা জায়গায় থাকলে তার প্রতি টান হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তার উপর যখন বেড়ানো কারণ নয় তখন যেন জায়গাটা আরও বেশি করে আপন হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল কাঠমান্ডুর ক্ষেত্রে। কাজে গিয়ে সেখানকার সাধারণ মানুষ, ফুটবল, ফুটবল প্রশাসন, খেলার মাঠ সব কিছু সঙ্গে গত ১০ দিনে অনেকটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ফেরার পরিকল্পনা হতেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। তখনই হঠাৎ মনে হল কাঠমান্ডু শহরের বাইরে তো কিছুই দেখা হল না। আবার যদি কখনও আসা না হয়। যদিও ফেরার পথে মনে মনে কথা দিয়েছিলাম আর একবার অন্তত কাঠমান্ডুতে আসব। তা এখনও হয়ে ওঠেনি যদিও।

যাক সে সব কথা। হাতে আর মাত্র দু’দিন, ফেরার আগে কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতেই হোটেলের ছেলেটির কাছে জানতে চাইলাম। গত ১০ দিন ধরে রয়েছি। প্রতিদিন দেখা হচ্ছে তাই আলাপটা ওই হোটেলের লোকজনের সঙ্গে ভালই জমে গিয়েছিল। ওই বলল নাগারকোটের কথা। আমরাও একবারে রাজি হয়ে গেলাম। হোটেল থেকেই গাড়ি বুক করে দিল। যেহেতু বিষয়টি সূর্যোদয় সেহেতু প্রাত মাঝরাতে বেরতে হবে। কিন্তু তাতে কী, পাহাড়ের বুকচিরে সূযোর্দয় দেখার দৃশ্যকে মন ক্যামেরায় বন্দি করে কলকাতা নিয়ে যাব।

ও এখানে বলে রাখা ভাল, সেই সময় মার্চের গোড়ার দিকে কাঠমান্ডুতে বেশ ভাল ঠান্ডা ছিল। সারাদিন ২০ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করলেও সূর্য ডুবতেই ঝুপুৎ করে ঠান্ডা নেমে আসত কোথা থেকে। রাতে তা নেমে যেত প্রায় ৫-৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। আমাদের বেরতে হবে ভোর ৩.৩০-এ। কাঠমান্ডু শহর থেকে নাগারকোটের দুরন্ত ৩০ কিলোমিটারের আশপাশে। গাড়িতে দেড় ঘণ্টা তো লেগেই যাবে, জানা গেল হোটেলের ছেলেটির থেকে। তার পর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে উঠতে হবে বেশ খানিকটা।

সূর্যোদয় হয় পৌঁনে ছ’টার আশপাশে। পুরো হিসেব করা সময়। সেই মতই রেডি হয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়েই বুঝতে পারলাম প্রচন্ড ঠান্ডা। অন্ধকার কাঠমান্ডু তখন গভীর ঘুমে। সূযোর্দয় দেখার উদ্দেশেই কিছু গাড়ি আমাদের সঙ্গেই একি পথে এগোচ্ছে। সঠিক সময়েই গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি থেকে বাইরে পা রাখতেই বুঝতে পারলাম সেখানকার পারদ আরও কয়েক ডিগ্রি নিচে অবস্থান করছে। সোয়েটার, চাদর চাপা দিয়েও সেই ঠান্ডাকে আটকানো যাচ্ছে না। পাহাড়ের ঠান্ডার প্রস্তুতি কারও কাছেই ছিল না। গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা উঠতে হল ভিউ পয়েন্টে। খাঁড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠতে রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হয়।

নাগারকোটের উচ্চতা ৭,১৩৬ ফিট। ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রাম। সেখানে বাস করে মাত্র হাজার তিনেক মানুষ। যে কারণে রীতিমতো ঝকঝকে সব কিছু। পৌঁনে ছ’টার একটু আগে থেকেই পূব আকাশের রঙ বদলাতে শুরু করে। কালো আকাশে একটু একটু করে লালের আভা লাগা শুরু হতেই মেঘের চাদর সরিয়ে জেগে ওঠে একের পর এক তুষার শৃঙ্গ। প্রতি সেকেন্ডে বদলাতে থাকে আকাশের রঙ। বরফের উপর সূর্যের আলো পড়ে মায়াবি রূপ ধারণ করে। এখান থেকে দেখা যায় এভারেস্ট, অন্নপূর্ণা, মানাসলুসহ রেঞ্জসহ আরও একাধিক শৃঙ্গ। চরাচরকে লাল রঙে রাঙিয়ে সূর্যোদয় হয়। মুহূর্তেই পুরো এলাকার অন্ধকার কেটে গিয়ে সামনে খুলে যায় দিগন্ত বিস্তৃত কাঠমান্ডু ভ্যালির প্যানোরামিক ভিউ। এখানে বলে রাখা ভাল, শুধু যে ঠান্ডা ছিল তা নয় সঙ্গে ছিল প্রবল হাওয়া। পরে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান, আমরা যখন পৌঁছেছিলাম তখন সেখানের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নিচে ছিল। আর এখন সেটা বেড়ে ১০ হয়েছে। এবার আসতে আসতে বাড়বে। শুনে যেন ঠান্ডাটা আরও জাঁকিয়ে বসল।

নাগরাকোট থেকে সূর্যোদয় দেখাটা সারাজীবনের প্রাপ্তি হয়ে থাকল এই সফরের। ও এখানে বলে রাখি, আমি যে হোটেলে ছিলাম তার লবি থেকে এক ফালি বরফ পাহাড় দেখা যেত। আমি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে লবিতে গিয়ে তাঁকে দেখে আসতাম। জানতে চাওয়া হয়নি ওটা কোন শৃঙ্গ। দেখার আনন্দেই দেখতাম। আর মনে থাকবে কাঠমান্ডুর পাহাড় ঘেরা স্টেডিয়াম, থামেল, খাওয়া, বাজার, সেখানকার মানুষ—সব। সঙ্গে কাঠমান্ডুর বিমানবন্দর। একটার পর একটা পাহাড় কাটাতে কাটাতে যখন বিমান অবতরণের প্রস্তুতি নেবে তখন রোমাঞ্চ, আতঙ্ক, ভাললাগা সব একসঙ্গে চেপে বসবে। অনুভূতির সঙ্গে অনুভূতির লড়াই। কাঠমান্ডু থেকে যাবে স্মৃতিতে।

ছবি—লেখক

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on September 18, 2021 12:40 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন