বিজ্ঞাপন

বাড়িকে লুকিয়ে নৈনিতাল, আজও ভাবলে রোমাঞ্চ তৈরি হয়, প্রথম পর্ব

বাড়িকে লুকিয়ে নৈনিতাল পৌঁছে যাওয়াটা কী সহজ কথা? তাও সময়টা ১৯৯৭-র পর পরই। কথা ছিল এক বন্ধুর দিদির বিয়ে বর্ধমানে। সেই প্রোগ্রামই বদলে গেল পাহাড়ে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

বাড়িকে লুকিয়ে নৈনিতাল পৌঁছে যাওয়াটা কী সহজ কথা? তাও সময়টা ১৯৯৭-র পর পরই। কথা ছিল এক বন্ধুর দিদির বিয়ে বর্ধমানে। সেই প্রোগ্রামই বদলে গেল পাহাড়ে। তা বলে দার্জিলিং, সিকিম নয় এক্কেবারে নৈনিতাল? যাতায়াতেই চার দিন। বাড়ি অবশ্য জানল বিয়ে বাড়িই। হাওড়া থেকে সটান কাঠগোদাম। তার পর? শুনুন সুচরিতা সেন চৌধুরী-র মুখ থেকেই, আজ প্রথম পর্ব।


সত্যি বলতে কী এখনও ভাবলে নিজেরই অবাক লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় এত বড় মিথ্যেটা সেদিন বলেছিলাম কী করে? তার পরই মনে হয়, আসলে পাহাড় পাগলামো এমনই। কোনও অন্যায় করতে মিথ্যে বলিনি, মিথ্যে বলেছিলাম পাহাড়ের কাছে যাওয়ার জন্য। নিপাট একটা বেড়ানো। সঙ্গে সারাক্ষণ বুক ধরফর। আর প্রতিদিন বুথ থেকে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে একটা ফোন। আমি ঠিক আছি জানানো আর বাড়ি ঠিক আছে জেনে নেওয়া। আজ পর্যন্ত বাড়ির লোকেরা জানে না সে কথা। তার পর বাড়ির সঙ্গে দু’বার গিয়েছি নৈনিতাল কিন্তু প্রথম নৈনিতাল দেখার সেই উত্তেজনা আজও অনুভব করি।

ট্রেন ছিল সন্ধেবেলা। কাঠগোদাম এক্সপ্রেস। দু’দিনে গিয়ে পৌঁছবে হাওড়া থেকে কাঠগোদাম। স্লিপার ক্লাসে রিজার্ভেশন। বর্ষার সময়। ট্রেন বেশ ফাঁকা ফাঁকাই। আমরা তিনজন। আমার সঙ্গের দুই বন্ধুই ছেলে। সেই সময় আমরা হরিহর আত্মা ছিলাম। সেটা আমাদের বাড়িও জানত। কিন্তু একা একা ঘুরতে যেতে দিত না নিশ্চিত। যাক সে সব কথা। দু’দিনের যাত্রা শেষ হল আড়াই দিনে। সকালে পৌঁছনোর কথা ছিল যে ট্রেনের তা গিয়ে পৌঁছল সন্ধেবেলা। সবাই তখন চূড়ান্ত ক্লান্ত। কিন্তু আধো আলোতে কাঠগোদাম স্টেশনটা দেখেই সব ক্লান্তি উড়ে গেল আমার।

স্টেশন থেকে একটা মারুতিভ্যান ভাড়া করে এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম নৈনিতাল শহরে। হালকা শীতের ছোঁয়া। লেকের জলে নানা রঙের আলোর প্রতিবিম্ব হাওয়ায় ঘষে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। ঝাঁচকচকে পাহাড়ি শহর। হলুদ পাতা ঢেকে রেখেছে রাস্তার অনেকটা অংশ। কিন্তু এই পরিবেশ উপভোগ করার মতো তখন অবস্থা নেই। তিন দিনের জার্নি প্রায়, প্রচন্ড ক্লান্ত। আগে হোটেল খুঁজে ফ্রেশ হয়ে ঘুমোতে হবে। রাতের অন্ধকারে তখন খুব ভাল করে বুঝে উঠতে পারিনি জায়গাটা। অনেকটা পথ চড়াই উঠে একটা হোটেল পাওয়া গেল।

রাতেই ঠিক করে নিয়েছিলাম সকালেই এই হোটেল বদলাতে হবে। রাত গভীর হওয়ার আগেই সবাই মিলে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম। সকালে ঘুম ভাঙল এক বন্ধুর ডাকে। কোনওরকমে চাদর মুরি দিয়ে বারান্দায় এলাম। গোটা নৈনিতাল মেঘে ঢেকে রয়েছে। মাঝে মাঝে মেঘের ফাঁক দিয়ে  নিচে নৈনি লেকের ঝলক দেখা যাচ্ছে।  মেঘ আমার সব সময়ই খুব পছন্দের। রাতে ঘুমিয়ে ততক্ষণে সব ক্লান্তি চলে গিয়েছে। রাতে একবার যখন ঘুম ভেঙেছিল তখন প্রবল বৃষ্টির শব্দ শুনেছি। হোটেলের ছাদ, বারান্দা এখনও ভেজা। সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল। তবে এখন নেই।

এই সেই ইন্ডিয়া হোটেল

চা খেয়ে ব্যাগপত্তর নিয়ে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। থাকতে হবে একদম নৈনি লেকের পাড়ে। খুঁজতে খুঁজতে চোখে পড়ল ইন্ডিয়া হোটেল। এত বেড়াই এত হোটেলে থাকি সব নাম ভুলে যাই কিন্তু এই হোটেলটার নাম আজও ভু‌লিনি। ধবধবে সাদা হোটেলটা দেখেই আমাদের মনে ধরে গেল। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছিল ভাড়া আমাদের সাধ্যের বাইরে হবে। তখন কোনও রকমে জমানো টাকা নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ফেলা। কথা বলে একটা মূল্যে আসা গেল। হিসেব করে দেখলাম হয়ে যাবে। বেছে বেছে যে ঘরটা নিলাম সেটা একদম ছাদের উপর। ঘরের সঙ্গে বড় ছাদ। ছাদে দাঁড়ালেই সামনে এক ফ্রেমে ধরা পড়ে লেক। যেখানে নানা রঙের নৌকো ভেসে বেড়াচ্ছে।

ঘরে জিনিসপত্র রেখে সকলেই এসে দাঁড়ালাম ওই ছাদে। সঙ্গে সঙ্গে গরম গরম চা নিয়ে এল একজন বয়স্ক ওয়েটার। সঙ্গে একটা গোলাপ ফুল। আমাকে দিয়ে বলল ‘ওয়েলকাম ম্যাডাম’। এর পর থেকে প্রায় তিনদিন ওখানে ছিলাম রোজ একটা করে গোলাপ পেয়েছি ওনার কাছ থেকে। সেই মুগ্ধতা আজও কাটেনি। আমরা ওনাকে আর উনি আমাদের ভালবেসে ফেলেছিলেন নির্ঘাত। ফেরার দিন আমাদের নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে এসেছিলেন। ফেরার কথা পড়ে বলব হাতে এখনও তিন দিন। কোনও পরিকল্পনা নেই। শুধুই নৈনিতাল উপভোগ করা নাকি  আশপাশের কোনও নতুন জায়গা আবিষ্কার করা। ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি এল ঝেঁপে। দৌঁড়ে ঘরের ভিতর। কাচের জানলায় জলের আকিবুকি চলল অনেকক্ষণ। পাহাড়ে বৃষ্টি, আহা বড্ড প্রিয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন মান্না দে।

কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি কমতেই বেরিয়ে পড়লাম হোটেলের বাইরে। তারপর…

(দ্বিতীয় পর্ব আগামী কাল)

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on May 11, 2021 4:17 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন