বিজ্ঞাপন

Journey To Dhaka: ওপার বাংলার পথে ১৪ বছর আগে, প্রথম পর্ব

মেসেঞ্জারে সাহিলের মেসেজ, ‘‘দিদি এখন খুব সহজেই কিন্তু কলকাতা পৌঁছে যেতে পারব। আমাদের পদ্মা সেতু রেডি।’’ শুনে মনে মনে শুধু একটাই শব্দ বেরিয়েছিল, ‘‘দারুণ!’’ 
বিজ্ঞাপন

গোয়ালন্দ ঘাট। ছবি সংগৃহীত।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: মেসেঞ্জারে সাহিলের মেসেজ, ‘দিদি এখন খুব সহজেই কিন্তু কলকাতা পৌঁছে যেতে পারব। আমাদের পদ্মা সেতু রেডি।’ শুনে মনে মনে শুধু একটাই শব্দ বেরিয়েছিল, ‘দারুণ! (Journey To Dhaka)’

আজ সেই পদ্মা সেতুর সত্যি সত্যিই উদ্বোধন হল। সত্যি হল দীর্ঘ এক স্বপ্ন। এই দিনে দাঁড়িয়ে একটু পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করছে। ফিরে যাচ্ছি ১৪ বছর আগে।

সালটা ২০০৮। আমাদের তখন তিন জনের সংসার। মা, বোন আর আমি। বাবা বেঁচে থাকতে, কত বার যে বাংলাদেশের গল্প শুনেছি! সব ছবির মতো আজও সরে সরে যায় চোখ বুজলেই। বাবার মুখে শোনা সেই গোয়ালন্দ ঘাটকে দূর থেকে দেখেছিলাম সে দিন বাস থেকে। বাবাদের আদিবাড়ি ছিল ফরিদপুর। মায়েরও।

দেশ ভাগের পর দুই দাদুই ভারতে চলে আসেন। ঠাকুরদা আস্তানা গাড়েন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। আর দাদু কলকাতার পটলডাঙায়। ছোট থেকেই সে জন্য ফরিদপুর নামটা কানে, মনে, মাথায় গেঁথে গিয়েছে। না দেখেও তৈরি হয়ে গিয়েছে অদম্য ভালবাসা। কিন্তু কলকাতা থেকে বাস যায় সোজা ঢাকা। মাঝ পথে নামার অনুমতি নেই নিরাপত্তার কারণে। অথচ বুঝতে পারছিলাম, ফরিদপুর নিয়ে মায়ের আবেগ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

কথা বললাম যদি সম্ভব হয়! কিন্তু হল না। যিনি বাসের সব কিছুর দায়িত্বে ছিলেন, তিনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমাদের আবেগ। বললেন, ‘‘ফরিদপুরের উপর দিয়ে অনেকটা সময় বাস চলবে। আমি বলে দেব। জানলায় চোখ রাখবেন।’’

তেমনটাই হল। জানলা থেকে চোখ সরেনি আমাদের কারও। দেখতে দেখতেই কখন যেন পৌঁছে গেলাম পদ্মার পারে।

বাসে ১২ ঘণ্টার যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না। পদ্মার এপারে পৌঁছতে পৌঁছতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তার উপর চেকিংয়ের নিয়ম যা ছিল, তা আরও ভয়ঙ্কর। সব ব্যাগ রীতিমতো খুলে, জামাকাপড় বার করে চেক করা হচ্ছিল। কিন্তু দৌলতদিয়া থেকে যখন ফেরি ছাড়ল, উল্টো পারের উদ্দেশে তখন সব ক্লান্তি উধাও হয়ে গেল নিমেষে।

তার আগে বলি, সেখানে পৌঁছে কী হল। বর্ডারে চেকিংয়ের সময় ছাড়া আর কোথাও বাস থেকে নামার অনুমতি ছিল না। আমাদের বাস টাল খেতে খেতে সটান উঠে পড়ল বিশালাকার এক ভেসেলে। একটা নয়, বেশ কয়েকটি বাস উঠল। এ রকম জার্নির অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। ভয় লাগছিল না বললে ভুল হবে। মনে হচ্ছিল, সব নিয়ে যদি ডুবে যায় ‘জাহাজ’টা! তখনই মন ভাল করে বাসচালক বললেন, ‘‘এ বার বাস থেকে নেমে ডেকে দাঁড়াতে পারেন।’’

মুহূর্তে সব ভয়কে তুড়ি মেড়ে নেমে পড়লাম বাস থেকে। সেখান থেকে সটান ডেকে। আসল মুগ্ধ হওয়ার বাকি ছিল এ বারই।

বিকেল নামছে মন্থর গতিতে। বাস, মানুষ, গাড়ি— সব নিয়ে পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে দৈত্যাকার ‘জাহাজ’। পশ্চিম আকাশের রং বদলাচ্ছে ধীরে ধীরে। পদ্মার ঘোলা জলে সেই পড়ন্ত বিকেলের প্রতিচ্ছবি বদলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। কখনও আকাশ দেখছি, কখনও নদীর ঢেউ খেলে যাওয়া জল। পাহাড়ে সূর্যকে ডুবতে দেখেছি বহু বার। কিন্তু এ ভাবে নদীতে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণ একটা ‘সানসেট’ দেখার অভিজ্ঞতা এর আগেও হয়নি, এর পরেও না। কত ক্ষণ ধরে যে সেই ‘সূর্যাস্ত’ চলেছিল আজ আর মনে পড়ে না। তবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তত ক্ষণ, যত ক্ষণ না ঝুপুৎ করে অন্ধকার নেমেছিল নদীর বুকে। ক্যামেরাবন্দি কতটা হয়েছিল জানি না, কিন্তু মনের ফ্রেমে আজও সেই দৃশ্য ততটাই জীবন্ত।

সূর্য ডোবার পালা শেষ হলে, ‘জাহাজ’-এর চালকের কাছে যাওয়ারও সুযোগ হয়েছিল। তিনি আমাকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলেন ‘জাহাজ’ চালানো দেখার জন্য। দেখছিলাম কী নির্দ্বিধায় আমাকে সব দেখাচ্ছিলেন তিনি! আরও একটা জিনিস বেশ নজর কাড়ল। ‘জাহাজ’ জুড়ে বসে গিয়েছে বাজার। কেউ মাছ বিক্রি করছেন তো কেউ সবজি-শাক। বেশ নানা রঙের খাবারও বিক্রি হচ্ছিল। দীর্ঘ এই যাত্রা যখন শেষ হল তখন রাতের অন্ধকার নেমেছে বাংলাদেশের ওপারেও। সেখানেও এক প্রস্থ চেকিং, টাকা বদল করে যখন ঢাকায় নামলাম তখন রাত ৮টা বেজে গিয়েছে। করুণাময়ী থেকে বাসে ওঠার পর প্রায় ১৩-১৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বোনের এক পরিচিত আমাদের স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে পৌঁছে দিলেন গেস্ট হাউসে। দীর্ঘ ১০-১২ দিনের বাংলাদেশ সফরের শুরু হল।

(প্রথম পর্ব)

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

+2
0

This post was last modified on June 29, 2022 1:33 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন