বিজ্ঞাপন

Back To Dhaka: রাজপথ-ইতিহাস-ভাষা আন্দোলন, শেষ পর্ব

ঢাকা (Back To Dhaka) ফিরে পরের দিনটা আশপাশ দেখার পরিকল্পনা করাই ছিল। প্রতি ভাষা দিবসে দেখতে দেখতে বড্ড চেনা হয়ে গিয়েছে—শহিদ মিনার দিয়েই শুরু হল দিন।
বিজ্ঞাপন

এহসান মঞ্জিল, ঢাকা

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষের বাঁশি বাজাতে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে সময়। দিনাজপুর ছেড়ে ঢাকা পৌঁছে হাতে রয়েছে আরও দু’দিন। ঢাকা (Back To Dhaka) ঘোরা হয়নি। এই দু’দিন শহরটাই ঘুরে দেখব। দিনাজপুর জলপাইগুড়ির মতো হওয়ায় যেন দ্রুত বড্ড আপন হয়ে গিয়েছিল। জন্ম, বেড়ে ওঠা, প্রথম স্কুল, প্রথম বন্ধু—সবই তো আমার জলপাইগুড়িতে। তাই সেই টান অমোঘ। মায়া পড়ে গেল ওপার বাংলার দিনাজপুরের ওপরেও। এই সফরের সব থেকে বেশি সময় কেটেছে সেখানেই। তা-ও ফিরতেই হয়। ট্রেন পথেই পৌঁছে গেলাম ঢাকা।

ঢাকা (Back To Dhaka) ফিরে পরের দিনটা আশপাশ দেখার পরিকল্পনা করাই ছিল। জুটে গেল পুরো বন্ধুদের দল। সেই চিরপরিচিত ছবি যা প্রতি ভাষা দিবসে দেখতে দেখতে বড্ড চেনা হয়ে গিয়েছে—শহিদ মিনার দিয়েই শুরু হল দিন। এর পর লালবাগ ফোর্ট, সোনারগাঁও, কালীবাড়ি, পার্লামেন্ট হাউস, আর সবার শেষে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়। সেখানে গিয়ে হল এক বিপত্তি। সেই প্রসঙ্গে আসছি তার আগে বলি দ্রষ্টব্যগুলো দেখার অভিজ্ঞতা। শহিদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে মনটা ভাড়াক্রান্ত হয়ে ওঠে। সেখানে বেজে চলেছে, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১-এ ফেব্রুয়ারি।’’ ভাষা আন্দোলন একটা দেশের ইতিহাসের মূল স্তম্ভ। একটা দেশ যেখানে সবাই বাংলায় কথা বলে, বাংলায় কাজ করে। ভাল লাগছিল ভাবতে।

এর পর লালবাগ ফোর্টের গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে মনে হচ্ছিল পৌঁছে গিয়েছি দিল্লির কোনও মনুমেন্টের সামনে। হবে নাই বা কেন। লালবাগ ফোর্টও তো বয়ে নিয়ে চলেছে মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি। জানা যায়, ঔরঙ্গজেবের সময় এই দূর্গ বানানো শুরু হয়েছিল। মুঘল সম্রাটের স্বপ্ন ছিল এই দুর্গ। এই স্থাপত্যকে ফোর্ট অফ ঔরঙ্গাবাদও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কোনও কারণবশত তা বানানো শেষ করা সম্ভব হয়নি। কেন তা রহস্যই থেকে গিয়েছে। কিন্তু পুরো ফোর্ট এলাকা দারুণভাবে সাজানো। সমান করে কাটা ঘাস, বাগান, পরিষ্কার ফোর্ট চত্বর। অনেকটা সময় কেটে গেল মুঘল স্থাপত্যের সঙ্গে। মুঘলদের তৈরি করা বেশ কিছু মসজিদকেও দারুণ যত্নে রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। তার মধ্যে অন্যতম খান মহম্মদ মৃধা মসজিদ ও স্টার মসজিদ।

ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির

বাংলাদেশ যাওয়ার আগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কথা অনেক শুনেছিলাম। আমার যদিও মন্দির দেখার শখ তেমনভাবে নেই। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির না দেখলে বেড়ানোটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ঢাকা থেকেই এই মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী। মানে ঢাকার ভগবান। জানা যায় এই মন্দির বানিয়েছিলেন রাজা বল্লাল সেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মন্দিরের যে পরিকাঠামো ছিল তার অনেকটাই লুপ্ত হয়েছে। বার বার ভেঙেছে আবার তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। একদল লোকের দাবি এখানেও পড়েছিল সতীর অংশ। সেটা দেহের অংশ না হলেও দেবীর মুকুট থেকে রত্ন খসে পড়েছিল এখানে। তবে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইতিহাস শুনতে শুনতেই অনেকটা সময় কেটে গেল ঢাকার অন্যতম এই স্থাপত্যে।

তবে আমার সব থেকে বেশি মনে ধরেছিল এহসান মঞ্জিল। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই স্থাপত্যকে গোলাপি মহলও বলা হয়। যার ভিতরে রয়েছে সম্পূর্ণ একটা শহর। বঙ্গপ্রদেশের আধুনিক হয়ে ওঠার স্মৃতি বহন করে চলেছে এই স্থাপত্য। দীর্ঘ সিঁড়ি সোজা উঠে গিয়েছে মহলের দরজায়। পরবর্তী সময়ে এই মহলে থাকতে শুরু করেন খোয়াজা আবদুল্লা। মুঘল আমলে এই বাগানবাড়িটি বানিয়েছিলেন শেখ ইনায়েতউল্লা, নাম ছিল ‘রং মহল’। নবাব আলিবর্দি খাঁ-র সময় এই মহল ইনায়েতউল্লার ছেলে শেষ মতি উল্লা এই মহল ফরাসি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এর সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। তা একটা পর্বে লিখে ফেলা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা যেটা কয়েক প্যারা আগে অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে সেটা বলি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরটা অপূর্ব। বিশাল জায়গা জুড়ে বিভিন্ন বিভাগের ঘর, সঙ্গে উদ্যান এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। তখন সবে সন্ধে নামছে। হঠাৎই সাইরেন বেজে উঠল। আর ঘোষণা করা হচ্ছে এখনই খালি কর দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্তর। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম গোটা চত্বরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা তো অবাক! আমাদের বন্ধুরা এ সবে অভ্যস্ত। বলল, ভয় নেই, এমনটা হতেই থাকে। কিছু একটা খবর রয়েছে পুলিশের কাছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ফাঁকা করে দিচ্ছে। আমরাও সেখান থেকে বেরিয়ে আস্তানায় ঢুকে পড়লাম সে দিনের মতো।

পরের দিনটা রাখা ছিল শপিংয়ের জন্য। নিউ মার্কেট চত্বর খুব বিখ্যাত ঢাকার। তবে ওখানকর খাঁটি যা-ই কিনতে যাবেন, তাতেই পকেটে বেশ চাপ হবে বুঝতেই পারলাম। যে কারণে এত ঢাকাই জামদানি ভালবাসা স্বত্ত্বেও ঢাকা থেকে তা কেনা হয়নি সে বার। যেটা কিনেছিলাম সেটা হল জিন্সের প্যান্ট। সস্তা জিন্সের মার্কেট রয়েছে সেখানে একটা। জানা গেল, বিদেশে এক্সপোর্টের জন্য যে জিন্স তৈরি হয়, তাতে ছোট ছোট কোনও খুঁত থাকলে তা বাতিল হয়ে চলে আসে এই মার্কেটে। সত্যি বলছি কোনও খুঁত চোখেই পড়েনি। এই পুরো ট্যুরে যেটা বলার মতো বিষয়, সেটা হল, যেখানেই যখন থেকেছি, সেখানকার খাবার। অপূর্ব রান্নার স্বাদ আজও লেগে রয়েছে মুখে। আমাদের বন্ধুদের রান্না করা চিকেনই হোক বা হাবিবুলের স্ত্রীর রান্না করা ইলিশ মাছ। স্বাদ অনবদ্য! তবে রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে দেখেছি, একটা বেগুন ভাজার দাম ১০ টাকা, একটু আলুসেদ্ধর দাম ১০ টাকা। ইলিশ মাছ খেতে চাইলে তো কথাই নেই, একপিস হাজার টাকা। আমি কিন্তু ২০০৮ সালের কথা বলছি!

স্টার মসজিদ

এ ভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল বাংলাদেশের দিনগুলো। কী পেলাম? সেই তালিকাটা খুব দীর্ঘ না হলেও, সারাজীবনের। এক দল বন্ধু, যাঁদের সঙ্গে আজও রয়ে গিয়েছে সম্পর্ক। আর পেলাম চেনা-অচেনা নির্বিশেষে আন্তরিকতা, আতিথেয়তা— যা দিয়ে গোটা বিশ্বকে মাত দিতে পারে বাংলাদেশ। সেই টানে কখনও আবার পাড়ি দেব। এখন তো পদ্মার উপর সেতুও হয়ে গিয়েছে। যাতায়াতের সময় অনেকটাই কমে গিয়েছে। রয়েছে ট্রেন পথ, উড়ান পথও। বেরিয়ে পড়লেই হয়।

(শেষ পর্ব)

ছবি: সংগৃহীত

Dinajpur Days: ব্রিটিশ আমলের ট্রেন আর সামাদ, চতুর্থ পর্ব

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

+1
0

This post was last modified on June 29, 2022 1:28 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন