বিজ্ঞাপন

Deoghar: সময়ের সঙ্গে বাঙালির হাওয়া বদলের জায়গা বদলেছে

আজ থেকে কিছু বছর অগে আমার ঘুরতে যাওয়া সকলের চেনা একটি জায়গার কথাই বলা যাক। আর সেটা হল দেওঘর (Deoghar)।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সম্প্রীতি দত্ত: ভ্রমণপিপাসু বাঙালিকে ঘরে আটকে রাখা অসম্ভব। সুযোগ পেলেই তাঁরা বেড়িয়ে পড়তে চান চেনা-অচেনা নানা জায়গায়। অমিও সে সব মানুষদের মধ্যেই পড়ি, যারা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। যদিও সবসময় সুযোগ হ​য়ে ওঠে না, তবুও মন ছুটে যেতে চায় অনেক দূরে। কোথাও বেড়ানোর কথা শুনলে বা পড়লে নিজেকে বাড়িতে বন্ধ করে রাখা কঠিন। আজ তেমনই এক গল্প বলব। আজ থেকে কিছু বছর অগে আমার ঘুরতে যাওয়া সকলের চেনা একটি জায়গার কথাই বলা যাক। আর সেটা হল দেওঘর (Deoghar)।

সালটা ২০১৬, একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। সবে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক দিয়েছি। তাই ইচ্ছে হল ডিসেম্বরের ছুটিতে ঘুরতে যাব। আমি একটু শান্ত, নির্জন জায়গা পছন্দ করি। গল্পের বইতে এরকম জায়গার কথা পড়লে সেই জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়।  এমনই এক জায়গা দেওঘরের উল্লেখ পেয়েছি নানা গল্পের বইতে। অতীতে  হাওয়া বদলের জন্য এই জায়গায় যেত অনেকেই শুনেছি। কলকাতার ব্যস্ত জীবনযাত্রা থেকে কিছুট সময় নিভৃতে কাটানোর বর্ণনা পেয়েছি নানা লেখকের লেখনিতে। তাই ঠিক করে ফেললাম এখানেই ঘুরতে যাব। যেই ভাবা সেই কাজ, তাই দেওঘর যাওয়ার টিকিট কেটে নেওয়া হল।

২৩শ ডিসেম্বর আমাদের যাত্রা শুরু হল দেওঘরের উদ্যেশ্যে। বাবা, মা, আমি, ভাই, দিদা ও দাদু ভোর ভোর রওনা দিলাম। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে ক​য়েক ঘন্টার পথ। সন্ধ্যেবেলা পৌঁছে গেলাম হোটেল “প্লাজা”-তে। বাবা বৈদ্যনাথ ধাম মন্দিরের পিছনের দিকে আমাদের হোটেল, পায়ে হেঁটে মন্দির ১০মিনিট। সেইদিন হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে মন্দির দর্শনের জন্য গেলাম। মন্দিরে যাওয়ার পথটি খুব ঘিঞ্জি, চারিদিকে লোক গিজগিজ করছে। গিয়ে দেখি মন্দিরে পান্ডাদেরই ভিড়। পান্ডা ছাড়া নাকি পুজো দেওয়া যাবে না। অগত্যা তাদের দিয়েই মা, দিদারা পুজো দিল, বাবা বৈদ্যনাথের দর্শন হল আমাদের। মন্দির চত্বর বড়ই অপরিচ্ছন্ন, চারিদিকে ফুল, মালা, দুধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সব মন্দির যেমন হয়।

পুজো দেওয়ার পর মন্দিরের আশপাশটা ঘুরে দেখলাম। কত হোটেল, মানুষ—যেন মেলা বসেছে। গল্পে পড়া দেওঘরের থেকে অনেক আলাদা। এই কারণেই সকালের মন্দির চত্বর মোটেও পছন্দ হয়নি। সকালে ঘোরার পর খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। শুনলাম বিকেলের আরতি খুব সুন্দর হয়, তাই সেদিন আর কোথাও না গিয়ে বিকেলে আরতি দেখতে গেলাম। সত্যিই আরতি দেখতে আমাদের বেশ ভাল লেগেছিল। আর সকালের থেকে বিকেলের মন্দির বেশি সুন্দর ছিল।

পরদিন দেওঘর থেকে ১৫কিমি দুরে ত্রিকূট পাহাড়ে (উচ্চতা ২৪৭০ফুট) পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমার ও ভাই-এর ট্রেকিং করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু দাদু-দিদার কথা ভেবে আমরা রোপওয়ে করে পাহাড়ে চড়েছিলাম। রোপওয়ে চ​ড়ার অভিজ্ঞতা অনেক ছোটোবেলায় দার্জিলিং-এ একবার হলেও এটি পুরো অন্যরকম। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা-নামা, খুবই রোমাঞ্চকর। একদম উঁচু থেকে নিচের দিকে তাকালে বুকটা যেন কেঁপে যায়। নিচে ঘন জঙ্গল, মনে মনে শুধু ভাবছি কোনওভাবে যদি পড়ে যাই তাহলে আমায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেদিন ছিল ২৫শে ডিসেম্বর কিন্তু পাহাড়ের ওপরে বেশ গরম ছিল। পাহাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে আমরা চললাম তপোবনের দিকে।

শেষ পর্যন্ত একটা নির্জন জায়গার খোঁজ পেলাম। এখানে পুরাকালে সাধুরা এসে তপস্যা করতেন বলে জানা গেল। জায়গাটি খুবই নিরিবিলি ও সুন্দর। হয়তো সেকারণেই। এই জায়গাটির ইতিহাস জানার জন্য একজন গাইডকে সঙ্গে নিলাম আমরা। রাম-সীতা বনবাসের সময় এখানে থাকতেন। তপোবনের নীচের দিকে একটি জলাশ​য়ে সীতা স্নান করতেন​। তার নাম এখন সীতাকুণ্ড। কি স্বচ্ছ সেই জল​। রাম ভক্ত হনুমানের সংখ্যা প্রচুর এখানে। কত গুহার মধ্য দিয়ে দিয়ে তিনি নিয়ে গেলেন আমাদের। দাদু-দিদা বাদে আমরা চারজন সিড়ি বেয়ে আধ ঘন্টায় পৌঁছেছিলাম তপোবনের চূড়ায়। এখানে এসে ট্রেকিং-এর স্বাদ মিটেছিল আমাদের। এত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা আজও রয়েছে।

সেদিনের ঘোরাটা বেশ ভাল ছিল। কিন্তু ঘোড়ায় টানা টাঙ্গাগাড়িতে চড়া আর হ​য়ে ওঠেনি। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর সন্ধ্যেতে মন্দিরে গিয়ে বসেছিলাম আমরা। সেখানে এক মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমাদের হোটেলের এক কর্মচারীকে দেখি ধুতি প​ড়ে মাথায় তিলক কেটে মন্দিরে পাণ্ডার কাজ করছে। বোঝা গেল এখানে এভাবেই চলে মন্দির বা মানুষের জীবন। এখানে শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের নিরামিষ খাবারই পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু যারা নিরামিষ খাবার একদম খেতে পারেন না তাদের আমার ভাই-এর মত অসুবিধায় পড়তে হবে।

শেষদিন আমরা উসরি ফলস দেখতে গেলাম। এখানে অনেক বিজ্ঞাপনের শুটিং হয়। ‘লিরিল’ সাবানের বিজ্ঞাপনের শুটিং এখানেই হ​য়েছিল​। নুড়ি-পাথরের উপর বসে উসরির ব​য়ে যাওয়া দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল টেরই পাইনি​। প্রকৃতির এই আকর্ষণের শিকার আমরা সকলেই। ঘোরা থাকবে আর শপিং থাকবে না তা কি হয়? শেষদিনের জন্য ফেলে না রেখে প্রতিদিনই আমরা কিছু না কিছু জিনিস কিনেছি যদিও পুজোর সামগ্রী ছাড়া তেমন বিশেষ কিছু নেই। এখানকার প্যারা খেতে এতই ভাল যে ব্যাগ ভর্তি করে সেটাই নিয়ে এসেছিলাম। প্যারা খেতে আবার যাব দেওঘর।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

0
0

This post was last modified on October 27, 2022 8:33 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন