বাংলা ধারাবাহিকে শিশুদের আজ জয়জয়কার। কখনও তারাই গল্পের কেন্দ্রে। আবার কেন্দ্রে না থেকেও দিব্যি টেনে নিয়ে যাচ্ছে একটা গল্পকে। দর্শকের কাছে ওদের খাতির কম নয়। কিন্তু এই খাতির যদি হঠাৎই উবে যায়? সেদিনের জন্য প্রস্তুত তো ওদের অভিভাবকেরা? কী ভাবে সামলাবেন নিজেদের একরত্তিগুলোকে? খবরাখবর নিয়ে লিখছেন নবনীতা দাশগুপ্ত।
টেলিভিশন ছাড়া ঘর-গৃহস্থজীবন অচল। আর এই অচলাবস্থা চলার প্রধান কারণ ধারাবাহিক। মেগা সিরিয়াল দেখেন না এমন মহিলাদের সংখ্যা হাতে গুনে বলা যায়। সারাদিনের কাজের শেষে সান্ধ্য বিনোদন ওই ধারাবাহিকগুলিই। চরিত্রগুলো কখন যে তাদের পারিবারিক সদস্য হয়ে ওঠে নিজেরাই বুঝতে পারেন না।
আজকাল তো আবার বাংলা ধারাবাহিকে শিশু প্রোটাগনিস্টদেরও জয়জয়কার। আমলকি, লোকনাথ, রাখী, বন্ধন, সত্যবতীসহ আরও কত কে। ঝিলিক আর পটল অবশ্য আজ আর আসে না দর্শকের বাড়িতে। তবে আছে আরও অনেকে। যারা মুখ্য চরিত্রে না থাকলেও ধারাবাহিক টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি মেলা ভার। এদের মধ্যে ভানুমতীর খেল-এর টিনটিন একজন। আসল নাম সামন্তক দ্যুতি মৈত্র। ক্লাস ফোরের ছাত্র। সে তো আবার বড় পর্দাতেও বাজিমাত করছে। একাধিক ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছে তাকে।
বাবলি এমনই একটা মেয়ে যাকে বাংলা ছবির পাড়ায় দেখা যায় না সচরাচর
প্রায় প্রত্যেকটি ধারাবাহিকেই রয়েছে কোনও না কোনও ছোটে ওস্তাদদের উপস্থিতি। আমলকিতে একটি ছোট্ট রোলে দেখা গিয়েছে কেজির শ্লোক দাশগুপ্তকে।
শুধু কি ধারাবাহিক?
এই খাতির যদি ধারাবাহিকটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর কেউ না করেন তখন কী হবে?
কিংবা এমনও তো হতে পারে আর সে ভাবে তারা কাজের অফারই পেল না ভবিষ্যতে। তখন কি ওদের মনের উপর ভীষণ রকমের চাপ পড়বে না? প্রতিদিন নাকে মুখে গুঁজে শুটিং ফ্লোরে যাওয়ার তাড়া যদি কদিন পর আর না থাকে? সে দিন ওদের মন খারাপ হবে না? আলবাত হ
ওদের মন পড়তে গেলে অনুভূতিশক্তি হতে হবে প্রকট। সে দিন আর পাঁচটা শিশুর সহজ সরল শৈশবের ভীরে কি নিজের ছানাটিকে ভিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন তাদের অভিভাবকেরা? কী ভাবছেন তারা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে? এই প্রশ্ন শুধু সাংবাদিক মন কেন, দর্শক মনেও ঘুরে ফিরে আসে বারবার। এহেন সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিলেন অরণ্য, সামন্তক, সৌমিদের অভিভাবকেরা।
সামন্তকের বাবা সূর্য দ্যুতি মৈত্র বলেন, “আমরা ওই দিনটির জন্য প্রস্তুত যে দিন ছেলে টেলিভিশনে বেশি সময় দিতে পারবে না পড়াশোনার চাপে। আবার এমন দিনও আসতে পারে যে দিন কেউ ডাকছে না ওকে অভিনয়ের জন্য। কেরিয়ারের ওঠাপড়া তো চলতেই থাকে। তাই সে দিন যেন সামন্তকে
র মন খারাপ না হয় তাই ওকে গান, আবৃত্তি দুটোই শেখাচ্ছি।’’
পাশাপাশি কৌশিক সেনের ‘স্বপ্নসন্ধানী’ তে নাটকও শেখে সামন্তক। যাতে অন্তত এই সংস্কৃতি জগত থেকে ছিটকে না যায়। আবার লেখাপড়ার চাপ কমলে যাতে টেলিভিশন বা সিনেমায় ফিরতে গিয়ে ওকে হোঁচট খেতে না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখবে ওর নাট্যচর্চা। এ সব ভেবেই ‘স্বপ্নসন্ধানী’-তে সামন্তুককে পাঠিয়েছে তার বাবা-মা। তা ছাড়া নাটক করলে অভিনয়ে দক্ষতাও বাড়বে বলে মনে করেন তার অভিভাবক।
সৌমি প্রধানের মা সুতৃষ্ণা প্রধানের মতে, “মেয়ে অভিনেত্রীই হতে চায়। তার জন্য ওকে যত রকমের সহযোগিতা করার আমরা করব। অভিনয়ের পাশাপাশি ও ভাল নাচও করে। ওটাও ওর বড় আপন। এমন দিন সত্যিই আসতে পারে যে দিন দেখব ওর অনস্ক্রিনে কোনও কাজ নেই। সে দিন আমাদের মেয়ে নাচ আর মডেলিং করবে।’’
এর পর যদি ওর মত বদলায় পড়াশোনা কেরিয়ার
জয় বাবা লোকনাথ অর্থাৎ অরণ্য রায়চৌধুরীর মা বলেন, “আমার ছেলে এখন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ে। ওর ইচ্ছে বড় হয়ে আইপিএস অফিসার হবে। আবার অভিনয়টাও করতে চায়। বাকিটা সময় বলবে। আজ ওকে লোকনাথ করে তোলার পিছনে আমার অনেক স্ট্রাগল আছে। সেই গল্প
এই ধারাবাহিক শেষ হলে যদি চটজলদি কোনও কাজ না আসে তা হলে ওকে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে পাঠানোর ইচ্ছে আছে অরণ্যর অভিভাবকদের। ওর প্রতিভা হারিয়ে যেতে দিতে চান না তাঁরা। আইপিএস হওয়ার জন্য যে পড়াশোনাটা দরকার সেটাও করাতে চান। তবে অনেকটাই ছেড়ে রেখেছেন সময়ের হাতে। সময়ই আসলে বলে দেবে কখন কোনটা করা উচিত।
সত্যবতী অর্থাৎ সুস্মিলি আচার্যর বাবা দয়াল আচার্য একজন পরিচালক। তিনি জানান, “আমার মতে একটার পর একটা ধারাবাহিকে অভিনয় করলে শিশুদের পড়ার ক্ষতি হবেই হবে। পড়াশোনাটা খুব জরুরি। আমি সুস্মিলিকে সেই কথাই বলি। ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ শেষ হওয়ার পর কোনও লিড রোল ওকে করতে দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। ছোট খাটো রোল করতে দেব। তা সে ছবিতে হোক বা ধারাবাহিকে। শুধুমাত্র চর্চা থাকার জন্য।”
This post was last modified on September 24, 2018 11:59 am