বিজ্ঞাপন

ফিল্ম রিভিউ গুলাবো সিতাবো: আশা জাগিয়েও হতাশ করলেন সুজিত

ফিল্ম রিভিউ গুলাবো সিতাবো: গুলাবো সিতাবো (Gulabo Sitabo) মুক্তি পাওয়ার আগে তা নিয়ে হইচইয়ের শেষ ছিল না। লকডাউনের বাজারে সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি সুজিত সরকারের গুলাবো সিতাবো।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

ফিল্ম রিভিউ গুলাবো সিতাবো: গুলাবো সিতাবো মুক্তি পাওয়ার আগে তা নিয়ে হইচইয়ের শেষ ছিল না। লকডাউনের বাজারে সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি সুজিত সরকারের গুলাবো সিতাবো। মুক্তি পেয়েছে অ্যামাজন প্রাইমে, মিখিয়ে থাকা মানুষের তাই দেখে ফেলতে সময় লাগেনি। কিন্তু পরিচালক সুজিত সরকার অনেক আশা জাগিয়েও হতাশ করলেন, লিখলেন দেবব্রত শ্যাম রায়


বিশ্বম্ভর রায়ের চরিত্রে ছবি বিশ্বাস নিজের লাঠিটা দিয়ে উঠতি বড়লোক মহিম গাঙ্গুলি ওরফে গঙ্গাপদ বসুর হাতটা টেনে ধরেছিলেন, ‘‘বাঈজিকে ইনাম দেওয়ার অধিকার সর্বপ্রথমে গৃহস্বামীর।’’ বিশ্বম্ভরের এই প্রতিরোধ অকিঞ্চিৎকর, ইতিমধ্যে বৈশ্যশ্রেণির পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, জলসাঘর (১৯৫৮) ছবিটিতে আসলে সামন্ততন্ত্রের বিদায়ক্ষণ রচনা করছিলেন সত্যজিৎ।

২০২০ সালে ‘গুলাবো সিতাবো’-তে পৌঁছে জলসাঘরের মতোই পুরোনো লখনৌর এক বিগতযৌবনা হাভেলি, ফতিমা মহল-কে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানালেন সুজিত সরকার। হাভেলির বকলম মালিক মির্জা শেখকে আমরা পায়খানার ভাঙা দেওয়াল নিয়ে ভাড়াটেদের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখলাম৷ বহুদিন হল, আভিজাত্য নামে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, অতীতের ছায়াটুকু শুধু ধরে রেখেছে চরিত্রগুলির ‘লখনৌভি জবান’। মির্জা ও তার ভাড়াটেদের মধ্যে আর্থিক অবস্থার তেমন ফারাকও নেই, তারা একে অন্যের সঙ্গে ক্ষুধার্ত জন্তুর মতো লড়ে যাচ্ছে, যদি নিজের আর্থিক স্থিতির সামান্য উন্নতি করা যায়। ভাড়াটেদের নেতা বাঁকে রাস্তোগি-র (আয়ুষ্মান খুরানা) ঘরভাড়া মাসিক মাত্র তিরিশ টাকা, সেটাও সে মাসের পর মাস দেয় না। মির্জা রাতের অন্ধকারে ভাড়াটেদের বালব, সাইকেলের ঘণ্টি চুরি করে পরদিন চোরবাজারে বেচে নিজের হাতখরচ জোগাড় করে। এক বাকবিতণ্ডার শেষে যখন বাঁকে আবিষ্কার করে যে মির্জা তার অর্থাৎ বাঁকেরই চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছে, সে চাদর টেনে নিয়ে চলে যায়, মির্জা স্বগতোক্তি করে, ‘‘নিয়ে যাও, বুঝবে, আজ সারাদিন দিন ধরে ওটার মধ্যেই পেদেছি।’’ এই অসামান্য অমিতাভ বচ্চনকে আমরা আগে কোনওদিন দেখিনি।


(বিনোদন জগতের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

ক্রমে হাভেলিতে প্রোমোটার আসে, তার সঙ্গে গোপনে জোট করে সেবাদাসের কাজ করে উকিল। জোর করে দেগে দিলে মেটাফর উবে যায়, তাই অতি মৃদু, অনুচ্চ স্বরে ফতিমা মহল যেন জীর্ণ ভারতবর্ষেরই প্রোটোটাইপ। যে দেশে গণতন্ত্র বলে একটা কিছু আছে বটে, তবে তা খায় না মাথায় দেয় ঠিক বোঝা যায় না। পুঁজির গ্রাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয়। শেষ দৃশ্যে মাত্র আড়াইশো টাকায় মির্জার বেচে দেওয়া হাভেলির পুরোনো চেয়ার যখন অ্যান্টিক শপে গিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার প্রাইস ট্যাগ পায়, বুঝতে বাকী থাকে না হাস্যরসের আড়ালে ‘গুলাবো সিতাবো’ আসলে এক তীব্র বিষন্নতার ছবি।

এ ছবিতে বিষন্নতা নানা স্তরে কাজ করে। এক কামরার ছোট্ট আটাকলের মালিক-শ্রমিক বাঁকের বান্ধবী ফৌজিয়া তার গরিব প্রেমিকের পেছনে অযথা সময় নষ্ট না করে তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিছুদিন পরে বড়লোক স্বামীর সঙ্গে গাড়ি করে আটাকলের সামনে এসেই সে বাঁকেকে প্রশ্ন হাঁকে ‘‘ভাইয়া, ইহা অর্গানিক আটা মিলেগা কেয়া?’’ এটি সম্ভবত এ যাবৎ ভারতীয় সিনেমার নিষ্ঠুরতম সংলাপগুলির মধ্যে একটি। অর্গানিক আটা! সময়ের জলের দাগ ফুটে ওঠে পুরোনো লখনৌর নোনা-ধরা গলিতে। শুধু ফৌজিয়া নয়, জুহি চতুর্বেদীর লেখায় এ ছবির প্রতিটি নারীচরিত্রই এক একটি স্পষ্ট অন্তর্ঘাত, রুথলেস, তারা প্রথম থেকেই জানে তারা কী চায়। যেমন বাঁকের বোন গুড্ডু। যেমন ফতিমা মহলের আসল মালকিন, মির্জার চেয়ে ১৫ বছরের বড় তার বেগম ফাট্টো (ফারুখ জাফর), যাকে মির্জা শুধু হাভেলির জন্যই বিয়ে করেছিলেন। বেগমের মাস্টারস্ট্রোকেই এ ছবি শেষ হয়। ক্রেডিট রোলে অমিতাভের আগে যে ফারুখের নাম আসে, তা শুধুমাত্র তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ার কারণে নয়।

‘গুলাবো-সিতাবো’, সুজিত সরকারের এই আপাত-অগোছালো স্যাটায়ার, এখনও অবধি তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ, অনেকগুলি সম্ভাবনা জাগিয়ে কিছুটা পূরণ করে, কিছুটা করে না। ছবিটি অবশ্যই দেখুন।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on June 19, 2020 12:38 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন