বিজ্ঞাপন

দোমোহানির ভূত, মৃত্যুর পরও গোটা গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন পল হোয়েল সাহেব

দোমোহানির ভূত দেখতে হলে চলে যেতে হবে উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে। সত্যি বলছি এখানকার ভূতরা কারও কোনও ক্ষতি করে না। কাউকে কাউকে দেখাও দেন।
বিজ্ঞাপন

একটা সময় এই অবস্থায় পড়ে ছিল দোমোহানি রেল স্টেশন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

দোমোহানির ভূত দেখতে হলে চলে যেতে হবে উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে। সত্যি বলছি এখানকার ভূতরা কারও কোনও ক্ষতি করে না। কাউকে কাউকে দেখাও দেন কিন্তু বেশিরভাগের কাছেই তাঁরা থাকেন অধরা। ছোটবেলাটা এই গ্রামে কাটায় বার কয়েক তাদের দেখা আমি পেয়েছি। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য বলছি না। ভূত বলে কিছু আছে বিশ্বাস থেকে নয় কিন্তু কিছু অভিজ্ঞতা যার ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাইনি। লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


জন্ম হয়েছিল উত্তরবঙ্গেই। জ্ঞ্যান হওয়াও সেখানে। বেড়ে ওঠার স্বাদ পেয়েছি ওই গ্রামেই। তখনও অনেকটাই ছোট যখন আমরা স্বপরিবারে দোমোহানি ছেড়েছিলাম। আমি সপ্তমশ্রেনী। তবে ততদিনে মনটা যুবতী হতে শুরু করেছে। কোয়েড স্কুলের পাশের সিটের সঞ্জীব একটু একটু করে মনে ধরছে। স্কুল থেকে খেলার মাঠ সব জায়গায় সঞ্জীবের অবস্থান আমাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে। না প্রেমটেম তখন বুঝি না। ওই একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় পাট খেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘‘জানিস এই স্টেশনে ভূত আছে।’’

আমি তো অবাক। তাও সঞ্জীব বলেছে বলে কথা, বিশ্বাস তো করতেই হবে। আমার বাবা তখন ওই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার। প্রতিদিন সকালে তালা খুলে স্টেশন মাস্টারের ঘরে বসেন বাবা। একমাত্র ট্রেন চলে গেলে তিনি আবার ফিরে আসেন বাড়িতে। কোথায় ভূতের কথা তো কখনও শুনিনি। আমতা আমতা করে বাবাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। তার পর যেটা শুনলাম সেটাই এখানে বলব। পল হোয়েল সাহেবের গল্প। যাঁর নামে দোমোহানির একমাত্র হাই স্কুল। এখানেই আমার বাবা-কাকারাও পড়েছে আমি আর আমার বোনও পড়েছি যতদিন দোমোহানিতে ছিলাম।

রাতের অন্ধকারে এই সেই পথ যে পথে পল হোয়েল সাহেব তাঁর ঘোড়া ছোটাতেন

ব্রিটিশ শাসনকালে পল হোয়েল নামে এক সাহেব এই গ্রামে থাকতেন। রেল স্টেশনের পাসেই ছিল তাঁর বাংলো। সেই বাড়ি তখনও ছিল ধ্বংসস্তুপের মতো। দোতলা একটা বাড়ি যার অনেকটাই অংশ ভেঙে পড়েছে। তিনি থাকতেন সেখানেই। তাঁর একটি পোষ্য ঘোড়াও ছিল। যা নিয়ে তিনি সারা গ্রাম চসে বেড়াতেন। তাঁর অনেকটা সময় কাটত স্কুলের পাসের মাঠে। ক্লান্ত হয়ে গেলে সেখানে তেঁতুল গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিতেন কিছুটা সময়। এই ছিলেন দোর্দন্ডপ্রতাপ পল হোয়েল সাহেব।

তাঁর মৃত্যু নিয়ে দুটো কাহিনী শোনা যায়। প্রথমত, তিনি এরকমই একদিন ক্লান্ত হয়ে যখন তেঁতুল গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন তাঁকে গুলি করে মারা হয় সঙ্গে তাঁর ঘোড়াকেও। আর দ্বিতীয়টি, তিনি তাঁর বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। আর তার পর থেকেই নাকি তাঁর ভূত ঘুরে বেড়ায় দোমোহানির আনাচ-কানাচ। তবে কোনও দিন কারও কোনও ক্ষতি করেননি তিনি। কথায় আছে এই গ্রামকে তিনি ভালবেসে ফেলেছিলেন তাই মৃত্যুর পরও ছেড়ে যেতে পারেননি।

পল হোয়েল সাহেবের নামাঙ্কিত সেই স্কুল

কেউ বলেন, ওই তেঁতুল গাছের নিচে তাঁকে দেখা যায় বসে থাকতে। কেউ বলে রাত নামলেই স্টেশন চত্তরে শোনা যায় ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ। তেমন টগবগ আওয়াজ যে আমিও শুনেছি। কিন্তু তা কখনও ভাবায়নি। যে আওয়াজ কখনও এগিয়ে আসে আবার কখনও মিলিয়ে যায় দূরে। অন্ধকার নামলে ও পথে সত্যিই স্থানীয় লোকেরা কেউ যায় না। একটা সময় দোমোহানির ভূতুরে স্টেশন দেখতে আসত লোকে। তবে সবটাই দিনে। এখড় সেই স্টেশনের গায়ে রঙের প্রলেপ লেগেছে। ঝাচকচকে হয়েছে চত্তর তবে আর চলে না ট্রেন। তাতে কি একটু সুবিধেই হয়েছে পল হোয়েল সাহেবের? তার খবর পাইনি।

ফাঁকা, শান্ত তিস্তাপাড়ের এই গ্রাম ঘিরে এমনই একাধিক রোমহর্ষক কাহিনী রয়েছে। শুধু পল হোয়েল সাহেব নন দোমোহানির আনাচ-কানাচ ঘুরত গিরিবালার গল্পও। যা অন্য কোনওদিন বলব। আর বলব আমার নিজের উপলব্ধির কথাও। যার ব্যাখ্যা আজও পাইনি আর হয়তো কোনওদিন পাব না। তবে সেই দেখা কখনও আতঙ্ক তৈরি করেনি সেই সময়। বরং আজ ভাবতে গেলে সত্যিই শিউরে উঠি।

এখন দোমোহানি স্টেশন

—নিজস্ব চিত্র

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

+11
-1

This post was last modified on April 16, 2021 2:16 pm

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন