বিজ্ঞাপন

তিনচুলে থেকে দেখা দুধ সাদা তিনটে চুল্লি মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়

তিনচুলে কেন নাম হল এই জায়গাটার? আনমনে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবে পথিক। পথ চলতি ছোট্ট শিশুকে দেখে শিশুর মতো মনটা ঝুপুৎ করে বেরিয়ে আসে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

তিনচুলে কেন নাম হল এই জায়গাটার? আনমনে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবে পথিক। পথ চলতি ছোট্ট শিশুকে দেখে শিশুর মতো মনটা ঝুপুৎ করে বেরিয়ে আসে মাথার ভিতর থেকে। হারিয়ে যায় সব প্রশ্ন। অনেক বছর পর যখন সেই পথেই আরও একবার হাঁটার সুযোগ হয় তখন সে জানতে পারে পাহাড়ি ওই চুল্লির কথা। লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


সেবার তাগদা থেকে দুই বন্ধুতে হাঁটা লাগিয়েছিলেন। সব পাহাড়ি মানুষ যেমন বলে তেমনই বলেছিল, ‘‘এই তো সামনে তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট।’’ পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট শুনতে শুনতে কখন যে ১ ঘণ্টা হেঁটে ফেলেছি টেরই পাইনি। শেষ পর্যন্ত যখন তিনচুলে ভিউপয়েন্টে পৌঁছলাম তখন বিকেল সন্ধের সঙ্গে আলাপ জমাতে শুরু করেছে। সেই শেষ বেলায় মেঘের চাদর সরিয়ে উঁকি দিয়েছিল তিন চুল্লি। কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই তিনটে শৃঙ্গ দেখা যায় তিনচুলে থেকে। ঠিক যেন পাশাপাশি রাখা রয়েছে তিনটে চুলো বা উনুন। তাই এই জায়গায় নাম তিনচুলে। প্রথমবার সেই তিনচুলের দেখা পেলেও এবার সারাক্ষণই সে তারা লুকিয়ে থাকল মেঘের আড়ালে।

কখনও বৃষ্টি তো কখনও মেঘর চাদর পেরিয়ে যখন তিনচুলে পৌঁছলাম তখন সকাল গড়িয়ে সময়ের কাটা দুপুরে পা দিয়েছে। রাস্তায় এক প্রস্থ ব্রেকফাস্ট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু দুপুরে খিদে গুরুগুর করতে শুরু করেছে। স্নান সারতে সারতেই ডাক এল। খাওয়ার রেডি। রাস্তার উপরই পাশাপাশি দুটো কাঠের ঘর। বেশ বড়। কয়েকধাপ নেমে রান্না ঘর, খাওয়ার জায়গা। সেখানে যখন পৌঁছলাম তখন মেঘ ঢুকতে শুরু করেছে জানলা দিয়ে। তার মধ্যেই চলে এল ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাত, ডাল, ভাজা, আর দেশি মুরগির ঝোল। গ্রাম্য পাহাড়ি রান্নার একটা অন্য স্বাদ আছে। যা আরও একবার পেলাম। দুপুরে খাওয়ার পর হোম স্টের সামনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে গেল কত নাম না জানা ফুলের সঙ্গে। যাদের ক্যামেরাবন্দি করা গেল কিন্তু ওই নাম না জানা পাখির ডাক যা সারাক্ষণ সঙ্গ নিল তার দেখা পেলাম না অনেক চেষ্টাতেও।

তিলচুলের নাম না জানা ফুল

টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হতেই ফেরার পথ ধরলাম। সারাক্ষণই হোম স্টের বারান্দায় খেলা করতে দেখা গেল মেঘের দলকে। জানলা খোলা পেলেই ঝুপুৎ করে ঢুকে পড়ছে ঘরের মধ্যে। মেঘ, বৃষ্টির খেলা চলল যে দু’দিন ছিলাম। এক ছোট্ট পাহাড়ি জনপদের প্রাপ্তি এটাই। শান্ত, যেখানে শুধু প্রকৃতির শব্দই শোনা যায়। কখনও অজানা পাখির ডাক, কখনও শন শন হাওয়া কান ঘেঁষে চলে যায়। জঙ্গল থেকে সটান মেঘ এসে ঢেকে দেয় রাস্তা। নাম না জানা ফুলের দল মাথা দুলিয়ে আহ্বান জানায়। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলরাশি বসতে বলে ওর পাশে। এই সব নিয়েই কোথা দিয়ে কেটে যায় তিলচূলের দিন-রাত।

ইচ্ছে করলে ঘুরে আসা যায় লামাহাটা, ত্রিবেনী, দার্জিলিং। আমরা শুধু দার্জিলিংয়েই গিয়েছিলাম একদিন। কয়েক ঘণ্টা অতি চেনা ম্যাল যা সব সময়ই নতুন লাগে সেখানে সময় কাটানো। বিকেলের পড়ন্ত রোদে গ্লেনারিজের ছাদ খোলা বারান্দায় বসে গরম গরম দার্জিলিং চায়ে চুমুক দিতে দিতে যখন মেঘের পর্দা সরিয়ে হঠাৎই উঁকি দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন যেন মুহূর্তটা স্বার্থকতা পায়। বসে থাকতে ইচ্ছে করা ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্যামেরা অন করতেই ভুলে যাই।

তিনচুলে গ্রাম

আসলে কিছু দৃশ্য মনের ক্যামেরাতেও থেকে যায়। দার্জিলিং থেকে তিলচূলে ফেরার পথে অন্ধকার নামে। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখি এক অদ্ভুত দর্শন পশু রাস্তা পেরিয়ে হারিয়ে যায় জঙ্গলে। ওর দেখা আর পাইনি। গাড়ির চালকও সঠিক নাম বলতে পারেনি তার। তাই গুগলে তার খোঁজ সফল হয়নি। ওই যে বললাম মনের ফ্রেমে বাঁধানোর জন্যও তো কিছু চাই যা যন্ত্রে ধরা যায় না।

ছবি—লেখক

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

0
0

This post was last modified on October 26, 2021 1:53 am

বিজ্ঞাপন
admin:
বিজ্ঞাপন
Related Post

This website uses cookies.

বিজ্ঞাপন