আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ সঠিক ডোজে না খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে

আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০

আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ নিয়ে হইচই কম হচ্ছে না, করোনার নাকি এই একটাই ওষুধ এখন, কিন্তু জানেন কি এই ওষুধও আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে যদি না চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করেন। সেটাই জানাচ্ছেন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী


সাবধান করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ‘আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খেতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই ওষুধ সঠিক ডোজে না খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কী ভাবে এবং কেন?

ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক থেকে গত মার্চে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ‘আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০’ করোনা মোকাবিলায় দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। সেই জন্য সকালে চার দানা করে এক বার পরপর তিন দিন খেতে হবে। এক মাস পর ফের একই নিয়মে খেতে হবে। যাদের ১০ বছরের নীচে বয়স তাদের দু’দানা করে একই নিয়মে খাওয়াতে হবে। কারও কোনও অন্য শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবেন। কিন্তু, এই পরামর্শের অপব্যাখ্যা চলছে নিয়মিত।

রোগীরা নিজেরাই দোকান থেকে নিয়মিত ভাবে ওষুধ কিনছেন এবং এবং নিজেদের ইচ্ছামতো সে ওষুধ খাচ্ছে‌ন। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন দোকানদারগণ! দোকানদারের কাছ থেকে কেনার পর তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে গিয়ে রোগীরা নিজেদেরকে ফেলছেন বিপদে। ওষুধের দোকানদার তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে চলেছেন নিয়মিত। এ ভাবে ‘আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০’ খাওয়ার ফলে ওষুধের থেকে ক্রমশ সুফল পাওয়ার আশা কমে যাচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক হ্যানিম্যানের কথা উল্লেখযোগ্য। ওষুধের মাত্রা ও তার প্রয়োগের উপর নির্ভর করে হোমিওপ্যাথি ওষুধের ক্রিয়াকর্ম। ১৮১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রারম্ভে স্থূল মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করা হত। ক্রমশ মাত্রার পরিমাণ অল্প করতে করতে ১৮৩৩ সালে পোস্তের দানার মতো একটি ক্ষুদ্র অণুবাটিকাকে একমাত্র বলে অভিহিত করেছিলেন স্বয়ং আবিষ্কর্তা। আরও পাঁচ বছর পর্যন্ত ওই মাত্রাতেই ওষুধ প্রয়োগ করতেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি ওই রূপ কল্পনাতিত ক্ষুদ্র মাত্রাতে সন্তুষ্ট না হয়ে  শততমিক ওষুধ প্রস্তুত প্রণালী ত্যাগ করে ৫০ সহস্রতমিক প্রণালীতে ওষুধ তৈরি করেন এবং জলের সঙ্গে মিশিয়ে মাত্রাকে রোগীর পক্ষে অনিষ্টহীন ভাবে প্রয়োগ করবার সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণ করেন।

সুতরাং নির্দিষ্ট পরিমাণে হোমিওপ্যাথি ওষুধ যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ কোনও ভেহিকেলসের সঙ্গে যুক্ত করা হয় তখন ওষুধটির ডোজ হয়। তখন ওষুধটি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়। হোমিওপ্যাথিতে খাবার জন্য যে ওষুধ তৈরি হয়, তার যে ভেহিকেলস ব্যবহার করা হয় সেটা হল গ্লোবিউলস, সুগার অফ মিল্ক, কোন, ট্যাবলেট, পিউরিফাইড ওয়াটার, পেলেটস। সুতরাং আপনাদের কাছে অনুরোধ, রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিন। কোনও হাতুড়ের পরামর্শে ওষুধ খাবেন না। কারণ যে ভাবে জনগণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কিনে খাচ্ছে‌ন, তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য।

সঠিক মাত্রায় সঠিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করলে তখন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না, কিন্তু ভুল ওষুধ ব্যবহার করলে তা সাঙ্ঘাতিক হতে পারে। একবারে বেশি পরিমাণ ‘আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০’ খেয়ে নিলে অ্যালকোহল টক্সিসিটি ও প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। কারণ পোটেন্ট মেডিসিনে ৯১ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে যা একবারে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ওষুধটি অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন দোকান থেকে কিনে এনে। ফলে ওষুধটির লক্ষণ আপনার শরীরের মধ্যে দেখা দেবে, যাকে হোমিওপ্যাথিতে বলা হয় ড্রাগ প্রুভিং। অতএব সাবধান, শুধুমাত্র রেজিস্টার চিকিৎসকের কাছ থেকেই ওষুধ সংগ্রহ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।

(এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে www.justduniya.com/স্বাস্থ্য)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)