জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সাকিব আল হাসান নির্বাসিত, সেই সাকিব, যাঁকে নিয়ে অতীতেও বহুবার তোলপাড় হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। সেটা কখনও খারাপ অঙ্গভঙ্গি তো কখনও দল তুলে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। আবার কখনও একক দক্ষতায় হেরে যাওয়া ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন জয়ের পথে।
এটাই আসলে সাকিব আল হাসান। বার বার ক্ষমতাচ্যুত হয়েও ফিরে এসেছেন রাজার মতো। এবারও তাই বিশ্বাস তিনি ফিরবেন আরও শক্তিশালী হয়ে। কিছুদিনই আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অধিকারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন ক্রিকেটাররা। শেষ পর্যন্ত প্লেয়ারদের দাবির সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয় বোর্ড।
খেলা সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন…
এ বার অবশ্য বিপাকে স্বয়ং সাকিব আল হাসান। আইসিসি মঙ্গলবার সাকিবকে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত করল। যার ফলে ভারত সফরে আসতে তো পারবেনই না সঙ্গে খেলা হবে আগামী বছরের একগুচ্ছ টুর্নামেন্ট। তার মধ্যে রয়েছে আইপিএল ও টি২০ বিশ্বকাপ।
এই সেই সাকিব যিনি হেরে গেলে মাঠের মদ্যেই আবেগে কেঁদে ফেলতে পারেন। হঠাৎই আইসিসি দূর্নীতি দমন কমিটির তোপের মুখে পড়ে গেলেন। মঙ্গলবার আইসিসি তাঁকে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত করল। তাঁর কাছে তিন বার বুকিদের ম্যাচ গড়াপেটার যে আবেদন এসেছিল তার বিরুদ্ধে তিনি কোনও অভিযোগ করেননি। তার মধ্যে যেমন আন্তর্জাতিক ম্যাচ রয়েছে তেমনই রয়েছে আইপিএল। যার ফলে তাঁর ভারত সফরেও আসা হচ্ছে না। আগামী বছরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড টি২০-তেও খেলা হচ্ছে না সাকিবের। ১৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ২০২০ টি২০ বিশ্বকাপ।
সাকিব এই বছরের জানুয়ারি ও অগস্টে পর পর দু’বার আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার সঙ্গে কথা বলেছিলেন কিন্তু তাঁর কাছে যে গড়াপেটার আবেদন নিয়ে এসেছিলেন এক ব্যাক্তি সেটা তিনি জানাননি। আইসিসি জানিয়েছে, দীপক আগরওয়াল নামে সেই ভারতীয় বুকি সাকিবকে বলেছিল তাঁকে দলের ভিতরের সব খবর দিতে যেমন টিম কম্পিজিশন, স্ট্র্যাটেজি ইত্যাদি। এরকম তিন বার ঘটে।
যদিও বিনা প্রতিবাদে অপরাধ মেনে নেওয়ায় পাঁচ বছরের বদলে দু’বছরের জন্য তাঁকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তবে শাস্তি কমানোর জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সাকিবের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে। হাসিনা বলেছেন, ‘‘সাকিবের একট ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই বোর্ড ওর পাশে থাকবে।’’
আইসিসির সাত পাতার রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘‘২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারির সেই ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপে শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছিলেন দীপক আগরওয়ালের থেকে। ওই মেসেজের সঙ্গে মিস্টার আগরওয়াল আরও একটি মেসেজ করেন, ‘আমরা কি এখনই কাজ শুরু করব নাকি আমি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’’
Just posted a photo https://t.co/hxCR3zwaFY
— Shakib Al Hasan (@Sah75official) October 22, 2019
২০১৮-এর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবোয়ের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালীন অভিযুক্ত বুকি দীপক আগরওয়ালের সঙ্গে আবার কথা হয় সাকিব আল হাসানের।
২৩ জানুয়ারি দীপক আগরওয়াল আবারও শাকিবের কাছে জানতে চান, ‘‘ভাই, এই সিরিজ নিয়ে কিছু?” এই একই ব্যাক্তি আইপিএল চলাকালীনও যোগাযোগ করেন ২০১৮-তে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ম্যাচের সময়। আগরওয়াল ২০১৭তেও শাকিবকে অফার করেছিলেন যখন তিনি ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলতেন।
বিসিবির তরফে বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পরিষ্কার জানিয়ে দেন তাঁরা আইসিসির তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না। জানুয়ারি থেকে যে সাকিবের সঙ্গে আইসিসি কথা বলছে সেটাও সাকিব তাদের জানাননি। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুব পরিষ্কার করে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই আমি এবং বিসিবির কেউই আইসিসির তদন্তের বিষয়ে কিছু জানে না। যা জানুয়ারি থেকে চলছে। এসিইউ একটি স্বাধীন বডি। শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ও আমাকে দু’তিন দিন আগেই জানিয়েছে প্লেয়ারদের স্ট্রাইক নিয়ে মিটিংয়ের পর।’’
ভারত সফরে আসার আগেই শাকিবের নির্বাসনে জোড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ৩ নভেম্বর থেকে ভারতের মাটিতে টি২০ ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে সিরিজ। তবে আপাতত টি২০তে মাহমুদুল্লাহ ও টেস্টে মোমিনুল হককে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)