মঙ্গলবার যখন নেপালের অভিবাসী শ্রমিক কালী দেবী এবং তাঁর স্বামী বিজয় সিং তাদের কাজ শেষ করে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর হরসিল উপত্যকা ছেড়ে চলে যান, তখন তারা কল্পনাও করতে পারেননি যে তারাই হয়তো আসন্ন দুর্যোগের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি হয়ে থেকে যাবেন, অথবা দুঃখজনকভাবে, তাদের সন্তানের সঙ্গে তাঁদের শেষ দেখা হয়ে থেকে যাবে।
ভাটোয়ারী হেলিপ্যাডে বসে, বিজয় তাঁর ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ এবং দুই মিনিটের ফোনের কথোপকথনের কথা বলছিলেন। যিনি বাবাকে ফোনে বলেছিলেন যে তিনি অসহায় বোধ করছেন এবং পরবর্তীতে উপত্যকায় আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের পরে নিখোঁজ হয়ে যান বিজয়ের ছেলে।
“ও বলেছিল বাবা, আমরা বাঁচব না, নদীতে প্রচুর জল বাড়ছে,” বিজয় সিং বলেন।
শ্রমিকদের একটি ২৬ জনের দলের মধ্যে ছিলেন তাঁরা যাঁরা নেপাল থেকে উপত্যকায় রাস্তা এবং সেতু নির্মাণের কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন। কালী দেবীর মতে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে ভাটোয়ারীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল এই দম্পতি। একদিন পরে, বাকি ২৪ সদস্যের কারও সঙ্গেই তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেননি।
বুধবার ঘটনার কথা শোনার পর এই দম্পতি গঙ্গাওয়াড়ি পর্যন্ত হেঁটে যান, যা হরসিল উপত্যকার দিকে যায়, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেসে যাওয়ার পর তারা আর এগোতে পারেননি।
“আমরা যখন উপত্যকা ছেড়ে চলে আসি, তখনও আমরা ভাবিনি যে এই অঞ্চলে এমন দুর্যোগ আসবে। যদি আমি আসন্ন বন্যার কথা জানতাম, তাহলে আমি আমার সন্তানদের পিছনে ফেলে আসতাম না,” তিনি বলেন। “আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি আমাদের হরসিল উপত্যকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা আমাদের সন্তানদের নিজেরাই খুঁজে বের করব।”
শ্রমিকদের পাশাপাশি, দুর্যোগের সময় উপত্যকায় সেনাবাহিনীর একটি দলও উপস্থিত ছিল। প্রায় ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে।
উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশে অতিবৃষ্টির ফলে সম্পত্তি ও প্রাণহানির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এবং সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার উত্তরকাশীর হরসিলের কাছে ধারালি গ্রামে ভয়াবহ মেঘ ভাঙার ফলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার ফলে ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং যানবাহন সেই জলের স্রোতে ভেসে যায়, প্রচুত মানুষ আটকা পড়ে এবং কমপক্ষে পাঁচজন মারা যায়।
গঙ্গার উৎপত্তিস্থল গঙ্গোত্রীতে যাওয়ার পথে ধারালি হল প্রধান যাত্রাবিরতির জায়গা এবং অনেক হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং হোম স্টে রয়েছে সেখানে।
বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত গ্রামে উন্নত সরঞ্জাম বিমানে করে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে যাতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের অনুসন্ধান দ্রুত করা যায় এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙা ও অবরুদ্ধ রাস্তার কারণে আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি উদ্ধার অভিযান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এখানে ক্যাম্প করছেন, আবহাওয়ার উন্নতি হলে এবং অবরুদ্ধ রাস্তাগুলি খুলে দেওয়া হলে তা গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী, রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google