স্বস্তি কোথায়? Kolkata তথা বাংলায় সত্যিই কি নিরাপদ নই আমরা

kolkata

ঠিক কোথায় বাস করছি আমরা? অতীতেও কঠিন পরিস্থিতি দেখেছে এই শহর (Kolkata), ঘটেছে এমন ঘটনা যা ভাবলেও শিউড়ে উঠতে হয়। কিন্তু এখন যে সবটা বড্ড এক ঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। ধর্ষণ, দাদাগিড়ি, সাধারণের উপর আক্রমণ এখন পৌঁছে গিয়েছে ঘরের অন্দর থেকে হাসপাতালের বেডে। কোথায় নিরাপদ মানুষ? প্রশ্নটা তাই বার বার ঘুরে ফিরে আসছে। ডাক্তার থেকে রুগী, সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, পুলিশের পরিবারও অত্যাচারিত হচ্ছে, আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আরজি কর কাণ্ডের পর এই বাংলা জুড়ে হাসপাতালের অন্দরে আরও বেশ কিছু এমন ঘটনা ঘটেছে। অতীতের দিকে তাকাতে গেলে হিসেব মেলানো দায় হবে। তাই সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার কথাতেই আসা যাক।

কালিপুজোর পর দিনের কথা। ২২ অক্টোবর। কালিপুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছিল শব্দবাজি ফাটানো। যেখানে শব্দবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তবে সরকারের কাজ ওইটুকুই। নিয়ম আদৌ মানা হচ্ছে কি না তা কে দেখবে, সেটা কেউ জানে না। সেরকমই সেদিন বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করে এক পরিবার। কারণ তাঁর বাড়িতে ছোট বাচ্চা ও অসুস্থ রোগী থাকায় তাদের অসুবিধে হচ্ছিল। তার পরই শুরু হয় ঝামেলা। তা গড়ায় চুলোচুলিতে। এবং যে পরিবার এই বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করে সেই পরিবারের কর্তা পুলিশে কর্মরত। শহরের বিসর্জন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয় সেই রাতে সেই কাজেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বাড়িতে ছিলেন না। তবে এই ঝামেলার পর দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। শুধু খড়দহ নয় গড়িয়াতেও একই প্রতিবাদ করে শ্লিলতাহানীর শিকার হন এক মহিলা, তাঁর স্বামীকে বেধরক মারধোরও করা হয়। পুলিশকে জানালে পরদিন সকালে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলেও জানা গিয়েছে।


এতো গেল একটা ঘটনা। উত্তর থেকে এবার সরাসরি পৌঁছে যেতে হবে দক্ষিণে। ঠিক তার পরের দিন, মানে ২৩ অক্টোবর। সোনারপুরের একটি বড় আবাসনে থাকতেন এক শুল্ক আধিকারিক। কয়েকদিন আগে স্থানীয় এক অটো ওয়ালার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছিলেন এই আধিকারিক। তার পরই দলবল নিয়ে সেই আবাসনের গেট ভেঙে ঢুকে প্রদীপ কুমারের উপর চড়াও হয় সেই অট্রো চালকের লোকজন। ভিতরে ঢোকে প্রায় ৫০ জন, বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল আরও ২০০ জন লোক। পাঁচ তলায় উঠে প্রদীপ কুমারকে মারধোর করা হয়। তাতে তাঁর মাথা ফেঁটে যায়। এই মুহূর্তে তিনি কল্যাণী এইমসে চিকিৎসাধীন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘটনাকে লঘু করে দেখানো, যার ফল ৫০ জনের মধ্যে তিন জনকে আটক করেও জামিন দিয়ে দিল আদালত।

এখানেই শেষ নয়, এই কলকাতা শহরের বুকে বিখ্যাত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম। সেখানেই মা ও দাদুর সঙ্গে সাইকিয়াট্রি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল এক নাবালিকা। সেই নাবালিকার মা অন্য কোনও কাজে একটু সেখান থেকে বেরিয়েছিলেন। সেই সুযোগে নিজেকে শিশু চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সেই নাবালিকাকে সেখান থেকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত অমিত মল্লিক। তার পর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সেই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে অমিত। সেই সময়ই নাবালিকার মা ফোন করে মেয়ের ফোনে। সেই সুযোগেই নিজেকে ছাড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে নাবালিকা। ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে নাবালিকার। পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আবারও সেই হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী।

এক একটা ভিন্ন ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয় একটা বিষয় নিয়েই আর সেটা হল নিরাপত্তা। ঠিক যেমনটা হল রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের এক হোটেলে। এক ব্যক্তিকে খু‌ন করে খাটের বক্সে রেখে চম্পট দিল দু’জন। আরও দু’জনের সঙ্গে সেই হোটেলে উঠেছিলেন মৃত ব্যক্তি ২২ অক্টোবর। এর পর বাকি দু’জন চেকআউট করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মৃত ব্যক্তিকে না দেখতে পেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল তিনি হয়তো আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। তারা বলেছিলেন, কিছুক্ষণ বিশ্রামের জন্য তাঁরা ‌এসেছেন। এর পর একটি পরিবারকে সেই ঘর দেওয়া হয়। তারা ঢুকেই পঁচা গন্ধ পায়। কিন্তু অনেক খুঁজেও কিছু পাওয়া যায়নি। রুমফ্রেশনার দিয়ে সেই রাতের মতো সমস্যার সমাধান করে হোটেলকর্মীরা। কিন্তু পরদিন সকালে গন্ধ তীব্র হওয়ায় নতুন করে খুঁজতে গিয়ে খাটের বক্স খুলে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। মৃতের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

এতো খুন, ধর্ষণ, দাদাগিড়ির হাত থেকে রেহাই কীভাবে? কেউ জানে না। খুঁজতে গেলে এমন ঘটনার বিশাল তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। এগুলো শুধুমাত্র একটা উদাহরণ। গোটা বাংলা জুড়ে ঘটে যাওয়া কত ঘটনা তো সামনেই আসে না। হারিয়ে যায় আতঙ্কের গভীর অতলে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle