Messi উৎসবে উঠে এল ধ্বংসাত্মক যুবভারতীর ছবি, কে দায়ী

Messi

এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এতদিনের সব স্বপ্ন, মেসিকে ঘিরে উচ্ছ্বাস, পরিকল্পনা, কোটি কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট সব জলে চলে গেল শুধুমাত্র চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভাবে। মন্ত্রী থেকে সান্ত্রীদের ঘেরা টোপেই যুবভারতীতে ঢুকলেন লিওনেল মেসি (Messi) আর তাদের ঘেরাটোপেই বেরিয়ে গেলেন। আর তার পরই ফুঁসে উঠল প্রায় ৫০ হাজারের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কলকাতার সাধের সল্টলেট স্টেডিয়াম। ভয়ঙ্কর অব্যবস্থার শিকার কলকাতার মেসি ইভেন্ট। আয়োজক শতদ্রু দত্তের মাইক হাতে বার বার বলা সত্ত্বেও কেউ মেসির পাশ থেকে সরল না। যাতে চূড়ান্ত বিরক্ত মেসি মাত্র ২২ মিনিটেই মাঠ ছাড়লেন। ঠিক সকাল ১১.৩০ মিনিটে এবি কাটআউট দিয়ে ঢুকল মেসির গাড়ি। তার আগে থেকেই ফুটছিল স্টেডিয়াম। মাঠে তখন চলছে মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের ম্যাচ প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবল তারকাদের নিয়ে। সেই ম্যাচ দেখেই উচ্ছ্বসিত ছিল গ্যালারি। কিন্তু তাল কাটল মেসি বেরিয়ে যেতেই।

যেভাবে মেসিকে ঘিরে রাখলেন এই শহরের হোতারা তাতে গ্যালারি থেকে কেউই তাঁর একঝলকও দেখতে পেল না। কেন মেনে নেবে মানুষ। বিনে পয়সায় তো আর মেসি দর্শনে গ্যালারি ভরায়নি কলকাতার ফুটবলপ্রেমী মানুষ। সব থেকে কম টিকিটের মূল্য ছিল পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। তার পর তো তা পৌঁছে গিয়েছিল লাখে। আর সেই টাকা খরচ করেই মাঠ ভরিয়েছিলেন তারা। সকাল থেকে পুরো শহর পৌঁছে গিয়েছিল স্টেডিয়ামে। একরাশ আনন্দ। ভারতের ফুটবলের ভরাডুবির মধ্যেও। তবে এতে যা হল, তাতে আরও ডুবে গেল ভারতের ফুটবল। লজ্জার ইতিহাস লেখা হল ভারতীয় তথা কলকাতা ফুটবলে। এর পর যদি পুরো ভারত সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যেতেন মেসি অ্যান্ড টিম তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। তবে তেমনটা ঘটেনি। মাঠ থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা চলে যান বিমান বন্দরে, সেখান থেকে হায়দরাবাদ। আর সেখানকার সুষ্ঠ অনুষ্ঠান কলকাতার লজ্জার আরও বাড়াল। কলকাতা বিমান বন্দর থেকেই গ্রেফতার হন আয়োজক শতদ্রু দত্ত।


মেসির গাড়ি স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরতেই গ্যালারির রূপ দেখে মাঠ ছাড়লেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। যদিও তিনি যে মাঠে উপস্থিত ছিলেন তা হয়তো অনেকেই টের পাননি। শুধু কী তাই? মেসি বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাঠে ঢুকছিল শাহরুখ খানের গাড়ি। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তাঁকে গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া। যে খেলাটি চলছিল সেটা ১০-১৫ মিনিটেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেসির আগমনের খবরে। তাঁদের সঙ্গে হাতও মেলান মেসি কিন্তু ওই যে প্রথমেই বললাম একঝাঁক মানুষের ঘেরাটোপে। সবার আগে তদন্তে দেখা উচিত এরা কারা? তাদের চিহ্নিত করা মোটেও কঠিন কাজ হবে না, যদি সদিচ্ছা থাকে। মেসির সঙ্গে সারাক্ষণ গায়ে গা লাগিয়ে থাকলেন স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তার পরও কেন এই অরাজকতা হল, প্রশ্নটা তাঁর কাছেও যাওয়া উচিত। প্রশ্নটা যাওয়া উচিত পুলিশ, প্রশাসনের কাছে, কীভাবে এতটা অব্যবস্থা হল শুধুমাত্র একটা মেসির আগমনে। এতটাই ব্যর্থ বাংলার পুলিশ, প্রশাসন। যার জেরে ক্ষমা চাইলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা মন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘আমি খুবই হতাশ আজকে সল্টলেক স্টেডিয়ামের অব্যবস্থায়। সেই সময় আমি স্টেডিয়ামের পথেই ছিলাম। লিও মেসির কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। পাশাপাশি সব ক্রীড়াপ্রেমী ও ফ্যানদের কাছেও যারা মেসিকে দেখার জন্য পৌঁছেছিলেন। আমি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।’’ পরে স্টেডিয়ামেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের তরফের বক্তব্য জানান ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি ল অ্যান্ড অর্ডার জাভেদ শামিম। তাদের তরফে প্রথমে জানানো হয়েছিল, শতদ্রুকে আটক করা হয়েছে বিমান বন্দরে তবে পরবর্তী সময়ে তিনি গ্রেফতার হন। বাকিটা তদন্তের পরে জানা যাবে।

এদিন কলকাতার গর্ব সল্টলেক স্টেডিয়ামে এক কথায় তান্ডব চালাল সমর্থকরা। ২০১৭ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নতুন করে সেজে উঠেছিল এই স্টেডিয়াম। তার পর থেকে আট বছরে এমন কিছু ঘটেনি যাতে স্টেডিয়ামের কোনও ক্ষতি হয়েছে। তবে এদিন যে তান্ডব দেখল এই স্টেডিয়াম তার চিহ্ন দীর্ঘদিন থেকে যাবে স্টেডিয়ামের শরীরে। উপড়ে ফেলা হল চেয়ার। গ্যালারি থেকে উড়ে আসা চেয়ারের স্তুপ একটা সময় জমে গেল মাঠে। জলের বোতল উড়ে আসা দিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর উত্তপ্ত জনতা ভেঙে ফেলে ফেন্সিং। সেখান দিয়ে পিল পিল করে লোক ঢুকে পড়ে মাঠে, তান্ডব চালায় মাঠের ভিতরেও। আগুন লাগানোর চেষ্টাও করা হয়। তবে পুলিশের তৎপড়তায় তা বেশি দূর গড়ায়নি। তবে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে মাঠের মধ্যে রীতিমতো ছুটে বেড়াল হাজার হাজার মানুষ। ছিড়ে নেওয়া হয় গোল পোস্টের জাল, তুলে নেওয়া হয় কার্পেট। আহত হল পুলিশ থেকে সাংবাদিকও।

মাঠ থেকে বেরিয়েও থামেনি সেই উত্তপ্ত জনতা। বাইরের অংশে সাজানো পর পর ফুলের টব ভেঙে ফেলা হয়। কেউ কেউ তো আস্ত টব তুলে নিয়ে চলে যায়। তার সঙ্গে ছিল চূড়ান্ত অসন্তোষ। আর হবে নাই বা কেন, হাজার হাজার টাকায় কাটা টিকিটের ৫০-এর গ্যালারি যার জন্য এই খরচ করেছিল তাঁরই একঝলক দেখতে পারল না। তাদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। কিন্তু কেন এমনটা ঘটল, কে দেবে তার জবাব। ঠিক তার কয়েকঘণ্টার মধ্যে হায়দরাবাদে অসাধারণ শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান করলেন সেই মেসি, সুয়ারেজ, ডি পলরা। গ্যালারিতে বল পাঠালেন। নিজেদের মধ্যে বল নিয়ে খেললেন। কোনও মন্ত্র্রী-সান্ত্রীর দল তাঁদের পরিবার নিয়ে মেসির ঘাঁড়ের উপর উঠে পড়েনি। বিরক্ত মেসি মাঠ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এটা স্পষ্ট ছিল, তিনি যতক্ষণই থাকুন না কেন এই পরিস্থিতি বদলাবে না। এই নক্কারজনক ঘটনার লজ্জা বয়ে বেড়াতে হবে কলকাতাকে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle