সাদা বরফে ঢেকেছে Saudi Arabia-র ধূসর মরুভূমি, কী বলছেন বিজ্ঞানীরা

Saudi Arabia

প্রচণ্ড গরম এবং বিশাল মরুভূমির এই দেশ যে কখনও এভাবে বরফে ঢেকে যেতে পারে তা কে ভেবেছিল। কিন্তু প্রকৃতির আমূল পরিবর্তন সেই ছবিই তুলে ধরেছে। যা ভাবাচ্ছে ভূবিজ্ঞানীদের। সৌদি আরব (Saudi Arabia) এক অস্বাভাবিক শীতকালীন পরিস্থিতির সাক্ষী থাকছে এবার। তুষারপাত, ভারী বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় দেশের বিশাল অংশ জুড়ে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা এবং টেনশনের জন্ম দিয়েছে। এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁরা মোটেও অভ্যস্ত নন।

এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে দিল যে, জলবায়ু পরিবর্তন এমন অঞ্চলগুলিতেও অস্বাভাবিক আবহাওয়ার জন্ম দিচ্ছে, যা এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নয়। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে মরুভূমির দেশ ঠান্ডা হয়ে গেল?
উত্তর সৌদি আরবে অপ্রত্যাশিত তুষারপাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরেই, যা তাবুক প্রদেশের পর্বতমালাগুলোর চেহারায় নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে নানা গবেষণা।


জেবেল আল-লাউজের প্রায় ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি উঁচু স্থান ট্রোজেনা, সেখানে হালকা বৃষ্টি হতেই বরফের চাদরে ঢেকে গিয়েছে। ধূসর বালির দেশ যখন চাদা বরফের চাদরে ঢেকে যায় তখন যেমন অদ্ভুত প্রাকৃতিক শোভার জন্ম দেয়, তেমনই চিন্তার ভাঁজও ফেলে স্থানীয়দের কপালে। কারণ সৌদি আরবের মতো গরম জায়গায় বরফের পোশাক তো নেই। যদিও শীতে সেখানে জমিয়েই ঠান্ডা পড়ে। যে কোনও মরুভূমিতে যেমনটা হয়, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। তবে বরফ?

হাইল অঞ্চলের কিছু অংশ, যার মধ্যে হাইল শহরের আশেপাশের এলাকাও চলে গিয়েছে বরফের দখলে, সেখানেও তুষারপাত দেখা গিয়েছে—যা এই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে একটি বিরল ঘটনা তো বটেই।

ভোরবেলা কিছু কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে, যা উঁচু জায়গাগুলো জুড়ে বরফ জমার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। যেন সুইজারল্যান্ডের পাহাড়। এই শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতও হয়েছে গত কয়েকদিন, সেটাও ততটাই বিরল ঘটনা এই দেশের জন্য।

বীর বিন হেরমাস, আল-আইনাহ, আম্মার, আলউলা গভর্নরেট, শাকরা এবং এর শহরতলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, অন্যদিকে রিয়াদ, কাসিম এবং পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ এই শৈত্যপ্রবাহ কেন?

ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেটিওরোলজি (এনসিএম) অনুসারে, রিয়াদের উত্তরে আল-মাজমাআহ এবং আল-ঘাটেও তুষারপাত দেখা গিয়েছে, যেখানে খোলা জায়গা এবং উঁচু জায়গাগুলোতে বরফ জমেছে। এনসিএম-এর সরকারি মুখপাত্র হুসেন আল-কাহতানি বলেছেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একটি ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করে বৃষ্টিবাহী মেঘের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে।

তিনি আরও বলেন, আরও কয়েকদিন তাপমাত্রা কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশে। কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের সাবধানে গাড়ি চালাতে এবং বন্যাপ্রবণ উপত্যকা এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করেছে।

বরফে ঢাকা সৌদি পাহাড়ের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে, আল-মাজমাআহ এবং আল-ঘাটে এই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত সপ্তাহে রাজধানী রিয়াদের কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সব স্কুলকে অনলাইন ক্লাসের নির্দেশ দিয়েছে।

যদিও আবহাওয়াবিদরা এই ঘটনাটিকে নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতির ফল বলে মনে করছেন, তবে এই ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তি জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে পরিচিত আবহাওয়ার ধরণগুলোকে নতুন রূপ দিচ্ছে, এমনকি যে অঞ্চলগুলো দীর্ঘকাল ধরে তাপ ও ​​খরার জন্য পরিচিত, সেখানেও, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

সৌদি আরবের এই বিরল তুষারপাত আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীলতা নিয়ে আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকবার পরিলক্ষিত হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে (ইউএই) অপ্রত্যাশিত শীতকালীন বৃষ্টি, দক্ষিণ এশিয়ায় রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহ, সাধারণত শুষ্ক মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এবং ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশে অস্বাভাবিক তুষারপাতের ঘটনা—এই সবকিছুই দেখিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া কীভাবে অচেনা হয়ে উঠছে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle