জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: পাকিস্তান নির্বাচন ঘিরে অনেকদিন ধরেই উত্তপ্ত হচ্ছিল দেশ। তার মধ্যে নওয়াজ শরিফ ও তাঁর কন্যার গ্রেফতার সেই উত্তাপে ঘি ঢেলে নতুন করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যে দিন গ্রেফতার হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সেই দিনই এক রাজনৈতিক পার্টির র্যালিতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় অনেকের। সেই ধারা অব্যহত থাকল নির্বাচনের দিনও।
নির্বাচন শুরুর একঘণ্টা পর ভোটের লাইনে আবারও আত্মঘাতী বিস্ফোরণের শিকার সাধারণ মানুষ। ঘটনাটি ঘটে বালুচিস্তানের রাজধানী কুয়েত্তার ভোসা মান্ডি অঞ্চলে। নির্বাচনী প্রচারের র্যালিতেও বিস্ফোরণ হয়েছিল এই অঞ্চলেই। এখনও যা খবর মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। আরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। তার মধ্যেই ভারতীয় সময় সন্ধে ৬.৪৫ নাগাদ শেষ হয় ভোট গ্রহণ পর্ব।
ভোট শেষে খবর পাওয়া যায় বাতিল হয়েছে স্বয়ং ইমরান খানের নিজের ভোট। কারণ তিনি নির্বাচনের নিয়ম অমান্য করেছেন। ভোট সব সময়ই গোপন রাখার নিয়ম। কিন্তু ইমরান খান রীতিমতো টিভি ক্যামেরার সামনে তাঁর নিজের ভোট দেন। যে কারণে বাতিল হয়ে যায় তাঁর নিজের ভোট। তবে গননা শুরু হতেই দেখা এগিয়ে রয়েছে ইমরান খানের দলই পিটিআই।
It’s now past midnight & I haven’t received official results from any constituency I am contesting my myself. My candidates complaining polling agents have been thrown out of polling stations across the country. Inexcusable & outrageous.
— BilawalBhuttoZardari (@BBhuttoZardari) July 25, 2018
সন্ধে সাতটার কিছু পর থেকে শুরু হয় গননা। দেড় ঘণ্টার মধ্যে খবর আসে এনএ-৯৫-এ তিন হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ইমরান খান। এর পরই জানা যায় ১২টি সিটে এগিয়ে ইমরানের দল। ৫টিতে এগিয়ে পিএমএল-এন। যত সময় গড়িয়েছে এগিয়ে গিয়েছেন ইমরান খান। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সিটে এগিয়ে যাওয়া। রাত ন’টায় খবর পাওয়া যায় ৬৪ সিটে এগিয়ে পিটিআই। এর মধ্যেই মাঝে ২০ট সিটে এগিয়ে আসে ইনডিপেন্ডেন্ট। রাত ৯.১৫ নাগাদ জানা যায় পিপিপি-র কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি এগিয়ে রয়েছেন ৩ হাজার ৪৬১ ভোটে।
ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পাকিস্তানে মৃত ১২৮
১০টার কিছু আগেএ জানা যায় ইমরান খানের দল এগিয়ে গিয়েছে ৭৩ ভোটে। ওপিনিয়ন পোলে প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিল ইমরান খানের পার্টি। গননা শুরু হতেই ট্রেন্ডও সেদিকেই এগোতে থাকে। পিপলস পার্টির বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি রাত ১০.১০এ এগিয়ে যায় ৫ হাজার ২১৮ ভোটে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে এগোতে থাকেন ইমরান খান। রাত সাড়ে ১০টায় তা গিয়ে দাড়ায় ৮৪ আসনে। আধঘণ্টার মধ্যে সেটা হয়ে যায় ৯৭।
Condemnable terrorist attack in Quetta by enemies of Pak seeking to disrupt our democratic process. Saddened by the loss of innocent lives. Pakistanis must defeat the terrorists’ design by coming out in strength to cast their vote.
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) July 25, 2018
রাত সাড়ে ১১টায় দেখা যায় পিটিআই এগিয়ে গিয়েছে ১০২ আসনে। এই সময় খবর আসে পিএমএল-এন-এর এজেন্টকে গননা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগ খণ্ডন করেন ইলেকশন কমিশন। তার পরই তারা রিগিংয়েরও অভিযোওগ তোলে। ততক্ষণে অবশ্য উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে। লাফিয়ে লাফিয়ে তখন বাড়ছে আসনে এগিয়ে থাকার সংখ্যা। রাত পৌণে একটায় ১০৫ আসনে এগিয়ে যায় পিটিআই।
খবর উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চল পুরোটাই দখলে নিয়ে নিয়েছে ইমরান খানের পার্টি। যেখানে পিটিআই-এর অনামী প্রতিনিধিদের কাছে উড়ে গিয়েছে সব বড় বড় নাম। যেমন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভু্ট্টো। শুরুতে যদিও তিনি এগিয়েছিলেনয় পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, আওয়ামি ন্যাশনাআল পার্টির চিফ আসফানদিয়ার ওয়ালি, জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম-এর চিফ মৌলানা ফজলুর ও জামাত-এ-ইসলাম এর চিফ সিরাজুল হকরা হেরে গিয়েছেন অনামী পিটিআই প্রতিনিধিদের কাছে।
শাহবাজ শরিফ জানান, ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার পোল’ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘এই ফল আমরা মানি না। পাকিস্তান ইলেকশন কমিশন ডাহা ফেল। রিগিং হয়েছে।’’ মধ্য রাতের পর থেকে গননার গতি কমে কারণ অনেকেই রিগিংয়ের অভিযোগ তুলতে শুরু করে। যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে সফলভাবে নির্বাচন হয়েছে। মাঝে গননা থামিয়ে পোলিং অফিসারদের সঙ্গেও এই অভিযোগের ভিত্তিতে কথা বলে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গননা যতই মন্থর হোক এগিয়ে ইমরান খানের দলই।