পাল্টে গেল কিলোগ্রাম, তবে পরিমাণে বদল হবে না

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: পাল্টে গেল কিলোগ্রাম-এর হিসেব। চাল, ডাল, সব্জি, ফলমূলের মতো পণ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের ব্যবহার্য বেচা-কেনাতে ওজন করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক একক কিলোগ্রাম বা কেজি। এ বার সেই কেজি-র সংজ্ঞাই বদলে ফেললেন বিজ্ঞানীরা। যদিও সাধারণ মানুষের জীবনে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।

সোমবার ২০ মে ছিল বিশ্ব ওজন দিবস। সে দিন থেকেই পাল্টে গেল কিলোগ্রাম-এর হিসেব। প্রায় ১৩০ বছর পর এই পরিবর্তন আনা হল। ভরের মূল একক কিলোগ্রামের বাটখারা তথা প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়ামের দণ্ড ‘ল্য গ্রঁদ কে’-কে প্যারিসে কাচের ঘেরাটোপে রাখা হলেও সযত্ন মোছামুছিতেও এটি থেকে কিছু পরমাণু ক্ষয়ে যাচ্ছিল। গত বছর নভেম্বরে প্যারিসের কাছে ভার্সেই শহরে ৫০টিরও বেশি দেশের ভোটে  ‘ল্য গ্রঁদ কে’-কে বাতিল করে মাক্স প্লাঙ্কের ধ্রুবকের ভিত্তিতে এক কিলোগ্রাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ মাক্স প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক অঙ্কের নিয়মে মাপা ও নিখুঁত। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৩০ বছর পর সোমবার থেকে গোটা বিশ্বে কিলোগ্রামের নতুন সংজ্ঞা চালু হয়ে গেল।

এর আগে ফ্রান্সের ভার্সাইয়ে ওজন ও পরিমাপ বিষয়ক এক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা কিলোগ্রামের সংজ্ঞা পরিবর্তন করেন। এত দিন প্লাটিনাম ও ইরিডিয়ামের তৈরি একটি সিলিন্ডার আকৃতির সংকর ধাতবের ওজনকে এক কেজি ধরা হয়। ১৮৮৯ সাল থেকে ‘ল্য গ্রঁদ কে’ নামের ওই ধাতব সংকরের ভিত্তিতে পৃথিবী জুড়ে এক কেজির পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তড়িৎ–চুম্বক শক্তির মাধ্যমে বস্তু ওঠা-নামা করানো যায়। কাজেই ওজনের সঙ্গে বিদ্যুতের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কিলোগ্রামের সংজ্ঞা নির্ধারণে বিজ্ঞানীরা প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের (এইচ) দ্বারস্থ হয়েছেন। এতে ওজন, দূরত্ব ও সময় পরস্পর সম্পর্কিত। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ব্রায়ান কিবল সুপার অ্যাকুরেট সেট অব স্কেল উদ্ভাবন করে গিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে পরিমাপ করা সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ বার পালা সময়ের একক সেকেন্ডের সংজ্ঞা বদলের। আগের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত করে সেকেন্ডকে মাপার ব্যবস্থা করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে সেকেন্ড মাপা হয় সিজ়িয়াম পরমাণু দিয়ে তৈরি ঘড়িতে। সিজ়িয়ামের পরমাণু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের আলো শুষে নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই শক্তি তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে ছেড়ে দেয়। ঠিক যেমন আদর্শ অবস্থায় একটি পেন্ডুলাম নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিশেষ একটি স্থানে পৌঁছয়। সিজ়িয়ামের ঘড়িতে আলোর ৯১৯,২৬,৩১,৭৭০ বার স্পন্দন বা দোলনের কালকে এক সেকেন্ড ধরা হয়। কিন্তু পরবর্তী কালে তৈরি হওয়া ‘অপটিক্যাল অ্যাটমিক ক্লক’ অনেক বেশি নিখুঁত সময় দিচ্ছে।

তবে, সংজ্ঞা বদলে গেলেও এক কেজিতে গত কাল যতটা চাল-ডাল মিলেছে আগামী দিনেও ততটাই মিলবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।