৮২ বছরের মাকে মার, ভিডিও ভাইরাল হতেই গ্রেফতার ছেলে

৮২ বছরের মাকে মার

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: ৮২ বছরের মাকে মার । প্রতিদিনই শুনতে পেতেন পাড়ার লোকেরা। কিন্তু কারও ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাইতেন না কেউই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর মেনে নিতে পারেননি প্রত্যাশা রায়চৌধুরী। নিজের মোবাইল ক্য়ামেরায় ঘটনার পুরোটাই ধরে রেখেছিলেন। তার পর তা আপলোড করে দেন তাঁর ফেসবুকে। সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। আর তার সূত্র ধরেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ভুলুপ্রসাদ দেব।

ঘটনা বৃহস্পতিবারের। স্থান নিমতার জোড়া গমকল এলাকার ডিএল মুখার্জী রোডের থার্ড বাইলেন। ছবিটা অনেকটা এরকম। একজন লোক হাতে একটা ভাঙা গাছের ডাল নিয়ে ভিতরে থাকা কাউকে একটা হুমকি দিচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় সেই গেটের সামনে এক বৃদ্ধাকে। রুগ্ন চেহারা। উবুর হয়ে বসে কিছু  একটা মোছার চেষ্টা করছেন।। আর সেই লোকটি ফুল প্যান্ট পরা খালি গা ও কাঁধে গামছা নিয়ে সেই লাঠি দিয়ে সেই বৃদ্ধাকে মেরে চলেছেন। তার মধ্যেই সেই বৃদ্ধা ন্যাকরা হাতে মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসেন বাইরে। একবার পরেও যান লাঠির আঘাতে। এই পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে প্রত্যাশার ভিডিওতে।

এই লোকটি হল এই বৃদ্ধার ছেলে। অবিবাহিত ভুলুপ্রসাদ থাকেন মায়ের সঙ্গে। মায়ের পেনশনেই চলে তাঁর। প্রায় প্রতিদিনই মদ্যপান করে বাড়ি ফেরেন আর মায়ের কোনও কাজে ভুল হলেই তাঁর উপর চরাও হন। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। কিইন্তু ভুলুপ্রসাদের অসভ্যতা দেখে কেউ বলার সাহাস করে উঠতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত রাস্তা দেখালেন প্রত্যাশা। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করেছে নিমতা থানার পুলিশ। তাও মা কিন্তুউ ছেলের বিরুদ্ধে একটিও কথা বলেননি। বৃদ্ধার বক্তব্য, ছেলে একটা ভুল করে ফেলেছে। পুলিশ তাকে ক্ষমা করে দিক। যদিও জামিনে মুক্তিও পেয়ে গিয়েছে ভুলুপ্রসাদ।

ভুলুপ্রসাদের বয়স ৫২। মা শান্তিপ্রভা দেবের বয়স ৮২। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যু হওয়ায় তাঁর সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন বড় ছেলে বিকাশ দেব। কিন্তু তিনি আলাদা থাকেন। আগে কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়েতে বাড়ি ছিল তাঁদের। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সেই বাড়ি ভাঙা পড়ে। সেখান থেকে যে টাকা পেয়েছিলেন তা ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন বৃদ্ধা। তা দিয়েই নিমতায় এই বাড়ি তৈরি করে ভুলু প্রসাদ। স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা অনেকবার সাবধান করেছেন ভুলুপ্রসাদকে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। প্রায় রাতেই বাড়ির ভিতর থেকে মায়ের চিৎকার শোনা যেত।

লোকাল ট্রেনে প্রকৃতির ছোঁয়া

যার ভিডিওর জেরে এত কাণ্ড সেই প্রত্যাশা জানিয়েছেন, ‘‘প্রায় দিনই মায়ের উপর এ ভাবে অত্যাচার চালাত ছেলে। কিছু বলতে ভয় লাগত। কিন্তু শাস্তি তো পেতেই হত ওকে। তাই ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিই।’’ খবর পেয়ে ছুটে আসেন বড় ছেলে বিকাশ। সঙ্গে স্ত্রী শুভ্রাও। তাঁরা জানান, ভাইয়ের অত্যাচারেই তাঁরাও ঘর ছেড়েছিলেন। মাকে বার বার তাঁদের সঙ্গে যেতে বললেও তিনি ছোট ছেলেকে ছেড়ে যেতে চান না। তাই খবরা খবর নেওয়াও কমিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখন থেকে নিয়মিত খবর নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন তাঁরা। এর পরও কী কমবে এই অত্যাচার?

এর আগে একইভাবে ভাইরাল হয়েছিল শ্বাশুরির উপর ছেলের বৌয়ের অত্যাচার। এই একইভাবে অত্যাচার দেখতে দেখতে সহ্য করতে না পেরে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছিলেন পাশের বাড়িরই একজন। আবারও সেই একইভাবে সামনে এল আরও এক অত্যাচারের চিত্র খোদ শহরের বুকেই।