উল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা খুনের ঘটনায় রহস্য আরও বাড়ল, মিলল প্রেমিকের দেহ

উল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা পালংদারউল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা পালংদার

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: উল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা পালংদারের খুনের ঘটনায় ফের রহস্য দানা বাঁধল। শনিবারই ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় আশিস যাদব নামে এক যুবককে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাইপাসের ধারে নোনাডাঙা খাল থেকে একটি বস্তাবন্দি পচনধরা দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আশিসের দাবি, ওই দেহটি বলরাম কেশরী নামে এক যুবকের। তিনিও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা।

কে এই বলরাম কেশরী? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্চনা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে তারা জানতে পেরেছিল, রাঁচির বাসিন্দা বলরামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল অর্চনা পালংদারের। তবে উদ্ধার হওয়া দেহটি বলরামের কি না তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাঁচিতে খবর পাঠানো হয়েছে। বলরামের পরিবারের লোকজন এসে দেহ শনাক্ত করবেন। তার পরেই জানা যাবে, দেহটি আদৌ বলরাম কেশরীর কি না!

আশিস যাদব এই বস্তাবন্দি দেহের কথা কী ভাবে জানলেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আশিস যাদব ধর্মতলার কাছে একটি হোটেলের কর্মী। আশিসের দাবি, অর্চনা এবং বলরাম আটলান্টা নামের ওই হোটেলে তিন দিন ছিলেন। সেখানেই দু’জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার পর সেই দেহ হোটেলের কর্মীরাই বস্তাবন্দি করে লোপাট করেন। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে আশিসের বয়ান বিশ্বাস করেনি। তাঁকে আরও জেরা করে, তাঁরই কথার সূত্র ধরে শেষে একটি দেহ উদ্ধার হয় এ দিন।

অর্চনা পালংদার সারাতে গিয়েছিলেন মোবাইল, পাওয়া গেল নিথর দেহ… নেপথ্যে কী?

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা অর্চনা পালংদার। ২০ তারিখ তাঁর দেহ উদ্ধার হয় চৌবাগা লকগেটের কাছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অর্চনার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। আর সেখান থেকেই উঠে আসে বলরামের নাম। অর্চনার মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে পুলিশ ঝাড়খণ্ডে বলরামের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন জানা যায়, বলরামও ওই দিন থেকে নিখোঁজ। এর পর দু’জনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা হয়। দেখা যায় ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁরা ধর্মতলার কাছে একটা জায়গায় ছিলেন। সেই লোকেশনে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন আটলান্টা হোটেল।

এর পর হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা কোনও তথ্য দিতে পারেননি। এর পর তদন্তকারীরা ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তখনই জানা যায় আশিস যাদবের নাম। তিনি ওই হোটেলের কর্মী, কিন্তু ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আশিস হোটেলেই আসেননি। এর পর আশিসকে ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জেরায় আশিস জানায়, বলরাম এবং অর্চনা তাঁদের হোটেলে ১৭ সেপ্টেম্বর ওঠেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। কিন্তু, ১৮ তারিখ সকালে তাঁদের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা অন্য চাবি দিয়ে খুলে দেখা যায়, বলরাম এবং অর্চনার দেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে। এর পর হোটেলের ঘাড়ে দায় আসবে, এই ভেবে নাকি দেহ লোপাটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর গোটা কাজটা করেন আশিস।

আশিসের বয়ান এখনও পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি পুলিশের কাছে। তবে, একটি দেহ তাঁর দেওয়া তত্যের উপর নির্ভর করে মিলেছে বলে পুলিশ একটু ধন্দে। ওই দেহ বলরামের হলে বিষয়টা আরও পাকাপোক্ত হবে।

আশিসের গ্রেফতার হওয়া, তাঁর বয়ান এবং একটি দেঙ উদ্ধারের ঘটনায় ফের অর্চনার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ওই গৃহবধূর হত্যা মামলায় রহস্য আরও ঘনীভূত হল।