ঘোর সঙ্কটে শহরতলীর মেট্রো, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে না বিটি রোড চলছে দ্বন্দ্ব

কলকাতা মেট্রো

সঞ্চয়ণ তপাদার, কলকাতা


এ বার ঘোর সঙ্কটে শহরতলীর মেট্রো ।  কথা ছিল বরাহনগর থেকে ব্যারাকপুরের মেট্রো চলবে বিটি রোড ধরেই। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা বদলে করা হয় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে। জায়গার অভাব বিটি রোডে। কিন্তু এই বদল এত কোটি টাকার প্রকল্পের আদৌ কি কাজে লাগবে? এই প্রশ্ন এখ উঠতে শুরু করেছে। মেট্রো রেল কর্তারাই এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তাঁদের সন্দেহ এতকোটি টাকার একটা প্রকল্প যদি বিটি রোডের বদলে কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়েতে চলে যায় তাহলে তা চূড়ান্ত পরিমাণে বিফলে যাবে।

বিটি রোড এই শহরের সব থেকে ব্যস্ততম রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন তাঁদের আধঘণ্টার রাস্তা পেড়তে সময় লাগে দু’ঘণ্টা। সেই রাস্তার উপর চাপ কমাতে এবং সাধারণ মানুষের দ্রুত এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে যে সুরাহা হত সেটা কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়েতে নিয়ে গেলে হবে না। কারণ, ওই রাস্তার উপর এত চাপ নেই। বরং খুব কম মানুষই প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য ওই রাস্তা ব্যবহার করেন।

সম্প্রতি পরিবহন ভবনের সঙ্গে মেট্রো রেলের দীর্ঘ আলোচনার পর মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিটি রোডের চারপাশে যাঁরা থাকেন তাঁদের যাতায়াতে অনেকবেশি দ্রুততা দরকার। যেটা মেট্রো দিয়ে থাকে। কিন্তু রাজ্য সরকার চাইছে এই মেট্রো পরিষেবা কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে হোক। যা খুব বেশি মানুষের কাজে লাগবে বলে মনে হয় না।’’ রাজ্য সরকারের তরফে পরিবহণ দফতরের উপরই এই মেট্রোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেট্রো রেলের এই নতুন করিডরের পরিকল্পনা রেল বিকাস নিগম লিমিটেডকে জমাও দেওয়া হয়েছে।

বরাহনগর-ব্যারাকপুর মেট্রো প্রকল্পের জন্য ২০০৯ সালে ২০৭০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত মাত্র ৪০ কোটি টাকাই খরচ করতে পেড়েছে প্রকল্পে। দরপত্রের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ২০১২তেই। সেই সময় বিটি রোডে মেট্রো রেলের কাজ করা নিয়ে আরও একটা ভয় কাজ করছিল। এই বিটি রোডের তলা দিয়ে ছ’টি জলের পাইপ লাইন গিয়েছে। যার মাপ ৪২ থেকে ৭২ ইঞ্চি। তার মধ্যে রয়েছে পলতা ওয়াটার ওয়ার্কস এবং টালা রিজার্ভার। দুটোই শহর ও শহরতলীর মূল জলের সরবরাহের লাইন।

পাঁচ বছরেও কোনও কাজ শুরু না হওয়ায় রাজ্য পরিবহণ দফতর রাইটসকে দায়িত্ব দেয় বিকল্প পথ বের করার। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকেও চাপ দেওয়া হয় এই প্রকল্পের বিষয়ে। এর পরই উঠে আসে কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ের নাম।  রেল দফতর ইতিমধ্যেই একটি ফরাসি ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছে কোনও জলের পাইপলাইনের ক্ষতি না করে যদি মেট্রোর কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। এর মধ্যেই উঠে এসেছে লোকাল ট্রেনের যাত্রী যারা দমদম থেকে মেট্রো ব্যবহার করেন। সেই ট্রেন রুটও বিটি রোডের কাছে। কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে দুরে। বিটি রোড ও কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ে প্যারালাল রাস্তা। দুরত্ব ২.৫ থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে। কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ের আশপাশে কোনও মাস ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নেই।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে

রাইটসের স্টাডি রিপোর্ট বলছে নোয়াপাড়া থেকে নিমতা হয়ে মেট্রোর লাইন গিয়ে পড়বে কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়েতে। এর পর উত্তরদিকে যাবে ১৫ কিলোমিটার। এর পর বাঁ দিকে ব্যারাকপুর-বারাসাত রোড ধরে ব্যারাকপুরে পৌঁছবে। সেটা ৫ কিলোটার। দমদম থেকে বরানগরের মেট্রোর রাস্তা ৪.৪৭ কিলোমিটার যেটা ২০১০-১১তেই অনুমোদন পেয়ে গিয়েছিল ২২৭.৫৩ কোটি টাকার। দমদম থেকে নোয়াপাড়ার দুরত্ব ২.০৯ কিলোমিটার। বরাহনগর থেকে ব্যারাগকপুরের দুরত্ব ১২.৫ কিলোমিটার আর বরাহনগর থেকে দক্ষিণেশ্বরের দুরত্ব ২ কিলোমিটার। যার জন্য ২০৬৯.৬ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল। এই বছরই দক্ষিণশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চালু হয়ে যাওয়ার কথা।