শীতলকুচি বুথ নম্বর ১২৬, একটা ভোট আর অনেকগুলো জীবন

শীতলকুচি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: শীতলকুচি জ্বলছে, শীতলকুচি কাঁদছে, শীতলকুচি ক্ষোভে ফুটছে— একটা ভোট কেড়ে নিল চার চারটে জলজ্যান্ত জীবন। মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল সব। কাছের মানুষদের সামনেই গুলি এসে এফোঁর ওফোঁর করে দিয়ে গেল বুকগুলো। যে বুকে হয়তো ছিল অনেক আশা। সে জন্যই তো ভোটের সকালে ভোট কেন্দ্রের সামনে হাজির হয়েছিলেন ওঁরা।

বলা হচ্ছে ১০ এপ্রিল আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর সেই গুলিতেই মৃত্যু হয় ওই চার জনের। তার ঠিক চারদিন পর একটি ভিডিও সামনে উঠে এসেছে সেই দিনের ঘটনার। যদিও জাস্ট দুনিয়া সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে ওই ভিডিওতে যে দৃশ্য, যে আর্ত্যনাদ ভেসে উঠেছে তা লেখা থাকবে বাংলার ভোটের ইতিহাসে।

সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মানুষের ছোটাছুটি। লাঠি হাতে মানুষের ঘোরাঘুরি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শোনা যায় গুলির আওয়াজ, রক্তাক্ত দেহ আর তারপরই শীতলকুচির আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে যন্ত্রণার অজস্র ছবি। কান্নায় ভেঙে পড়া পরিজনদের হাহাকার। বন্ধ হয়ে যায় কোচবিহারের ওই কেন্দ্রের ভোট। তিন দিন সেখানে নেতা-নেত্রীর ঢোকা নিষিদ্ধ করে কমিশন। কিন্তু থেমে থাকেনি এই মৃত্যু নিয়ে তরজা।

দোষারোপ পাল্টা দোষারোপের পালা আজও চলছে। চতুর্থ পর্যায়ের ভোট হয়ে গিয়েছে। চতুর্থ পর্যায়েই ভোট ছিল শীতলকুচিতে। ১২৬ নম্বর বুথে ভোটারের সংখ্যা ৯০০, বেশিরভাগই মুসলিম।

স্থানীয়দের থেকে শোনা তথ্য অনুযায়ী ১৯ বছরের চাইমূল হক কলেজে ভর্তি হতে পারেননি টাকার জন্য। ভোট দিতে গিয়েছিলেন। ২৮ বছরের মনিরুল জামান গ্যাংটকে শ্রমিকের কাজ করতেন। টাকার অভাবে তিনি ছ’মাসের কন্যা সন্তানকে দেখতে আসতে পারেননি আগে। অপেক্ষা করছিলেন ভোট দিতে এসেই দেখবেন। বুধবার সেই ছ’মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে মাথায় ঠেকাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। ওই ছোট্ট শিশু জানতেই পারল না কত বড় অঘটন ঘটে গিয়েছে তার পরিবারে।

হামিদুল হক দিনে ৩০০ টাকার বিনিময়ে মাথাভাঙ্গায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একটু ভাল রাখার জন্য। আর ১৯ বছরের নুর ইসলাম ওই বুথ লাগোয়া জমিতেই কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ভোট দিতেও যাননি তিনি। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে দাঁড়িয়েছিলেন।

কে জানত শীতলকুচির ওই শান্তিপ্রিয় গ্রাম এভাবে ভোটের দাপটে শ্মশানের চেহারা নেবে। কে জানত, হারিয়ে যাবে চারটে প্রান। গনতান্ত্রিক অধিকারই প্রয়োগ করতে চেয়েছিল সেখানকার বাসিন্দারা। তা আর হল কোথায়!

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)