তথ্যচিত্র পৃথিবী ফিরবে পৃথিবীতেই কঠিন সময়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়

তথ্যচিত্র পৃথিবী ফিরবে পৃথিবীতেই কঠিন সময়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়তথ্যচিত্র পৃথিবী ফিরবে পৃথিবীতেই কঠিন সময়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়

তথ্যচিত্র পৃথিবী ফিরবে পৃথিবীতেই ভারতীয় ফুটবলের একঝাঁক চেনামুখের আশ্বাস— যা এই কঠিন সময়ে মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে পারে। যখন সুনীল ছেত্রী থেকে ভাইচুং ভুটিয়া এমনকি ভারতীয় ফুটবলের তাবড় তাবড় চেনামুখ সদর্পে বলে ওঠেন, ‘‘আমরা ফিরবই…’’ তখন নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পাওয়া যায়। আর সেই কাজটাই কয়েক মিনিটের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন পরিচালক। নিজেই এই কর্মকাণ্ডের কথা জানালেন শিবম দাস


আমরা যারা সরাসরি আর্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি না, তারা যদি প্রত্যেকে নিজেদের কাজ, শিল্পকর্ম দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াই, তা হলে ভেঙে পড়া ওই মানুষগুলোকে মনোবল জোগানো যায় । যদিও এটা আমার প্রথম ডকুমেন্টারি নয়। হয়তো, মোহনবাগানের প্রয়াত সভাপতি গীতানাথ গাঙ্গুলিকে নিয়ে আমি যে ডকুমেন্টারিটা বানাচ্ছি, তার পরিধি ও পরিসর অনেক বেশি। তবে ভারতীয় ক্রীড়াজগতের সঙ্গে জড়িত একঝাঁক তারকাকে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা আমার কাছে এই প্রথম। যে হেতু একটি সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছিলাম, তাই কোনও ফুটবলার বা কর্তাই আমাকে ফিরিয়ে দেননি।

এ ক্ষেত্রে অনেক ছোট ছোট বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছে। মুখ দেখানোর সময় পরিধি নিয়ে যদি কেউ মনোক্ষুণ্ণ হন, তবে তার দায় বর্তায় পরিচালকের উপরেই। টেকনিক্যালি সব থেকে বড় সমস্যা ছিল, ওঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের বাড়ি থেকে ভিডিও করে আমাদের পাঠিয়েছেন। যে হেতু ওঁরা কেউই পেশাদার জগতের অভিনেতা নন— তাই লাইট, ফোকাস কিংবা সাউন্ডের গুণগত মান নিজের মনের মতো হবে না, সেটা আগেই জানতাম। এডিট করার সময় প্রথমে একটু ঘাবড়েও গিয়েছিলাম। সবাইকে ল্যান্ডস্কেপ মোডে ভিডিও পাঠানোর নির্দেশ দিলেও, অনেকেই ফোন থেকে পোট্রেট মোডে ভিডিও করেই পাঠান। তাই ভিডিওগুলোকে এক জায়গায় করা ও ডকুমেন্টারির চেহারা দেওয়া, আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ ক্ষেত্রে আমার সহযোগী প্রীতম ঘোষ ও সম্পাদক অর্পণ কুণ্ডু সাহায্য না করলে কাজটি করা সম্ভব হত না।

এ বার আসি স্ক্রিপ্টের বিষয়ে। পশ্চিমবঙ্গ আজ শুধুমাত্র করোনাতে নয়, আমপানেও চরম ভাবে বিপর্যস্ত। তাই সংলাপ লেখার সময় এই দুটো বিষয়কেই মাথায় রাখতে হয়েছিল। শুধু মানুষ নয়, সমাজের অন্য পশুদেরও যেন আমরা মানুষের মতো আগলে রাখি, তা-ও মাথায় রেখেছিলাম । প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছিল, যে হেতু বাংলার মানুষের জন্যই মূলত এই ভাবনাটা, তাই বাংলা ভাষাতেই পুরো বিষয়টি হোক। কিন্তু মজিদ বিস্কর, ব্যারেটো, বিকাশ জাইরু , তুলুঙ্গা বা জোসেবা বেইতিয়াদের দিয়ে বাংলা বলানোটা খুব সমস্যার ও অসম্ভব ছিল। সবাইকে দুটো করে লাইন আমি হোয়াটস্যাপে পাঠাই। সুনীল ছেত্রী বলল, বাংলা উচ্চারণগুলো যেন আমি ইংরাজিতে লিখে পাঠাই। ও বাংলাতেই যা বলার বলবে। প্রতিশ্রুতি মতো, মিনিট পনেরোর মধ্যেই ও ভিডিওটি পাঠিয়ে দেয়। আমরা চেয়েছিলাম ময়দানের সবাই সমান ভাবে এগিয়ে আসুক। মোহনবাগানের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত, ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার, এটিকের কর্ণধার উৎসব পারেখ— সকলেই আমাদের এই উদ্যোগের পাশে থেকেছেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকর্তা নিজে হোয়াটস্যাপে ব্যবহার করেন না, তা সত্ত্বেও অন্যের মোবাইল থেকে আমাদের ভিডিও বার্তা পাঠান। দেবাশিস দত্তেরও এই ভিডিও পাঠাতে কোনও এক সমস্যা হচ্ছিল, উনিও বারংবার চেষ্টা করে আমাদেরকে ওঁর বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন। উৎসব পারেখ অন্যতম ব্যাস্ত মানুষ, তবে এক বার বলাতেই উনি রাজি হয়ে যান। আমার কাছে প্রাপ্তি এগুলোই।

দেখুন সেই তথ্যচিত্র…

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-এটিকে দল নির্বিশেষে আজ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছে, সেটাই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওনা। দু’জনের কথা আলাদা করে বলা উচিৎ, এক জন ফেডারেশন সচিব কুশল দাস ও অন্য জন আইলিগ সিইও সুনন্দ ধর। ওঁদের দিয়ে আমার লেখা স্ক্রিপ্ট বলানো, সত্যিই চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল। তবে ওঁরা খুব সহজেই বিষয়টি একবারেই উতরে দেন।

মজিদ বিস্কর বলেছিলেন, উনি নিজে ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন না। তবে উনি ওঁর বন্ধুকে দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করে নিশ্চয়ই পাঠাবেন। কথা মতো , উনি দু’ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু দু’জনের জন্য লিখতে গিয়ে আমাকে একটু ভাবতে হয়েছিল, এক জন মেহতাব হোসেন, অন্য জন নবাব ভট্টাচার্য। ভাল করে ভিডিওটি দেখলে বুঝবেন, ও দুটো লাইন ওঁদের জন্যই লেখা।


জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

সাংবাদিক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আবার আমি কেন? ফুটবলাররাই তো আছেন।’’ তবে আমার মনে হয়, ক্রীড়াসংবাদিকরাও এই সিস্টেমের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তাই অনিলাভদা, দুলাল দে, পার্থ রুদ্র, শিবাজি চক্রবর্তী, প্রিয়ম সেনগুপ্তকে এই ভিডিওটার স্বার্থে পাশে চেয়েছিলাম । ওঁরা আমাকে হতাশ করেননি । বাইচুং ভুটিয়া, সঞ্জয় সেন, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দেবজিৎ মজুমদার, অর্ণব মণ্ডল যে এত সহজেই এই কাজটা সহজ করে দেবে, তা আন্দাজ করিনি। শুধু একটাই আফসোস, আইএফএ সচিব জয়দীপদা এই ভিডিওটির জন্য সময় বার করতে পারেননি। তুলুঙ্গাকে একটা গান করে পাঠাতে বলেছিলাম, ও নিজের মেয়েকে পাশে বসিয়ে মিজো ভাষায় ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ গেয়ে পাঠায়। ব্যারেটো নিজের ছেলেকে কোলে বসিয়ে বার্তা পাঠায় কলকাতার জন্য। সব মিলিয়ে এই ডকুমেন্টারিটা যেন হয়ে উঠল, ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান…’

(আরও ফিচারের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম সুনীল ছেত্রীই হবে এই ভিডিওটির মুখ। পরিকল্পনা মতো ওকে দিয়ে ভিডিওটি শুরু ও শেষ করতে পারায় পরিচালক হিসাবে আমি তৃপ্ত। তবে সব থেকে বড় প্রাপ্তি হল ডকুমেন্টারিটি প্রকাশিত হওয়ার পর বহু মানুষের ফোন, মেসেজ, শুভেচ্ছাবার্তা— মনে হল, চার দিনের রাতজাগা পরিশ্রম স্বার্থক। তবে এর জন্য এক জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যার ভাবনা, উদ্যোগ ও ভরসা আমাকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, তিনি বিখ্যাত ক্রীড়াসাংবাদিক সরোজ চক্রবর্তী। আমাদের সত্যিই এটাই বিশ্বাস করার সময়, ‘পৃথিবী ফিরবে পৃথিবীতেই’…