নবনীতা দাশগুপ্ত
শর্ট ফিল্ম বা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি নিয়ে বাঙালির একটা আগ্রহ ছিলই। ইদানীং সেই আগ্রহে যেন জোয়ার দেখা দিয়েছে। তাতে ফিল্ম করিয়েদের মধ্যে একটা উন্মাদনা এসেছে। তাঁদের কাজেও অসম্ভব উদ্যম দেখা দিয়েছে। তারই ফসল হিসাবে খুব শীঘ্রই তিনটি ভিন্ন ধারার শর্ট ফিল্ম বাজারে আসছে।
অভিজিৎ রায় বাংলা সিনেমার সঙ্গে জড়িত দীর্ঘ দিন। ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’, ‘তৃতীয় অধ্যায়’-এর মতো ছবিতে শুধুমাত্র প্রযোজনাই নয়, অভিনেতা হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। সৃজনশীলতার নানান দিকে অভিজিৎ-এর নজর সর্বদা। তরুণ প্রতিভাদের তিনি বরাবরই উৎসাহ জুগিয়ে চলেন। তেমনই কিছু তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। তাতে বিষয় ভাবনা, পরিচালনার পাশাপাশি নিজে অভিনয়ও করেছেন তিনি।
তাঁর এই প্রয়াসে পাশে রয়েছেন সাহেব, সুরজিৎ, শ্রীতমা, প্রিয়ঙ্কা, মধুবন্তীদের মতো এক ঝাঁক তরুণ তুর্কি। অভিনয় থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য, ক্যামেরা, সৃজনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই তরুণ দল। বর্তমান বাংলা থিয়েটারের দুই প্রতিভাবান অভিনেতা গুলশানারা খাতুন ও হিমিকা পাত্রকে দেখা যাবে অভিজিৎ নির্মিত এক শর্ট ফিল্ম ‘আগমনীর অবগাহন’-এ। খুব শীঘ্রই দু’টি সামাজিক সমস্যা নিয়ে তৈরি অভিজিৎ-এর শর্ট ফিল্ম ‘আগমনীর অবগাহন’ ও ‘তিনের নামতা’ দেখা যাবে বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তার পর তা আসবে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে স্টার জলসায় ‘ভ্যাবাচ্যাকা সিজন টু’
‘তিনের নামতা’তে বয়ঃসন্ধি কালের এক জটিল মনস্তত্বের প্রতিফলন দেখা যাবে। অন্য দিকে, ‘আগমনীর অবগাহন’ ফুটিয়ে তুলবে আধুনিক যুগে সামাজিক অবক্ষয় ও সমাজে নারীদের অবস্থানের কথা এক সাধারণ মানুষের নজরে। শুধু এই দু’টি শর্ট ফিল্ম শুধু নয়, আগামী দিনে এই তরুণ তুর্কীদের নিয়ে আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে অভিজিৎ রায়ের।
অন্য দিকে, পরিচালক সব্যসাচী ভৌমিক শেষ করলেন তার ষষ্ঠতম শর্ট ফিল্মের কাজ। এর আগে ‘বিবেক’, ‘এসকেপ রুট’, ‘সিক্সথ অগস্ট’, ‘উই আর লকড’, ‘মিরর অব রে-স’— নামের একাধিক শর্ট ফিল্ম বানিয়েছেন তিনি। এ বার তৈরি করলেন ‘সব রাত্রি কাল্পনিক’। এই ছবির কল্পনা সুমন ধারা শর্মার। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা সব্যসাচী ভৌমিক।
‘সব রাত্রি কাল্পনিক’-এর গল্প শোনালেন সব্যসাচী। বৃষ্টিভেজা মধ্যরাতে এক আগন্তুক আশ্রয় চান কলকাতার এক পুরনো বাড়িতে। এক মহিলা দরজা খুলে তাঁকে ভিতরে নিয়ে যায়। কথা হয় দু’জনের মধ্যে। দু’জনের ভিতরের মানুষটা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। আগন্তুক বলেন তাঁর অতীতের কথা। উঠে আসে এই কথাও যে, তিনি কী ভাবে খুন করেছিলেন বাড়িওয়ালি ম্যাডাম ডি কোস্তা এবং তার অসমবয়সি প্রেমিকা মার্গারেটকে। যে মহিলার বাড়িতে তিনি আশ্রয় নেন তাঁর নাম ইলোরা। তাঁর বাবাকেও চেনা লাগে আগন্তুকের। সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনও খবরের সূত্রে তাঁকে চেনা লাগে। ইলোরা সেই প্রসঙ্গ চাপা দিতে চায়। এর পরেই জমে উঠবে নাটক। আর সেটাই চমক।
ফ্রয়েডিয়ান সাবকনশাস কী ভাবে মানুষের মনস্তত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তারই প্রতিফলন থাকবে এই ছবিতে। ছবিতে দু’টি মাত্র চরিত্র। যেখানে অভিনয় করেছেন কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায় এবং অমৃতা চট্টোপাধ্যায়।
সব্যসাচীর কথায়, ‘‘ছবিতে খুন হওয়া বা না হওয়ার মধ্যেকার দ্বন্দ্বেই ফ্রয়েডিয়ান সাবকনশাসের অস্তিত্ব। যা ছবিটিকে মনস্তাত্বিক যাত্রার পাশাপাশি এক অন্য পৃথিবীর গল্পও বলে। যেখানে রিয়েল-আনরিয়েল-এর টেনশন তৈরি হয়।’’ এ ছবির সহ-পরিচালক তুহিন ঘোষ। ক্যামেরা সামলেছেন রোজ আলম।