সম্প্রীতি দত্ত: একরাশ ভালবাসা আর নস্টালজিয়ায় মেশা শহরটির নামই কলকাতা। সমগ্ৰ কলকাতার মধ্যে উত্তর কলকাতাকে নিয়ে বাঙালীর সবসময় একটা আবেগের জায়গা রয়েছে। এটি শুধু শহর নয়, বলা ভাল ঐতিহ্যের খনি। এই খনিরই অন্যতম অমূল্য রত্ন হল কলেজ স্ট্রিট (College Square In Memory)। প্রতিটি বাঙালিই জীবনের কোনও না কোনও সময় একবার হলেও কলেজ স্ট্রিটে গিয়েছে। ঐতিহ্যের এই টান বাঙালীর পক্ষে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
কলেজ স্ট্রিট চত্ত্বরে আমার মামার বাড়ি হওয়ায় এই জায়গার সঙ্গে আমার পরিচিতি জন্ম থেকেই। আমার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলেজ স্ট্রিটকেও বদলাতে দেখেছি। কলেজ স্ট্রিট মার্কেট থেকে বর্ণপরিচয় হয়ে ওঠা, আবার কয়েক বছর আগে কলেজ স্কোয়ারে সৌর প্যানেল বসানো—এভাবেই বার বার বদলেছে কলকাতার এই ঐতিহ্য। ছোট থেকেই কলেজ স্ট্রিটকে জানার ও চেনার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু শৈশব মন কী করে বুঝতো কলেজ স্ট্রিটের নস্টালজিয়া। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উপলব্ধি করতে পেরেছি। জীবনের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন রূপে কলেজ স্ট্রিটকে চিনেছি।
বইপাড়া, কফি হাউস, প্যারামাউন্ট ছাড়াও কলেজ স্ট্রিটের আরও একটি আর্কষণীয় জায়গা হল কলেজ স্কোয়ার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোফুটে অবস্থিত কলেজ স্কোয়ার যা আগে গোল দীঘি নামে জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিল। ১৯১২ সালে এই গোল দীঘির আকার পরিবর্তিত করে চৌকো আকৃতি করা হয়েছিল। জলাশয়টির চারিদিকে রয়েছে স্কুল, কলেজ। যেমন কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় ছাড়াও সংস্কৃত কলেজ, হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুল, ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল। যার ফলে পড়ুয়া থেকে প্রৌঢ় সবারই আগমন হয়। বিস্তর এলাকা জুড়ে এই জলাশয় যা বিদ্যাসাগর উদ্যান নামেও পরিচিত। এর চারদিকে বিভিন্ন গেট যা বিভিন্ন দিকের রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত।
ছোটবেলায় কলেজ স্ট্রিট মানেই জানতাম ঘুরতে যাওয়ার জায়গা। বিকেল হতেই দাদুর হাত ধরে কলেজ স্কোয়ারে ঘুরতে যাওয়া। অবাক হয়ে বড় বড় দাদা-দিদিদের সাঁতার দেখা। বিভিন্ন বয়সীর মানুষদের দেখে আনন্দ পাওয়া। ছোট ছোট পায়ে কলেজ স্কোয়ারের চক্কর লাগানো। আর পুজোর সময় কলেজ স্কয়্যারের ঠাকুর দেখা। আমার কাছে ছোটবেলায় এটুকুই গুরুত্ব ছিল কলেজ স্কয়্যারের ((College Square In Memory))।
বড় হওয়ার পর এই জায়গাটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। যখন আমি কিশোরী এই জায়গাটিই এক অন্যরুপে ধরা দেয় আমার কাছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জায়গা তৈরি হয়ে ওঠে কলেজ স্কোয়ার। রবিবার টিউশন শেষে এখানে আড্ডা না দিলে যেন নতুন সপ্তাহের ভার টানার এনার্জিটাই পেতাম না। শুধু টিউশন ফেরত আড্ডাই নয় যখন তখন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার জায়গাও ছিল কলেজ স্কোয়ার। পুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ স্কোয়ারের ঠাকুর দেখা বিশেসত আলোকসজ্জা দেখার আলাদাই উত্তেজনা থাকত।
শৈশব, কৈশরের অনেকটা সময় এখানে কাটালেও এখন আর আগের মত যাওয়া হয় না। নানা ব্যাস্ততার কারণে নিজেদের অজান্তেই আবেগের জায়গার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। তবুও বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই পরিচিত অড্ডাঠেকে। সময় বদলের পাশাপাশি মানুষের স্বাদও বদলে যায়। এখন হয়ত মানুষ কলেজ স্ট্রিটের আড্ডার থেকে শপিংমলে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে। তাই পুরোনো আবেগের জায়গাগুলো দীর্ঘ প্রতিক্ষায় বসে থাকে আগের মতো এক জমজমাট সন্ধ্যার অপেক্ষায়।
ছবি—লেখক
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google