হ্যালোউইন ও ভূত চতুর্দশী… এক ভৌতিক ঐতিহ্যের মিলের গল্প

হ্যালোউইন ও ভূত চতুর্দশী

শুচিস্মিতা সেন চৌধুরী

হ্যালোউইন ও ভূত চতুর্দশী । প্রতিবছর কালী পুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। এক পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশীতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে পরলোক জগতের ভূত-প্রেতরা। বাঙালিরা এই দিন চোদ্দ সাগ রান্না করে আর সন্ধ্যাবেলা চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে এই দিন পালন করে।

মনে করা হয় এই দিন আবির্ভাব হয় আমাদের পূর্ব পুরুষদের। সুতরাং আমরা ভুত চতুর্দশীতে স্মরণ করি চোদ্দ পুরুষদের। চোদ্দ সাগ অশুভ আত্মাকে দূরে সরিয়া রাখে। আর যেহেতু ভুতেরা অন্ধকার পছন্দ করে তাই প্রদীপ জালিয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়।  বা  অন্য ভাবে বলা যায় অশুভ আত্মা আলোর রোশনাই থেকে দূরে থাকে। যেহেতু কৃষ্ণপক্ষে কালী পুজো হয় তাই প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়ে ওঠে প্রাসঙ্গিক।

গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিম দেশের হ্যালোউইন (Halloween) উদযাপনের ছবি। সেখানে মানুষ নানান রকম ভুতুড়ে সাজে উপস্থাপন করছে নিজেদের। খ্রীস্টান মত অনুসারে হ্যালোউইন পালিত হয় ১ লা নভেম্বর। এই দিনটিকে বলা হয় সমস্ত সাধুদের দিন (All Saint’s Day)।

অবনী নামের বাঘিনীকে শেষমেশ গুলি করে মেরে ফেলা হল

হ্যালোউইন এর উৎপত্তি একটি আইরিশ লোক উৎসব সাংহাই (Samhai) থেকে। সাংহাই  কথার অর্থ নভেম্বর। এই উৎসব এক সময় ছিল গ্রীষ্মের সমাপ্তি এবং শীতের সূচনার সন্ধিক্ষণ। সেল্টিক ঐতিহ্য অনুযায়ী এই দিন মিলন হয় দুই জগতের। অর্থাৎ ইহলোক ও পরলোকের।  এই সময় দরজা খুলে যায় দুই পৃথিবীর আর মানুষ আহ্বান করে আত্মাদের। জ্বালানো হয় কুমড়ো দিয়ে তৈরি লণ্ঠন। যার  নাম jack-o’-lantern অর্থাৎ রাতের প্রহরী।

এখন বোঝা যাচ্ছে কোথায় মিল হ্যালোউইন আর ভুত চতুর্দশীর? অদ্ভুত ব্যাপার – পশ্চিম দেশের একটি লোক উৎসব হয়ে উঠল সমগ্র বিশ্বের একটি সাঙ্কেতিক উৎসব। কিসের সঙ্কেত? ভৌতিক শক্তি দমনের বা অন্য ভাবে বললে ভূতেদের সাথে বন্ধুত্ব করার। কিভাবে? ওই যে ভূতেদের মতো সাজ পোশাক। যাতে ওরাও মনে করে আমরা ওদেরই একজন। আমরা চাই যাতে ওরা একটি বিশেষ দিনে এসে আমাদের আশীর্বাদ করেন এবং যাতে খুব্ধ না হন। তাহলেই বিপদ।

ভূত প্রেতে বিশ্বাস সার্বজনীন।  সেই বিশ্বাস থেকেই প্রতি বছর আমরা পালন করি ভূত চতুর্দশী। এই দিনটি খুব পবিত্র। সাধু-সন্ত ও তান্ত্রিকদের  আরাধনা করার  দিন। মজার ব্যাপার হল, একই বিশ্বাসে  ভর করে কেমন মিলে যায় পূর্ব ও পশ্চিম, মিলে যায় খ্রীষ্ট ধৰ্ম  ও হিন্দুত্ব। আর আমরা  শুধু শুধুই তোমার – আমার করে যাই নানান অজুহাতে।