Climate Crisis ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে — যা নিয়ে কোনও আলোচনাই নেই

Climate Crisis

সত্যিই গোটা বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু দূষণ (Climate Crisis) ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ক্রমশ। তার জন্য কে দায়ী, কারই বা দায় রয়েছে এই সমস্যা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার। কেই বা এগিয়ে আসবে এই কাজে নাকি নিজের মুনাফার দৌড়ে বন্ধ হয়ে যাবে খোলা বাতাসে মন খুলে শ্বাস নেওয়ার রাস্তা। আমেরিকা থেকে লিখলেন ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


এই মুহূর্তে প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপ টোঙ্গায় সমুদ্রতলবর্তী আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে কাছের নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সুদূর জাপান, আমেরিকার আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া, এমন কী দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, চিলি এ সব দেশ পর্যন্ত বিশাল সুনামি আছড়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয় হারানোর মুখে। এমন ঘটনা সারা পৃথিবীর পরিবেশবিদদের কাছে যতই ভয়ঙ্কর ও আশঙ্কাজনক হোক না কেন, আমাদের আমেরিকা, ভারত বা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মিডিয়া দেখলে মনে হবে, ক্রিকেট, বলিউড, ঢালিউড, টলিউড, নাচ গান, বিলাসিতা, ফ্যাশন ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনও খবর নেই।

এই হলো আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সঙ্কট — যেখানে বাস্তবতাকে গিলে খেয়েছে কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা বিনোদনের খবর। মানুষকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে অবাস্তবতার সোমরসে, ড্রাগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক শক্তি ও তার বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো ক্লাইমেট চেঞ্জ ও জলবায়ুর বিপর্যয়ের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়। তারা সারা পৃথিবীতে ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করবে, তীব্রভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আরও নানা প্রকার বিষাক্ত ও উষ্ণতা বৃদ্ধিকারী গ্যাস নির্গমন করাবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে তাদের বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করবে।

তারা কোনওভাবেই তাদের মুনাফা বিন্দুমাত্র কমাতে রাজি হবে না, এবং মনুষ্যপ্রজাতি সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হলেও তাদের নিষ্ঠুর লোভের অর্থনৈতিক মডেল বিন্দুমাত্র পরিবর্তিত হবে, এ আশা করা যায় না। এখন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে চীন, ভারত, ব্রাজিল, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার নির্দয়, মানবতাবিরোধী ধনতান্ত্রিক শক্তি। আম্বানি, আদানির মতো ভারতীয় সুপারপাওয়ার এখন বিল গেটস, ওয়াল মার্ট, এক্সন মোবিল, এ্যাপল, জেনারেল ইলেকট্রিক বা আই বি এম’এর মতো উষ্ণায়নের প্রধান কালপ্রিট কর্পোরেট শক্তি।

ঘটনা হল, সারা পৃথিবীতে যত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়, কেবলমাত্র ১০০টি কর্পোরেশন তার ৭১ শতাংশ নির্গমনের জন্যে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। এমন কী মাত্র ২০টি দৈত্য কর্পোরেশন এই নির্গমনের এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান)। এর মধ্যে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি এ্যারামকো যেমন শীর্ষে, মার্কিন কোম্পানি শেভ্রন ও এক্সন মোবিল, রাশিয়ান গ্যাজপ্রম, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, পেট্রো চায়না যেমন আছে, তেমনি আছে কোল ইন্ডিয়া।

এই ২০টি কোম্পানি যদি তাদের কার্বন নির্গমন ও নিষ্কাশন বন্ধ করে সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুচালিত জ্বালানী শক্তির প্রতি ফোকাস রাখত অথবা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কথা ভেবে তাদের বাণিজ্য মডেল মানবিক পথে পরিচালিত করত, আজকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এই ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে যেত না। কিন্তু তারা যেহেতু শুধুমাত্র নিজেদের মুনাফার কথাই ভাববে, তাই এই মডেল পরিবর্তিত হবার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাদের শেয়ার বাজারে ধ্বস নামুক পরিবেশ রক্ষার কারণে, এমন কথা তাদের বোর্ড মিটিংয়ের আলোচনার বাইরে।

(এই লেখার সমস্ত বক্তব্য লেখকের নিজস্ব)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)