পিন্টু মাহাতো, এ বারের কলকাতা লিগে নতুন তারকার লক্ষ্য জাতীয় দল

পিন্টু মাহাতো

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: পিন্টু মাহাতো , জোড়া ডার্বির জোড়া গোলদাতা। সব ডার্বিই নতুন তারকার জন্ম দেয়। এটা কলকাতা ফুটবলে বহুকাল ধরেই হয়ে এসেছে। আবার ডার্বিতে গোল করে তারকা হয়ে যাওয়া বহু ফুটবলার ক্যামেরার ঝলকানি, প্রচুর লাইম লাইটের আড়ালে হারিয়ে যায় বছর ঘুরতেই। পিন্টু মাহাতোকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যে সেই অশনী সঙ্কেতও দেখছে অনেকে। তবে সবটাই নির্ভর করছে স্বয়ং পিন্টুর ওপর। তিনিই এই মরসুমের সেরা আবিষ্কার। মোহনবাগানের আট বছর পর কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরই উত্থান এই ছেলের।

জঙ্গলমহল থেকে উঠে এসে বড় দলের হয়ে খেলেই প্রথম ডার্বি গোল। এর থেকে আর বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে? পিন্টুও তাই এগিয়ে রাখছেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোলকেই। গোল পেয়েছেন মহমেডানের বিরুদ্ধেও। কলকাতা লিগের শেষ ম্যাচে পিন্টুর একমাত্র গোলেই টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রেখেছে মোহনবাগান। পর পর দুই ডার্বিতে গোল। মাথা ঘুরে গেলেই যে শেষ।

এখনও শহুরে হাওয়া তেমনভাবে স্পর্শ করেনি তাঁকে। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলতে গেলে লজ্জা পায় সেই ছেলে। অনেক কষ্টের উত্থান। তবে এ তো সবে শুরু। এখনও অনেকটা রাস্তা, অনেকটা লড়াই বাকি। আড়াই মাস পর বৃহস্পতিবার গ্রামে ফিরলেন পিন্টু মাহাতো। তাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ধদরাশোন গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে স্টেশনে হাজির ছিল প্রচুর মানুষ। তিনি ফিরবেন বলে অপেক্ষায় ছিল তাঁর গ্রাম। পিন্টুও মুখিয়ে ছিল সবার সঙ্গে দেখা করতে। তার মধ্যেই জানিয়ে গেলেন তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে, ‘‘হার্ড ওয়ার্ক।’’

নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে ফুটবলও এক সময় ছিল বিলাসিতা। চাষের কাজ করেন বাবা। চার জনের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। অর্ধেকদিন খাওয়াও জুটত না ঠিক মতো। পান্তা-আলু সেদ্ধর মেনুতে একদিন ডাল জুটলে সেটাও ছিল অনেক। সেই পিন্টু এখন স্বপ্ন দেখছেন পরিবারকে একটু ভাল জীবন দেওয়ার। একটু ভাল-মন্দ খাওয়ানোর। দল জিতেছে। তাতে তাঁরও ভূমিকা কম নয়। তিনিই এ বছরের সেরা আবিষ্কার। তবে পিন্টু কী চান?

 প্লেয়ার লিস্ট এল না, হয়ে গেল ম্যাচ

পিন্টু বলছিলেন, ‘‘আমি আই লিগ খেলতে চাই। আই লিগে সাফল্য চাই।’’ আর তার পর? ‘‘অবশ্যই দেশের হয়ে খেলতে চাই।’’ সব ফুটবলার যে স্বপ্ন দেখেন তিনিও ব্যাতিক্রম নন। এখন এক সপ্তাহের ছুটি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আই লিগের জন্য অনুশীলন শুরু করবে মোহনবাগান। এই মাঝের সময়টা বাড়ির মানুষের সঙ্গে কাটাতে চান পিন্টু।

বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের মাংস দিয়ে জমিয়ে ভাত খেলেন পিন্টু

পিন্টুকে দেখেই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে জঙ্গলমহল। তাঁরাও পারেন ফুটবলে বাংলার মুখ হয়ে উঠতে। যেমন পেরেছেন পিন্টু। অমিয় ঘোষ, সঞ্জয় সেন হয়ে শঙ্করলাল চক্রবর্তী, পিন্টুর সব কোচের গলাতেই প্রশং‌সার সুর। সবাই স্বপ্ন দেখছে তাঁকে নিয়ে। আর কোচদের এই স্বপ্নকেই সফল করতে চান পিন্টু। তার জন্য কোচেরা যা বলবেন তাই করতে রাজি পিন্টু। আই লিগ হয়ে জাতীয় দলের ওই নীল জার্সিটা যে ডাকছে হাতছানি দিয়ে।

সব ছবি ও ভিডিও মোহনবাগানের ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।