লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আপনি ঠিক করেননি রাহুল

লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়েলোকসভায় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে রাহুল।

কৃষ্ণেন্দু দত্ত


লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আপনি কোন সৌজন্য বোধের পরিচয় দিলেন? প্রশ্নটা আজ আপনাকে গোটা দেশেরই করা উচিত।

হতে পারেন আপনি কংগ্রেসের মতো শতাধিক বছরের পুরনো একটি রাজনৈতিক দলের বর্তমান সভাপতি। হতে পারেন আপনি অমেঠী কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ। হতে পারেন আপনি ইন্দিরা গান্ধীর নাতি। হতে পারেন আপনি রাজীব-সনিয়ার ছেলে। হতে পারেন আপনি হার্ভাড এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা চূড়ান্ত স্মার্ট-ঝকঝকে যুবক। হতে পারে আপনি ব্যক্তিগত ভাবে বিজেপিকে বা সেই দলের কোনও নেতাকে অপছন্দ করেন। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী তো দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে এ ভাবে লোকসভার মধ্যে জড়িয়ে ধরার বিষয়টি আপনার মাথাতে এল কী করে! এত ক্ষুরধার মাথায় ন্যূনতম এই বোধটুকু কাজ করল না যে, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ও ভাবে জড়িয়ে ধরা যায় না!

আপনি শুধু জড়িয়ে ধরলেন না। প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে নিজের আসনে ফিরে এসে বসার পর কারও দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন। কী কুৎসিত লাগছিল আপনাকে দেখে, তখন! রকে আড্ডা মারা আর সংসদে বসে আলোচনা করাকে আপনি এক করে ফেললেন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতায়!
লোকসভা দেশের আইনসভা। সেখানে দেশবাসীর নানাবিধ সমস্যা এবং তার সুরাহা, দেশের অগ্রগতির পথ নির্ধারণ করা, সামাজিক এবং আর্থিক উন্নয়নের দিশা ঠিক করা— এ সব নিয়ে চর্চা হয়, সেই সংসদ আসলে গণতন্ত্রের মন্দির। আপনাদের মতো সাংসদরা সেই মন্দিরের পূজারি। যে কোনও মন্দিরেরই আসলে কিছু নিয়মকানুন, গরিমা, সম্ভ্রম— এ সব থাকে। চটুল নাটুকেপনা দেখানোর জায়গা লোকসভা বা রাজ্যসভা নয়।

আস্থাভোটে মোদী জিতলেন, নাটকীয় সব মুহূর্তের সাক্ষী রইল লোকসভা

আপনার পরিবারের বহু মানুষ পবিত্র এই সংসদের সদস্য ছিলেন। এখনও আছেন। তাঁদের কখনও জিজ্ঞেস করে দেখবেন তো, এমনটা কী করা যায়!
প্রধানমন্ত্রী পদেরও নিজস্ব গরিমা রয়েছে। সেই গরিমার জায়গা থেকেই এক জন প্রধানমন্ত্রীকে লোকসভার ভিতরে ও ভাবে জড়িয়ে ধরা যায় না রাহুল। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা নিয়ে যে সময় লোকসভায় আলোচনা চলছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে লোকসভায় তাঁর নির্দিষ্ট আসনে বসে রয়েছেন, সেখানে আপনি কী ভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন?

দেশের একটা অংশের মানুষ হয়তো আপনার এই আচরণে খুশি হয়েছেন। তাঁরা আপনার ভিতর বীরত্ব খুঁজে পেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী সারা ক্ষণ নাটুকেপনা করেন, আপনি তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন— এই ভেবে আপনাকে তাঁরা বাহবা জানাতেই পারেন। এমনকি, নরেন্দ্র মোদীর ‘হাইপার আলিঙ্গন সিনড্রোম’-এর আপনি যোগ্য জবাব দিয়েছেন তাঁকে জড়িয়ে ধরে— এ জন্য আপনাকে তাঁদের কেউ কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দিতে পারেন। কিন্তু, সত্যি করে ভেবে বলুন তো, আপনি ঠিক কাজ করেছেন?

না করেননি। লোকসভার স্পিকারও বলছেন, আপনার আচরণ সঠিক ছিল না। ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি যে অবাক হয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছেন সুমিত্রা মহাজন। তাঁর মতে, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ও ভাবে জড়িয়ে ধরা সঠিক ছিল না। অংসদীয় না বললেও তিনি জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী পদের গরিমার কথা সব সময় সাংসদদের মাথায় রাখা উচিত। সুমিত্রা জানান, তিনি এক জন মা হিসাবে আলিঙ্গনের মতো উষ্ণ ভঙ্গিমার বিষয়টি অনুধাবন করেন। কিন্তু, সেটা যখন লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করা হয়, সাংসদদের সংসদের গরিমা এবং নিয়মের কথা মাথায় রাখা উচিত

অনাস্থা প্রস্তাবের সপক্ষে বলতে উঠে, আপনি কিন্তু জ্বালাময়ী কথাই বলছিলেন। আক্রমণ করছিলেন বিজেপিকে। প্রধানমন্ত্রীকে। সে পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, সেই বক্তব্য শেষে আপনি ওয়েলে নেমে হনহনিয়ে এগিয়ে গেলেন। থামলেন প্রধানমন্ত্রীর আসনের পাশে গিয়ে। তার পর হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরলেন। সম্ভ্রমে বাধা উচিত ছিল। সৌজন্যে বাধা উচিত ছিল। শিক্ষা, রুচি— সবেতেই বাধা উচিত ছিল রাহুল। এটা বুঝতে গেলে রকেট সায়েন্স বোঝার কোনও প্রয়োজন নেই যে, লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আপনি ঠিক করেননি।