করোনায় ঝুঁকি কম মেয়েদের, গবেষণায় জানা গিয়েছে ছেলেদেরই ঝুঁকি বেশি

করোনায় ঝুঁকি কম মেয়েদের

করোনায় ঝুঁকি কম মেয়েদের বলছে গবেষণা। ছেলেদের ঝুঁকি বেশি করোনা সংক্রমণে, সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন ব্যাখ্যাই উঠে আসছে। লিখলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী


করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়েই নানা রকমের গবেষণা চলছে। আর সেই সব গবেষণা থেকে উঠে আসছে বিভিন্ন অজানা তথ্য। আর সেই সব তথ্যই কিন্তু আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানকে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ঠিক যেমন ভাবে, কয়েক দিন আগের গবেষণালব্ধ ব্যাখ্যা বলছে, মেয়ে নয়, ছেলেদেরই ঝুঁকি বেশি করোনা সংক্রমণে, বিশ্ব জুড়ে এবং বয়স নির্বিশেষে।

মার্কিন মুলুকের ‘ওয়েক ফরেস্ট ব্যাপ্টিস্ট মেডিকেল সেন্টার’-এর ওই গবেষণা আমাদের অর্থাৎ চিকিৎসকদের ভাবতে বাধ্য করছে। বলা হচ্ছে, মেয়েদের নাকি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি ছেলেদের থেকে। শুধু তাই নয়, এর পরেও যে মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সুস্থতার হারও ছেলেদের থেকে কয়েক গুণ বেশি। আর এখানেই উঠে আসছে টি-সেলের কথা। পুরো নাম টি-লিম্ফোসাইট। এই কোষ আমাদের সরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর মার্কিন মুলুকের ওই গবেষণায় জানা গিয়েছে, ছেলেদের থেকে মেয়েদের শরীরে টি-সেল অনেক বেশি সক্রিয়।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা একটি হরমোনের উল্লেখও করেছেন। এবং সেটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন তাঁরা। মেয়েদের সেক্স হরমোন ‘ইস্ট্রোজেন’-এর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে এর পিছনে। ‘ওয়েক ফরেস্ট ব্যাপ্টিস্ট মেডিকেল সেন্টার’-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এনজিওটেনসিনের মাত্রা কমাতে ইস্ট্রোজেনের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। এনজিওটেনসিন পরিবর্তিত এনজাইম-২ (এসিই-২) কোভিড-৯-এর ব্যাপ্তিকে কমাতে সাহায্য করে। করোনাভাইরাস কিন্তু হার্টের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে। তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

কিন্তু এনজাইম-২ কার্ডিওভাসকুলার রোগের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করে। এমনকি হার্টের মেমব্রেন, কিডনি এবং ক্ষুদ্রান্তের সঙ্গেও এসিই-২-এর গভীর যোগ আছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য এই সব জায়গায় রিসেপটর থাকে। তাদের প্রতিহত করে ভাইরাসকে কোষের বাইরে বার করা জন্যও অত্যন্ত কার্যকরী এই এসিই-২। যার মূলে রয়েছে কিন্তু যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন। ইস্ট্রোজেন হরমোন মেয়েদের শরীরে নিয়মিত ভাবে এই ধরনের কার্যক্ষমতা দেখায়। ফলে, বিভিন্ন রোগের হাত থেকে তারা অনেকখানি মুক্তি পায়।

নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, সার্বিয়া— এমনকি আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশেও মহিলাদের করোনা থেকে সেরে ওঠার হার অনেক বেশি। তবে কো-মর্বিডিটি যেমন, হার্টের রোগ, হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস, ক্রনিক রেনাল ডিজিজ, ক্যানসারের ক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু ছেলেদের থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছে। এই সব রোগের ক্ষেত্রে রোগীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন বেশি। এবং তাঁদের সুস্থতার হারও বেশ কম। এমনকি যে সমস্ত ছেলেরা কাজের সূত্রে বাইরে বার হন, একই সময় জুড়ে বাইরে থাকা মেয়েদের থেকে কিন্তু তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কিন্তু অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছেলেদের থেকে ধূমপায়ী মেয়ের সংখ্যা গোটা বিশ্ব জুড়েই অনেক কম। ধূমপান যাঁরা করেন না, তাঁদের ফুসফুস অপেক্ষাকৃত তাজা থাকে। আর ঠিক সেই কারণেই মেয়েদের ফুসফুস ভাল কাজ করে।

অর্থাৎ বিজ্ঞান বলছে, ভিন্ন যৌন পরিচয়ের কারণেই কিন্তু এক জন ছেলের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এবং মেয়েদের থেকে তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার হারও অনেকটাই কম। কাজেই সাধু সাবধা‌ন।

(এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)