জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যা ধিরে ধিরে মানুষের শরীরকে খেয়ে নেয়। একটা একটা করে বিকল করে দেয় শরীরের যন্ত্রপাতি। বুঝে উঠতে পারে না মানুষ। তার আগেই সব শেষ। ডায়াবেটিস নিয়ে আগে এত ভাবনা-চিন্তা ছিল না। ছিল না সঠিক জীবনযাত্রার উপদেশও। খাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণই যে শুধু ডায়াবেটিসের উপশম হতে পারে না তা গোটা বিশ্বকে জানাচ্ছে ডায়াবেটিস এডুকেটররা। আর শিক্ষক দিবসকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস এডুকেটর ডে হিসেবে।
ডায়াবেটিসেরও শিক্ষক?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীতে এসেছি আমরা ভালমতো বেঁচে থাকার জন্য। আর ডায়াবেটিক রোগীদের সেই বেঁচে থাকাকেই আরও সুন্দর করে তুলছেন এই শিক্ষকরা। এঁদের কাজ কী? ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইউয়ের সভাপতি ডাক্তার দেবাশিস বসু তা পরিষ্কার করে জানালেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন কে এই এডুকেটর, কেনই বা এই এডুকেটর।
ডে মানে ‘ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইউ’
তিনি বলেন, ‘‘সব সভ্য দেশেই ডায়াবেটিসকে অনেকবেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আমাদের দেশে তার পরিমাণটা অনেক কম। তবুও সেটা এখন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দেশেই এডুকেটররা ডায়াবেটিস রোগীদের দিকে নজর রাখছেন।’’ তা হলে ডাক্তারের ভূমিকাটা কী? দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘ডাক্তাররা কাজটা শুরু করেন কিন্তু তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যান একজন এডুকেটর। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও ডাক্তারের মাঝের যোগাযোগের পুরোটাই থাকে সেই এক জন এডুকেটরের হাতে।’’
আসলে কাজটা হয় অনেকটা এমনভাবে। একজন অসুস্থ মানুষ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারলেন তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করলেন। অসুধ দিলেন। বলে দিলেন কী ভাবে থাকতে হবে। এ বার সেই ব্যক্তি ডাক্তারের সব পরামর্শ মেনে চলছেন কিনা, অসুধ নিয়মিত খাচ্ছেন কিনা, ইনসুলিন যাঁরা নিচ্ছেন তার পরিমাণ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, এই সব বিষয়ে নজর রাখেন একজন এডুকেটর। এই এডুকেটরের মাধ্যমে একজন আক্রান্ত অনেকবার্তা পৌঁছে দিতে পারেন ডাক্তারের কাছে যা তিনি নিজেও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না। এর সঙ্গে ডায়েট নিচ্ছেন কিনা তাও দেখেন তাঁরা।
কিন্তু এ দেশে এডুকেটরের চাহিদাটা এখনও বুঝতে আর একটু সময় লাগবে। এই এডুকেটররা থাকবেন ডাক্তারদের সঙ্গেই। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে ৩০ থেকে ৫০ জন ডাক্তারের সঙ্গে এডুকেটর রয়েছেন। দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘ডাক্তার-রোগী-এডুকেটর এটা একটা টিম। আর এই টিম হিসেবে কাজ যত হবে তত মানুষ সুস্থ শরীরে বাঁচবে ডায়াবেটিস নিয়েও। মহামারিকেও রুখে দেওয়া যাবে তখন।’’ আর সেই চেষ্টাই করছেন কলকাতায় বসে এই মানুষটি।
দেবাশিস বসুর সংস্থায় ইতিমধ্যেই রয়েছেন বেশ কয়েকজন এডুকেটর। জেলায় জেলায় গিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে শিবিরের। চেষ্টা করা হচ্ছে এডুকেটরের সংখ্যা বাড়ানোর। ডাক্তারদেরও বলা হচ্ছে সঙ্গে এডুকেটর রাখতে। বিশ্বাস ভবিষ্যতে এ দেশেও দেশেও কমে আসবে ডায়াবেটিসে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা। ডায়াবেটিস নিয়েই স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে মানুষ। সেই লক্ষ্যেই লড়াই চালাচ্ছেন দেবাশিস বসু, সংস্থার সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ মজুমদার ও কিরণ বাহরুস।