জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ঘর বন্দি তিন ভাই-বোন উদ্ধার হল গুজরাতে। তাঁদের উদ্ধার করল একটি সমাজসেবী সংস্থা। ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাতের রাজকোটে। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন খবর বার বার উঠে এসেছে, যেখানে মৃত আত্মীয়কে আগলে দিনের দিনের কাটিয়েছেন কেউ। পরবর্তী সময়ে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় এভাবে গৃহবন্দি হয়ে থাকার বিষয়টি রীতিমতো অস্বাভাবিক। যা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে মনোবিদদের।
রাজকোটের কিসানপাড়ায় থাকেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নবীন মেহতা। তাঁর সঙ্গে থাকেন তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে।নবীনের পেনশনের টাকাতেই চলে সংসার। নবীনের স্ত্রী ১০ বছর আগেই মারা গিয়েছেন। তার পর থেকেই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। শুরুতে কেউ অতটা ভাবেননি। কিন্তু ক্রমশ সন্দেহ হতে শুরু করে প্রতিবেশীদের। তারাই খবর দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন নবীনের তিন ছেলে-মেয়েকে বাইরে কেউ দেখেনি। যা দেখা যেত তা নবীন। তিনিই বাইরের সব কাজ করতেন। বাজার-দোকান থেকে সব কিছু। বুড়ো বাবা সব করছেন এবং সন্তানরা ঘরে বসে রয়েছেন এটা যেমন খটকা তৈরি করে তেমনই একটা সময় পর্যন্ত মনে হয়েছিল তাঁরা চাকরী সূত্রে হয়তো বাইরে গিয়েছেন। তবুও সন্দেহ হয়।
তার পর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে লোকজন এসে সেই বাড়িতে এই তিনজনকে উদ্ধার করে। নবীন বাড়িতে না থাকায় তাদের ধাক্কায় কেউ দরজা খোলেননি। সে কারণে শেষ পর্যন্ত দরজা ভাঙতে হয়। তার পরই বেরিয়ে আসে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। দরজা ভাঙতেই কটূ গন্ধ নাকে যায় এবং তিন ভাই-বোনকে মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পান তারা।
কারও গায়ে ছিল না কোনও কাপড়। অনাহারে রীতিমতো কঙ্কালসার অবস্থা তিন জনেরই। সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুরনো পচা খাবার, মল-মূত্র। কারও উঠে শৌচালয় পর্যন্ত যাওয়ারও ক্ষমতা নেই। সকলের চুল দাড়ি এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে মুখ দেখা যাচ্ছে না ঠিক মতো। আর কিছুদিন এভাবে থাকলে হয়তো তাঁদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হত না।
তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাঁদের বাবা নবীন জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে যখন তাঁর স্ত্রী মরা যান তখন সেই শোক মেনে নিতে পারেনি তাঁর ছেলে-মেয়েরা। তার পর থেকেই তাঁরা নিজেদের গৃবন্দি করে নেয়। তিনি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা শোনেনি তাঁরা।
সেই সময় কেন তিনি তাঁর ছেলে-মেয়েদের কেন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন না সেটাও বড় প্রশ্ন। প্রশ্ন আরও থেকেই যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, এঁরা কেউই মানসিকভাবে অসুস্থ নন। তাহলে এমন কঙ্কালসার চেহারা কেন হল, কেনই বা ময়লা, নোংরা পরিবেশএর মধ্যে তাঁরা থাকলেন বা থাকতে দিলেন তাঁদের বাবা? ছেলে-মেয়েরা কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে এলে হয়তো অনেক কিছু তথ্য জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, নবীন বাবু সরকারি চাকরী করতেন। মাসিক ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পান। ছেলে-মেয়েদেরও পড়াশোনা শিখিয়েছেন। বড় ছেলে উকিল। তিনি ওকালতি করতেন এক সময়। ছোট ছেলে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং মেয়ে সাইকোলজিতে স্নাতক। এরকম শিক্ষিত মানুষদের কী ভাবে এই পরিস্থিতি হল সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন।
কেন পরিবারের অন্য মানুষরা বা আত্মীয়-পরিজনরা কোনও খোঁজ নিলেন না? তিন ভাই-বোনের আলাদা আলাদা বন্ধু থাকবে। তাঁরাই বা কেন কোনও খোঁজ নিলেন না এত বছরে? সবটাই বড় ধোঁয়াশা এখনও। বিষয়টি কি এতটাই সহজ? থাকছে প্রশ্ন।
(দেশের সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন)
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)