Baba Mandir-এ লেখা রয়েছে এক সেনার মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকার কাহিনী

Baba Mandir

যেখানে মানুষ পৌঁছে যান প্রকৃতির টানে। উঁচু পাহাড়, বরফমোরা শৃঙ্গ আর কনকনে ঠান্ডা। আর তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মন্দির (Baba Mandir)। যে মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে রোমহর্ষক এক কাহিনী। যে কাহিনির নাগাল সাধারণ মানুষ না পেলেও প্রতিমুহূর্তে পান সেনাবাহিনীর কর্মীরা। পর্যটকদের জন্য এটা শুধু একটা ভ্রমণক্ষেত্র কিন্তু সেখানেই বিচরণ করেন এমন একজন যার কাহিনীমুখে মুখে ঘোরে। উচ্চতা ১৪,০০০ ফুট। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা আর বরফের চাদরে ঢাকা নাথু লা সীমান্ত। এখানে অক্সিজেন এতটাই কম যে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রাতে তাপমাত্রা মাইনাসের অনেক নিচে নেমে যায়। পাশেই চিন সীমান্ত। দেশকে রক্ষা করতে সেই সীমান্তেই চলে সেনাবাহিনীর নিয়মিত পাহারা। এই দুর্গম গিরিপথে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সেনারা যখন পাহারা দেয়, তখন তারা জানে তাদের আগলে রেখেছেন কেউ। তাঁকে দেখা যায় না, তাঁকে অনুভব করা যায় শুধু। তিনি ‘বাবা হরভজন সিং’।

ঘটনার শুরু ১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবর। পঞ্জাব রেজিমেন্টের সেনা হরভজন সিংয়ের বয়স তখন মাত্র ২২। তাঁর হাতে দায়িত্ব পড়ে টুকলা লা থেকে ডোংচুই লা পর্যন্ত খচ্চরের পিঠে মালপত্র চাপিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। পাহাড়ের আবহাওয়া কখন যে বদলে যাবে কেউ জানে না। শুরু হয় প্রবল তুষারপাত। তার মধ্যেই পিচ্ছিল পাহাড়ি রাস্তায় হঠাৎ পা হড়কে পড়ে যান হরভজন সিং। সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়েন গভীর খাদে। নিচে খরস্রোতা নদী সঙ্গে তুষার ঝড়। পড়ে যাওয়ার পর তিনি নদীতে ভেসে যান না বরফের নিচে চাপা পড়ে যান তা এখনও কেউ জানেন না।


আবহাওয়া কিছুটা ঠিক হলে শুরু হয় তল্লাশি, কিন্তু কোনও খোঁজ মেলে না হরভজনের। সবাই বুঝে যায় তাঁকে আর জীবিত পাওয়া মুশকিল। একটা সময়ের পর তল্লাশি চালানো বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনী। তাঁকে নিখোঁজ বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এই গল্প এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত, যদি সনা সেই ঘটনার তিনদিনের মধ্যে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটত। নিখোঁজ হরভজনের এক সহকর্মী রাতে স্বপ্নে দেখেন, হরভজন তাঁকে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে বলছেন, “আমি সেখানে বরফের নিচে চাপা পড়ে আছি। আমার শরীরটা উদ্ধার করো।”

প্রথমে সবাই এটাকে মনের ভুল হিসেবেই ধরে নেয়। কিন্তু সেই স্বপ্ন বার বার ঘুরে ফিরে আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নকে স্বীকৃতি দিয়ে আবার শুরু হয় খোঁজ, এবার সেই নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়েই খোঁজা হয়। সবাইকে অবাক করে সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই উদ্ধার হয় হরভজন সিংয়ের দেহ। তাঁর পকেট থেকে উদ্ধার হয় মানিব্যাগ আর কিছু চিঠি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হয়। সবাই শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হয়। হরভজন সিংকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এবারও শেষ হয় না কাহিনি।

তার কিছুদিন পর থেকেই সেই সীমান্তে শুরু হয় নানারকমের অলৌকিক ঘটনা। রাতে পাহারারত জওয়ানরা দেখেন অন্ধকারে একা একজন বর্ডারে টহল দিচ্ছেন। যদি কাজে ব্যস্ত কোনও সেনা কর্মীর চোখ লেগে যেত তাহ‌লে কেউ এসে তাঁদের ডেকে দিতেন সপাটে একটা গালে চড় কষিয়ে। এই ঘটনা শুধু ভারতীয় সেনাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ছাড় পায়নি চিনা সেনারাও। তারা জানায়, ভারতের দিক থেকে একজন সাদা ঘোড়ায় চড়া সৈনিক রাতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, যুদ্ধের আগে বা কোনও বড় হামলার আগে হরভজন সিং নাকি স্বপ্নে এসে অফিসারদের সতর্ক করে দেন। চিনা সেনারা কবে, কোথায় আক্রমণ করবে, সেই খবর তিনি আগেই পৌঁছে দেন। ১৯৬৭ সালের চিনা আক্রমণের সময় বা তার আগে, পরেও বহুবার এমনটা ঘটেছে। তার পর থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বাস করতে শুরু করে তিনি আছেন, সেই বিশ্বাস এতটাই প্রবল যে, তারা হরভজন সিংকে আজও ‘অন ডিউটি’ হিসেবে গণ্য করে। তিনি নিয়মিত মাইনে পান এবং তাঁর প্রমোশনও হয়।

Baba Mandir

তাঁকে সম্মান দিতে নাথু লা-র কাছে তাঁর নামে তৈরি হয়েছে  ‘বাবা মন্দির’। সেখানে তাঁর ইউনিফর্ম ইস্ত্রি করে রাখা থাকে, জুতো পালিশ করা থাকে। জওয়ানরা দাবি করেন, সকালে নাকি সেই পালিশ করা জুতোয় কাদার দাগ দেখা যায়, যেন কেউ রাতে সেটা পরে হেঁটেছে। তার বিছানায় নাকি কেউ শুয়েছিল, এমন ভাঁজও পাওয়া যায়।

প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। বাবা হরভজন সিং ছুটিতে বাড়ি যান। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তার জন্য জিপ পাঠায়। তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র— ইউনিফর্ম, জুতো, ট্রাঙ্ক— জিপে করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ট্রেনে করে পঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার কুকা গ্রামে তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়। ট্রেনের রিজার্ভেশন চার্টে তাঁর নাম থাকে। তাঁর সঙ্গে তিনজন জওয়ানও যান। তাঁর সিট পুরো রাস্তা খালি থাকে, কেউ সেখানে বসে না। ছুটি শেষে আবার একই মর্যাদায় তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় ডিউটিতে। তাঁর মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন প্রতি মাসে মানি অর্ডারে ছেলের বেতন পেতেন।

বিজ্ঞান কী বলবে জানা নেই, তবে কিছু আবেগ আর কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন অনেক অবাস্তব ঘটনাকেও বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। তার মধ্যে অন্যতম হরভজন সিংয়ের এই কাহিনি। যাঁকে এতবছর পরও অস্বীকার করার সাহস দেখায়নি স্বয়ং ভারতীয় সেনবাহিনী। শুধু কী ভারতীয় সেনা, উল্টোপারের চিনা সেনারাও তাঁকে যথাযত মর্যাদা দেয়। ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের সময় বাবার জন্য একটা চেয়ার খালি রাখে চিনা অফিসাররা।

দেশপ্রেম যেন এভাবেই যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে একজন মানুষকে বা বলা যায় দেশের স্বার্থে আজও সেই আত্মা পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে যায়নি। তাঁকে স্যালুট করতেই হয়। স্যালুট করতে হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও। যারা দিনের পর দিন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও দেশকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যান।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle