৩৭০ বছর পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল দিল্লির Sheesh Mahal । লাল কেল্লার লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখতে দেখতে বার বার এই শীশ মহলের কথা শোনা যায়। তখনই মনের মধ্যে ইচ্ছেটা জেগে ওঠে, এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে ইতিহাসপ্রেমী ভ্রমণার্থীদের। মুঘল ঐশ্বর্যের সর্বোচ্চ উদাহরণের মধ্যে পড়ে এই শীশ মহল। কিন্তু দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সেটি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তা দ্রুত জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ইতিহাসকে ধরে রেখেই তাকে আবার নতুন করে গনে তোলা হয়েছে। তার পূর্বের জাঁকজমক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং ৩৭০ বছর পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সেই ইতিহাস, যা আপনাকে নিয়ে যাবে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্দরমহলে।
উত্তর-পশ্চিম দিল্লির শালিমার বাগের ভেতরে অবস্থিত ১৭ শতকের এই প্রাসাদটি একসময় সম্রাট শাহজাহানের রাজকীয় আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এবং দিল্লি ডেভলপমেন্ট অথরিটি (DDA)-এর নেতৃত্বে সূক্ষ্ম সংস্কার কাজের পর, ২ জুলাই, ২০২৫ থেকে খুলে গিয়েছে ঐতিহাসিক শীশ মহল।
পুনরুদ্ধার করা শীশমহল এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, যেখানে এর ল্যান্ডস্কেপ করা বাগান, বেলেপাথরের কাঠামো এবং ঐতিহ্যবাহী নকশার উপাদান-সহ মুঘল যুগের স্থাপত্যের এক ঝলক দেখা যাবে। এই স্থানটি ইতিহাস প্রেমী, স্থাপত্য অনুরাগী এবং দিল্লির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এবার একটু জেনে নেওয়া যাক শীশ মহলের ইতিহাস, যা আপনাকে আকৃষ্ট করবে নিশ্চিত। ১৬৫৩ সালে সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক কমিশনপ্রাপ্ত, শীশমহল একসময় আইজাবাদ উদ্যান নামে পরিচিত একটি বৃহত্তর আনন্দ উদ্যানের অংশ ছিল, যা তিনি আইজুন-নিশা বেগমের স্মরণে নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এটি শালিমার বাগ নামে আরও বেশি করে পরিচিত হয়ে ওঠে, যার উৎপত্তি ফার্সি শব্দ “আনন্দের ঘর” থেকে। ১৬৫৮ সালে শাহজাহানের পুত্র ঔরঙ্গজেবের রাজ্যাভিষেকও হয় এই প্রাসাদে, তার পর থেকে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বেড়ে ।
মূলত এই কমপ্লেক্সটিতে চার বাগ নকশার উপাদান ছিল, যা একটি প্রতীকী চার ভাগের মুঘল উদ্যান বিন্যাস, যা পৃথিবীর স্বর্গের প্রতীক। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলায় পড়ে থাকার পর, প্রাসাদটি তার জাঁকজমক হারিয়ে ফেলে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর যখন জায়গাটি পরিদর্শন করেন, তখন পরিস্থিতি বদলে যায়, এবং সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানান।
এর পর যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় শুরু হয় শীশ মহল পুনরুদ্ধারের কাজ। এএসআই এবং ডিডিএ ঐতিহ্যবাহী মুঘল নির্মাণ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে এই সংস্কারের কাজ শুরু করে। কারিগররা ঐতিহাসিক নির্মাণ কৌশলকে ধরে রাখতে তাদের মতো করেই চুনের সুরখি (ইটের ধুলো দিয়ে চুনের মর্টার), লাখৌরি ইট (পাতলা, সমতল মুঘল-শৈলীর ইট) এবং গুড়, বেল ফল এবং উড়াদ ডালের মতো প্রাকৃতিক বাঁধাইকারী উপাদান ব্যবহার করে এই শীশ মহল নতুন করে গড়ে তুলেছে। যার মধ্যে রয়েছে এর বড়দারি (১২-স্তম্ভ বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন) এবং তিনটি ঐতিহ্যবাহী কুটিরের সংস্কার, যা এখন পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন রূপে সেজে উঠেছে।
ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আধুনিক ব্যবস্থাও। ট্যুরিস্টরা কোথাও ঘুরতে গেলে ঘোরার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু জিনিসের খোঁজেও থাকেন। সেই কথা মাথায় রেখে সেখানে তৈরি হয়েছে, রিডার্স ক্যাফে কর্নার ও ক্যাফে শালিমার। প্রথমটি বইপ্রেমী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুরাগীদের জন্য একটি স্বর্গ, যেখানে শান্ত পরিবেশে বই ও সংস্কৃতির মধ্যে ডুবে যাওয়া যাবে। দ্বিতীয়টিতে থাকছে, সারাদিন ঘোরার পর একটু পেটপুজোর ব্যবস্থা। বাগানের মধ্যে অবস্থিত একটি আরামদায়ক খাবারের দোকান, হাঁটার পরে কফি বা হালকা খাবার খাওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা।
শীশ মহলের ভ্রমণ নির্দেশিকা
অবস্থান: শীশ মহল উত্তর পশ্চিম দিল্লির শালিমার বাগ জেলা পার্কের ভিতরে অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন: নিকটতম মেট্রো স্টেশনগুলি হল শালিমার বাগ, জাহাঙ্গীরপুরী এবং হায়দারপুর বদলি মোড়। এর যে কোনও একটি থেকে বাসন বা অটো আপনাকে একদম শালিমার বাগের গেটের সামনে পৌঁছে দেবে।
সময়: এটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, সপ্তাহান্তে এবং সরকারি ছুটির দিনগুলি-সহ।
ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়: সকালে বা শেষ বিকেল সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হয়, বিশেষ করে গরমের সময়। বসন্ত এবং শীতের শুরুতে এই স্থানের বাগানগুলি আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। তবে দিনের যে কোনও সময়ই এখানে যাওয়া যায়।
এবার আপনার দিল্লি ভ্রমণে যুক্ত হল আরও একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। মুঘল যুগে আগ্রহী বা কোনও ইতিহাসপ্রেমী শহরের শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী দিল্লির স্থানীয় মানুষ, অথবা বিভিন্ন রকমের রত্ন, পাথরপ্রেমী, শীশমহল আপনার সময়ের জন্য উপযুক্ত একটি গন্তব্য। এর যত্নশীল সংস্কার কেবল ভুলে যাওয়া স্থাপত্যে প্রাণ সঞ্চার করে না বরং দিল্লির সমৃদ্ধ অতীতের দরজাও খুলে দেয়।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google