নিরঞ্জন আগার শতবর্ষের দোরগোড়ায়, ডেভিল মানেই দেশি হাঁসের ডিম

নিরঞ্জন আগার

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: নিরঞ্জন আগার, ভিনাইল বোর্ডের উপর বড় বড় করে লেখা দোকানের নাম। সঙ্গে লেখা প্রতিষ্ঠার বছরও। ১৯২২। অর্থাৎ ৯৯ বছর! শতবর্ষের আঙিনার পা-দেওয়া নিরঞ্জন আগার গত প্রায় দেড় বছর ধরে একটু বেসামাল। কারণ অতিমারি এবং তা রুখতে লকডাউন। মাঝে মাঝে খুলেছে বটে, তবে পুরনো সে খোলতাই এই বাজারে আর হয়নি। তবে আগামী বছর শতবর্ষে নিশ্চয়ই এমন হাল থাকবে না।

গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে উঠেই উত্তরমুখী সিঁড়ি ধরলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। নিরঞ্জন আগার, না কোনও চাকচিক্য নেই। পুরনো দিনের টেবিল চেয়ার। দেওয়ালে ঝুলন্ত মেনুবোর্ড। তাতে খাবারের নামের পাশে চক-খড়ি দিয়ে তার দাম লেখা। কী কী পাওয়া যায়? মাটন কোর্মা, ফিশ ফ্রাই, ডিমের ডেভিল, টোস্ট, কাটলেট, কোপ্তা, ফ্রাই, চপ— লিস্টি অনেক লম্বা। বিকেল চারটেয় দোকান খুললেও, এই সে দিন পর্যন্ত, লকডাউনের আগে রাত আটটা সাড়ে আটটার মধ্যে সব শেষ। আসলে দেখনদারিতে পিছিয়ে থাকলেও ট্র্যাডিশন আর কোয়ালিটিতে কোনও খামতি নেই।

তখন ব্রিটিশ আমল। নিরঞ্জন হাজরা বর্ধমানের জমিজমা, চাষবাসের পাশাপাশি কলকাতায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। বলরাম দে স্ট্রিটে সেই উদ্যোগেরই ফসল হিসাবে চালু হয় ছোট্ট চায়ের দোকান। সেই ব্যবসায় সাফল্য মিলতেই নিরঞ্জন আগারের পথ চলা শুরু। শুরুর দিনের মতো এখনও নিউমার্কেট থেকেই মাছ আসে। খাসির মাংস আসে হাতিবাগানের নির্দিষ্ট দোকান থেকে। তার থেকেও বড় কথা, সমস্ত রান্নায় যে মশলা দেওয়া হয়, তা হাতে এবং শিলে বাটা।

নিরঞ্জন আগার

নিরঞ্জন আগার শতবর্ষের দোরগোড়ায়, ফলে তার ঝুলিতে আছে অনেক রোমাঞ্চকর ইতিহাস। কাছেই মিনার্ভা থিয়েটার। সেই সময় তার বিপুল রমরমা ছিল। এখানে আসতেন উৎপল দত্ত, অপর্ণা সেন, তরুণ কুমার, বিকাশ রায়, ক্রিকেটার পঙ্কজ রায়— তারকার হাট। তবে নিরঞ্জন আগার তার ডেবিলের জন্য বিখ্যাত আজও। শতবর্ষে এতটুকুও তার স্বাদহরণ হয়নি। ডেবিল কিন্তু খাঁটি দেশি হাঁসের ডিমের। ভাঙলেই ভিতরে সূর্যাস্তের লাল টকটকে কুসুম।

এই ডিমের ডেভিল বাড়িতেও বানানো যায়। তবে সে স্বাদ কি নিরঞ্জন আগারের মতো একই রকম হবে? না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবুও চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে…

১২টি ডিমের ডেভিল বানাতে—

উপকরণ:
হাঁসের ডিম: ১২টি, খাসির মাংসের কিমা: ২৫০ গ্রাম, মোটা ও মিহি বিস্কুটগুঁড়ো: ১ কেজি, পেঁয়াজ: ২৫০ গ্রাম, আদা বাটা: ১/২ চা-চামচ, রসুন বাটা: ১/২ চা-চামচ, লঙ্কাগুঁড়ো: ১/৪ চা-চামচ, হলুদগুঁড়ো: ১ চা-চামচ, গরমমশলা: ১/৪ চা-চামচ, টোম্যাটো সস: : ১ টেবল-চামচ, চিনি: ১ চা-চামচ, সর্ষের তেল: ২ টেবল-চামচ, বনস্পতি: ২৫০ গ্রাম, ময়দা: ১ কাপ, নুন: স্বাদমতো

প্রণালী:
প্রথমে আদাবাটা, পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, লঙ্কাগুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো, নুন দিয়ে কিমা কষে নিতে হবে।
এর মধ্যে মোটা বিস্কুটগুঁড়ো, টোম্যাটো সস, চিনি ও অল্প নুন দিয়ে মণ্ড তৈরি করে নিতে হবে।
এর পর ডিম সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি চার টুকরো করুন।
এ বার ডিমের টুকরোর মধ্যে কিমার পুর দিয়ে সেট করে নিন।
এর পর ময়দা আর জল দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে নিন।
এ বার ডিম ব্যাটারে ডুবিয়ে মিহি বিস্কুটগুঁড়ো মাখিয়ে বনস্পতিতে ভাজুন।
কাসুন্দি আর পেঁয়াজের স্যালাডের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।


প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)