জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আসলে ভাল থাকার (Staying Happy) কোনও বিকল্প নেই। এটাই জীবনের সব থেকে বড় সজ্ঞা। আর ভাল থাকতে হলে কী করতে হবে তারও কোনও গতে বাধা নিয়ম নেই। ব্যক্তি চরিত্রের উপর নির্ভর করেই ভাল থাকার সজ্ঞা বদলে যায়। আর বদলে যায় সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশের উপর নির্ভর করে। কখনও কেউ ভাল থাকে অনেক মানুষের সঙ্গে আবার কখনও কেউ একাই জীবনের স্বাদ খুঁজে পান। আসলে ওই যে প্রথমেই বললাম, ভাল থাকার কোনও গতে বাধা নিয়ম নেই। সবটাই নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তি জীবন, পেশাদার জীবন আর আপনার বেঁচে থাকার উপর। তাই ভাল থাকতে যা যা প্রয়োজন সেটাই করুন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনার ভাল থাকা যেন অন্য কারও খারাপ থাকার কারণ না হয়।
তবে অবশ্যই কিছু গতে বাধা বিষয় আমাদের জীবনে রয়েছে। যদি সেগুলো মেনে চলা যায় তাহলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়। সেকরমই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তবে সবটাই নিজের পরিস্থিতি দেখে ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমত, তুলনা থেকে দূরে থাকুন। কারও সঙ্গে কারও যেমন তুলনা করবেন না তেমনই নিজের সঙ্গেও অন্য কারও তুলনা করবেন না। তুলনা মানুষকে সব থেকে বেশি হতাশা দেয়। সব সময় মনে রাখতে হবে আমি আমার মতো। আমি কারও মতে নই। ৫ হাজার টাকা মূল্যের ড্রেস পরে বলে আমাকেও পরতে হবে তার কোনওমানে নেই। আমি ৫০০ টাকাতেই সেরা পরিধান বেছে নিতে পারি। প্রত্যেকের জীবনের গুরুত্ব নির্ভর করে তাঁর বেঁচে থাকার উপর। তাই কারও সঙ্গে কারও বেঁচে থাকার যেমন মিল নেই তেমনই ব্যবহারিক জীবনেও মিল থাকতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, নিজের ক্ষমতাকে চিনুন। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যেমন দুর্বলতা রয়েছেন তেমনই রয়েছে ক্ষমতাও। আমাদের সব সময় আমাদের দুর্বলতাটাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়। কিন্তু সেটা বাইরের লোকেরা করে। আপনি জানেন আপনার কী ক্ষমতা রয়েছে। না জানলে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। আর সেই ক্ষমতাটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলেই জীবনে সব হতাশা কেটে যাবে।
তৃতীয়ত, জীবনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। জানতে হবে আমি নিজে কী চাই। কেউ প্লেটে সাজিয়ে খুশি, আনন্দ কাউকে এনে দেয় না। সেটা অর্জন করতে হয়। আর সেটা পাওয়া যায় যদি লক্ষ্য স্থির থাকে। অনিশ্চয়তা জীবনে অশান্তি ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। দেখা গিয়েছে জীবনের বেশিরভাগ সময় হতাশা আসে এই অনিশ্চয়ত থেকে। তাই পেশাদার জীবন হোক বা ব্যক্তিগত জীবন—সব সময় একটা লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া উচিত। সব সময় সেই মতই জীবন চলবে তা নয়। তবে আমি যখন জানি আমি কী চাই তখন সেই পথে এগোতে সুবিধে হয়।
চতুর্থত, প্রত্যাশা বর্জন করতে হবে। প্রত্যাশা আমাদের জীবনের সব থেকে বড় শত্রু। তবে প্রত্যাশা ছাড়াও জীবন চলে না। যে কোনও সম্পর্কে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েই যায়। তবে সেই প্রত্যাশাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাতে কোনও প্রত্যাশা পূরণ না হলে যেন মনে না হয় জীবন শেষ হয়ে গেল। বরং আরও বড় উদ্দমে পরের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। যেটা হয়নি সেটা আমার ছিল না এটা ভাবতে পারলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
পঞ্চমত, নিজের কাজ, নিজের সাফল্যকে উদযাপন করুন। সাফল্য যেমনই হোক না কেন, ছোট বা বড় সেটাকেই নিজের মতো করে পালন করুন। যাঁরা আপনার সাফল্যে খুশি হয়েছেন তাঁদের সেই উৎসবে ডাকুন। তবে একজনের সাফল্যে আর একজনের খুশি হওয়ার প্রমান খুবই কম রয়েছে। তাই নিজেই নিজের সঙ্গে সেটা সেলিব্রেট করুন। আর অনেক চেষ্টার পর সাফল্য যদি না আসে তাহলে আপনার চেষ্টাটাকেই উদযাপন করুন। কারণ এই চেষ্টাটাও অনেকে করতে পারেন না।
ষষ্ঠত, নিজেকে আর নিজের একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোকে সময় দিন। তবে সব জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। যেটা করতে চান, যেটা করতে ভাল লাগে সেই সব কিছুকে নিয়েই এই সময়টা বের করে আনুন। পরবর্তী সময়ে যেন মনে না হয় পরিবার,কাছের মানুষকে আরও একটু সময় দিলে হয়তো সম্পর্কগুলো সুন্দর থাকত। তখন কিন্তু সময় চলে গিয়েছে। আর যে সময় চলে যায় তা আর ফেরে না। তাই সম্পর্কগুলোকেও নিজের সময় দিন। আর নিজেকে সময় দেওয়াটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত এক ঘণ্টা নিজের জন্য বের করে নিন। যখন আপনি নিজের প্রিয় বই পড়বেন, গান শুনবেন বা শুধুই অন্ধকার ঘরে শুয়ে কিছু ভাববেন। যে সময়টা একান্ত আপনার।
সপ্তমত, যা করছেন সেটাই উপভোগ করুন। বিশেষ করে পেশার ক্ষেত্রে। যদি যে কাজটি করছেন সেটি উপভোগ করতে না পারেন তাহলে কাজে একশো শতাংশ দিতে পারবেন না। কাজের জায়গায় সমস্যা তৈরি হবে। সব সময় নিজের মুডও খারাপ থাকবে। আমাদের ৮-৯ ঘণ্টা প্রতিদিন কেটে যায় পেশার দুনিয়ায়। তাই সেই জায়গাটা উপভোগ করতে পারাটা খুবই জরুরী। এই ৮-৯ ঘণ্টার বাইরে যে সময়টা রয়েছে সেখানে আপনি আর কী কী করেন একবার ভেবে দেখুন তো। ঘরের কাজ, রান্না, ফোনে আড্ডা, সন্তানদের চর্চা,পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বাজার করা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেটাই করছেন সেটাই সেই মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে করুন যাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভাল লাগে। স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে রান্না করুন, সন্তানদে সময় দিন, বাজার যান। বাজারের ফাঁকে কফি শপে ঢুকে পড়ুন। দেখবেন পেশার দুনিয়ার ক্লান্তিটা হাওয়া হয়ে যাবে।
এই সবের শেষে বা এই সবকে একত্রিত করলে যে ছবিটা উঠে আসে সেটা হল ভাল থাকার চাবীকাঠি নিজের হাতেই রয়েছে। আপনি সেটাকে কীভাবে চালাবেন সেটা একান্তই আপনার বিষয়। তবে একটাই জীবন আর সেখানে সকলের ভাল থাকার অধিকার রয়েছে। তাই ভাল আপনাকেও থাকতে হবে। সবাইকেই ভাল থাকতে হবে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google