জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২-তে। প্রায় ২৮ বছর পর আগামিকাল ৩০ সেপ্টেম্বর সেই মামলার রায় ঘোষণা করবে লখনউয়ের বিষেষ সিবিআই আদালত।
ওই দিন বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে একটি অস্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পর সেই অভিযোগে দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়। একটিতে অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। অন্যটিতে অভিযুক্ত ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, অশোক সিঙ্ঘল, বিনয় কাটিয়ার, উমা ভারতী, সাধ্বী ঋতম্ভরা, মুরলীমনোহর জোশী, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণু হরি ডালমিয়া।
ঘটনার ১০ দিন পর অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি এমএস লিবেরহানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় একটি কমিশন। তিন মাসের মধ্যে সেই কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিন মাস তো দূরঅস্ত্, ৪৮ বার সেই সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষমেশ কমিশন রিপোর্ট জমা দেয় ২০০৯ সালে।
তার আগে ১৯৯৩ সালে উত্তরপ্রদেশের ললিতপুরে বিশেষ আদালত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে মামলা সরে যায় লখনউয়ের বিশেষ আদালতে। ওই বছরেরই ৫ অক্টোবর সিবিআই চার্জশিট পেশ করে। সেখানে বালাসাহেব ঠাকরে, কল্যাণ সিংহ, চম্পত রাই বনসল, ধর্মদাস, মহন্ত নিত্যগোপাল দাস প্রমুখের নাম ছিল। তিন বছর পরে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ জুড়ে দেয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা গঠনের নির্দেশ লখনউয়ের বিশেষ আদালতের।
কিন্তু ২০০১ সালে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে যান অভিযুক্তরা। দু’বছর পর অর্থাৎ ২০০৩ সালে আট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। ওই বছরেই রায়বরেলীর এক আদালত অভিযুক্তদের তালিকা থেকে অব্যাহতি দেয় লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। ২০০৫ সালে লখনউয়ের বিশেষ আদালতের সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
এর পরে ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সিবিআই। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণী, উমা ভারতী, মুরলীমনোহর জোশী এবং কল্যাণ সিংহকে নোটিস দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত খারিজ করে আডবাণী-সহ ২১ জনকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। বাবরি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা জুড়ে লখনউয়ের আদালতে মামলার নির্দেশ। দু’বছর অর্থাৎ ২০১৯-এর এপ্রিলের মধ্যে রায়দানের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৯-এ এসে রায়দানের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০-র এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মধ্যে ৯ নভেম্বর, ২০১৯ বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০২০-র মে মাসে রায়দানের সময়সীমা ফের বাড়িয়ে ৩১ অগস্ট করা হয়। শেষ পর্যন্ত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই আদালত।

লালকৃষ্ণ আডবাণী, উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহ এবং মুরলীমনোহর জোশী
৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। ওই মসজিদ ১৫২৮ সালে অযোধ্যায় বাবরের সেনাপতি মির বাঁকি তৈরি করেন। ১৯৪৯ সালে ওই মসজিদের ভিতরে আচমকা রামের বিগ্রহ মেলে। মুসলিমদের তরফে হাসিম আনসারি আদালতের দ্বারস্থ। পাল্টা হিন্দুদের তরফে আদালতে নির্মোহী আখাড়া। চত্বরকে ‘বিতর্কিত’ ঘোষণা করে তালা ঝোলানো হয়। ১৯৮৪ সালে রাম জন্মভূমি আন্দোলন শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। নেতৃত্বে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। ১৯৯০ সালে বিতর্কিত স্থানে রামমন্দির তৈরির দাবিতে রথযাত্রার আয়োজন করেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর। ৩০ অক্টোবর, ১৯৯০ সালে মসজিদ অভিমুখী করসেবকদের মিছিল থামাতে গুলির নির্দেশ দেন উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিংহ যাদব। সেই ঘটনায় ১৬ জন মারা যান।
(দেশের সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন)
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)