গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা, ২১ বছর পর সেই স্মৃতি এখনও তাজা

গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা

গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা ভারতীয় রেলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তার ১০ বছর আগে আমি উত্তরবঙ্গ ছেড়েছি। কিন্তু যাতায়াত লেগেই থাকত। কলকাতা থেকে শিকড়ের টানে আমরা স্বপরিবারে যে কোনও সময় উত্তরবঙ্গ পাড়ি দিতাম। এই গাইসাল স্টেশন প্রতিবারই পড়ত পথে। দুর্ঘটনার পর পরই যখন ওই স্টেশনের উপর দিয়ে যাচ্ছিল দার্জিলিং মেল শিউড়ে উঠেছিলাম। লাইনের চারদিকে পড়ে রয়েছে ট্রেনের বিধ্বস্ত কামরাগুলো। অনেক বছর ওভাবেই পড়েছিল সেগুলো। পড়ে তা সরানো হয়। ২১ বছর পর সেই ভয়ঙ্কর দিনকে মনে করলেন মেঘ চক্রবর্তী


সালটা ১৯৯৯। দিন ২ অগস্ট। এই সময়টা বর্ষার। আর উত্তরবঙ্গের বৃষ্টি মানে টানা দু-তিনদিন ধরে চলতে থাকে। এমনই ছিল সেই দিনটিও। যে দিনটি ভারতীয় রেলের এক কালো অধ্যায়। টানা বৃষ্টিতেও গোটা উত্তরবঙ্গই ডুবে ছিল অন্ধকারে। সঙ্গে বন্যার ভ্রুকূটি। ঠিক এখন যেমন অবস্থা। আর তার মধ্যেই ঘটে গেলে সেই ভয়ঙ্কর ডিজাস্টার। এই দূর্ঘটনাকে এই নামই দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় রেলের পক্ষে।

সেদিন বেশিরভাগ জায়গায় বৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় রেলের অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবস্থাও কাজ করছিল না। সবটাই চলছিল ম্যানুয়ালি। সঙ্গে কারণ প্যানেল ইন্টারলকিং সিস্টেমে কাজ চলছিল। রাত একটা লাগাদ কিষানগঞ্জে পৌঁছয় অবোধ অসম এক্সপ্রেস। বৃষ্টিতে ট্রেন ততক্ষণে প্রায় ছ’ঘণ্টা দেড়িতে চলছে। অসমের পথে দিকে যাচ্ছিল ট্রেনটি যে কারণে তার ধরার কথা আপ লাইন কিন্তু সিগন্যালিংয়ের ভুলে সেটা চলে যায় ডাউন লাইনে। ডাউন লাইন ধরে আপের দিকে চলতে শুরু করে অবোধ অসম এক্সপ্রেস।

ট্রেন যে ভুল পথে চলছে তা কারও নজরেই আসেনি। উল্টোদিক থেকে ততক্ষণে সেই একই লাইনে ধেয়ে আসছিল দিল্লিগামী ডাউন ব্রক্ষ্মপুত্র মেল। যে সবুজ সিগন্যাল এতক্ষণ একটার পর একটা পেরিয়ে যাচ্ছিল অবোধ অসম এক্সপ্রেস তা ছিল ব্রক্ষ্মপুত্র মেলের জন্য। চা‌লক সেটা বুঝতে পারেননি।

রাত ১২.৪০ মিনিট নাগাদ নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন ছেড়েছিল ব্রক্ষ্মপুত্র মেল। গাইসাল স্টেশন ছাড়তেই অবোধ অসম এক্সপ্রেসের জোরালো আলো দেখতে পেয়ে সিগন্যাল দিতে গিয়ে দেখেন সেই ট্রেন পাশের লাইনে নয় যে লাইনে তাঁর ট্রেন রয়েছে সেই লাইনেই ধেয়ে আসছে। মারাত্মক স্পিডে ছুটে চলা দুটো ট্রেনের প্রবল হর্ণের শব্দ, ইমার্জেন্সি ব্রেক কোনও কাজে লাগেনি।

রাত ১.৪৫ মিনিট। দুটো ট্রেনের কামরা কোথাও উঠে পড়েছে একে অপরের উপর, কোথাও ঢুকে গিয়েছে একে অপরের শরীরে। সঙ্গে ধেয়ে আসছে আর্তনাদ। দলা পাকিয়ে যাওয়া কামরাগুলোকে আলাদা করে চেনা মুশকিল হচ্ছিল। সাতটা জেনারেল কোচ ও একটি আর্মি কোচ থেকে কাউকে জীবিত বের করা যায়নি। কার্গিল যুদ্ধ জয় করে আনন্দে বাড়ি ফেরা মুখগুলো আর দেখতে পায়নি পরিবারগুলো।

সরকারি হিসেব বলছে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে ৯০ জন জওয়ান ছিলেন। আহত ৬০০ থেকে ১০০০। ভিড়ে ঠাসা ছিল দুটো ট্রেনের জেনারেল কোচ যার কোনও হিসেব নেই। ওই দূর্ঘটনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি স্টেশন মাস্টার। পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নীতিশ কুমারও।

(নিজের প্রিয় মুহূর্তকে ফিরে দেখতে ক্লিক করুন এখানে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)