জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বসুন্ধরার সঙ্গে ড্র মোহনবাগানের, খেলার ফল ১-১। মঙ্গলবার মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ড্র করে এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তারা। বসুন্ধরার ব্রাজিলীয় তারকা ফার্নান্ডেজ ২৮ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ৬২ মিনিটে গোল শোধ করেন এটিকে মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় তারকা ডেভিড উইলিয়ামস। এই ড্রয়ের ফলে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গেল কলকাতার ক্লাব। বসুন্ধরাকে সেমিফাইনালে যেতে হলে জিততেই হত। মোহনবাগানের দরকার ছিল ড্র। আর ড্র করেই পরবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছে গেল হাবাসের দল।
ভারত-বাংলাদেশ ফুটবল মানে টানটান উত্তেজনা। এদিনও তাই ছিল মাঠের মধ্যে। বারবার অবৈধ ভাবে বিপক্ষের ফুটবলারদের বাধা দেওয়ার জন্য ও মাঠে অসংযত আচরণের জন্য বসুন্ধরার পাঁচ ফুটবলারকে হলুদ কার্ড ও একজনকে লাল কার্ড দেখতে হয়। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে লাল কার্ড দেখেন মিডফিল্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। ফলে ম্যাচের অর্ধেকটাই দশ জনে খেলতে হয় তাঁদের। এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডার প্রীতম কোটালও হলুদ কার্ড দেখেন। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই বসুন্ধরা এটিকে মোহনবাগানের বক্সের সামনে দু’টি ফ্রি কিক ও দু’টি কর্নার আদায় করে নেয়। তবে সবুজ- মেরুন ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় কোনওটিই কাজে লাগাতে পারেননি ।
কাউন্টার অ্যাটাক অবশ্য চালিয়ে যাচ্ছিল বসুন্ধরা। ব্রাজিলীয় জুটি রবিনহো ও ফার্নান্ডেজ ব্যস্ত রাখেন এটিকে মোহনবাগান রক্ষণকে। ২৮ মিনিটের মাথায় এমনই এক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে এগিয়েও যায় তারা। রবিনহোর পাস থেকে ফার্নান্ডেজ বক্সের ডানদিক থেকে বাঁ দিকে এসে প্রথম পোস্টে সোজা শট নেন। গোলকিপার অমরিন্দর সিং হয়তো বলের লাইন ঠিকমতো ধরতে পারেননি। ফলে ডানদিকে ডাইভ দিয়েও ব্যর্থ হন। গত ম্যাচেও এক গোলে পিছিয়ে থেকে তিন গোল দিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। তাই এই ম্যাচেও প্রথম আধ ঘণ্টার মধ্যে গোল খেয়েও একেবারেই দমে যায়নি তারা। বরং তাদের আক্রমণের ধার ক্রমশ বাড়তে থাকে। আরও দু’বার গোলের সুযোগ পায় সবুজ- মেরুন বাহিনী। ৩৩ মিনিটের মাথায় কোলাসোর শট সোজা গোলকিপার আনিসুরের হাতে জমা পড়ে ও ৪০ মিনিটের মাথায় রয়ের গোলমুখী শট ব্লক করেন খালিদ।
এ দিন প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানের উইং প্লে সে ভাবে দেখা যায়নি। দীপক বা শুভাশিস দুই উইং দিয়ে খুব কমই ওঠেন। বুমৌস না থাকায় মাঝমাঠেও তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৩০ মিনিট বসুন্ধরার অর্ধেই বেশিরভাগ সময় বল ঘোরাফেরা করে। বাংলাদেশের দল এক গোলে এগিয়ে থাকায় এবং তাদের একজন ফুটবলার কম থাকায় তাঁরা কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে যায়। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে সবুজ- মেরুন বাহিনী এবং ৬২ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন ডেভিড উইলিয়ামস। চাপের মুখে গোল করে দলকে বিপদ থেকে অনেকবারই উদ্ধার করেছেন অস্ট্রেলীয় তারকা। এ দিনও ফের সেটাই করলেন। বাঁ দিকের উইং দিয়ে উঠে বিশ্বনাথকে ডজ করে বক্সে ঢুকে ডেভিডকে উদ্দেশ্য করে ক্রস বাড়ান কোলাসো। সেই ক্রস নিয়ে সোজা গোলে শট মারেন ডেভিড এবং এই গোলেই এএফসি কাপের নক-আউট পর্বের দরজা খুলে যায় রয় কৃষ্ণাদের সামনে।
সমতা আসার পরে গোলের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। ৭২ মিনিটের মাথায় ডেভিডের দূরপাল্লার গোলমুখী শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান আনিসুর। ফিরতি বলে ফের ডেভিডকে পাস করেন রয়। কিন্তু এ বার তাঁর বাঁপায়ের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। টানা প্রায় আধ ঘণ্টা রক্ষণাত্মক খেলে কোণঠাসা বসুন্ধরা কিংস শেষ ১৫ মিনিটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে। ৮৩ মিনিটের মাথায় অল্পের জন্য তাদের গোলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা রবিনহোর দূরপাল্লার শট অমরিন্দর আটকাতে ব্যর্থ হলে বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৯০ মিনিটের মাথায় ফার্নান্ডেজ বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নিলে তাও ব্যর্থ হয়।
শেষ দশ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন বসুন্ধরার দুই ব্রাজিলীয় তারকা। তাঁদের আটকাতে গোলের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে দেয় এটিকে মোহনবাগান। পাঁচ মিনিটের স্টপেজ টাইমকে কাজে লাগানোরও চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হন। ২২ সেপ্টেম্বর ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হবে সেন্ট্রাল জোনাল ফাইনালের জয়ী দল। বুধবার রাতে এই ফাইনালে মুখোমুখি হবে উজবেকিস্তানের এফসি নসফ ও তুর্কমেনিস্তানের অহল এফসি। এই ম্যাচের জয়ী দলই হতে চলেছে এটিকে মোহনবাগানের পরবর্তী প্রতিপক্ষ।
এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল, কার্ল ম্যাকহিউ, শুভাশিস বসু, লেনি রড্রিগেজ, দীপক টাঙরি (শেখ সাহিল), মনবীর সিং, ডেভিড উইলিয়ামস (বিদ্যানন্দ সিং), লিস্টন কোলাসো, রয় কৃষ্ণা।
বসুন্ধরা কিংস দল: আনিসুর রহমান (গোল), তারিক রাইহান কাজি (ইয়াসিন খান), তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষ (মাহবুবুর রহমান), খালেদ শফিই, আতিকুর ফাহাদ (বিপ্লো আহমেদ), ফার্নান্ডেজ, সুশান্ত ত্রিপুরা, রাউল বেসেরা, মাসুক মিয়া জনি (মহম্মদ ইব্রাহিম), রবিনহো।
(ম্যাচ রিপোর্ট ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ওয়েব সাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)