স্বপ্ন ভাঙল বিশ্বকাপের, দুরন্ত খেলেও কোরিয়ার কাছে হারের ইতিহাস বদলাল না ভারতের

স্বপ্ন ভাঙল বিশ্বকাপের

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: স্বপ্ন ভাঙল বিশ্বকাপের । তখন হাতে রয়েছে আর মাত্র তিন। মরিয়া হয়ে উঠেছিল ভারতীয় ফুটবলাররা। তাতেই কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছিল ছোট ছোট ছেলেরা। ডাগ আউটে দাড়িয়ে ততক্ষণে ফল বুঝে গিয়েছেন কোচ বিবিয়ানো। বুঝে গিয়েছেন এ যাত্রায় আর হল না। তাও সাইড লাইন থেকে শেষ পর্যন্ত ছেলেদের তাতিয়ে গেলেন। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই এক শিবিরে জয়ের উল্লাস অন্য দিকে হতাশায় ডুবে যাওয়া। মাঠের মধ্যেই মুখ ঢেকে বসে পড়ল ওরা। ওরা যা করেছে তার তুলনা হয় না। নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে ফুটবলের ভারতকে। তবুও স্বপ্ন ভাঙার শব্দটা যেন এ দেশে বসেই শোনা গেল আরও একবার। ০-১ গোলে হেরে গেল ভারত।

ম্যাচের সকালে কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্ডেজ একটাই কথা বলেছিলেন, ‘‘আমরা মাত্র ৯০ মিনিট দূরে রয়েছি।’’ কিন্তু বিবিয়ানোর সেই দীর্ঘ লড়াই পারল না এই ৯০ মিনিটকে মাত দিতে। পারল না  বিশ্বকাপের দরজা খুলতে। আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফোটা একটা টিম তৈরি করেছিলেন এই জুনিয়র কোচ। তাই হয়তো ম্যাচ হেরেও তিনি বলে গেলেন, ‘‘যা পেয়েছি তাই অনেক। ১৬ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলাম। ছেলেরা দারুণ লড়াই করল। সবটাই আমাদের গ্রাসরুট পর্যায়ের ফল। দেশে ফিরে আবার সেই কাজে মন দেব।’’

মালয়েশিয়ায় বসে যখন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গোটা অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দল তখনই শুভেচ্ছার হোয়াটসঅ্যাপটা করেছিলাম বিবিয়ানোকে। গোয়ার এই ফুটবলার বিবিয়ানো আজ ভারতীয় যুব দলের সফলতম কোচ। এএফসি কাপে পর পর জয় তুলে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। সামনে একটাই লক্ষ্য ছিল এএফসি কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছনো। মনের কোণায় অবশ্য ছিল অন্য স্বপ্নের হাতছানি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ।

 দল থেকে বাইরে রাখা হল শিখর ধাওয়ানকে

২০১৭ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ভারতে হওয়ায় আয়োজক দেশ হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ভারতীয় ফুটবল দল। কিন্তু খেলে যোগ্যতা অর্জন করে বিশ্বকাপ খেলার গুরুত্বটাই আলাদা। যা পাওয়ার জন্যই সোমবার মাঠে নেমেছিল ভারতীয় ফুটবল। জিতলেই বিশ্বকাপ। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। যে গোলকিপারের হাতে পুরো প্রথমার্ধ আটকে থাকল কোরিয়া সেই গোলকিপার নীরজ কুমারের সামান্য ভুলেই গোল হজম করতে হল ভারতকে। ম্যাচ শেষে ভারতের কোচ বিবিয়ানো বলে গেলেন, ‘‘আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি আমরা এমনি এমনি কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছইনি। এই ছেলেদের জন্য আমি গর্বিত।’’

ভারত-কোরিয়া ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: এআইএফএফ টুইটার।

প্রথমার্ধ গোলশূন্যই থেকে গিয়েছিল। শুরুতে লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা। ভারতীয় রক্ষণের আসল স্তম্ভ বিকাশের না থাকাটাও বড় ধাক্কা ছিল ভারতীয় দলের সামনে। কিন্তু তা নিয়ে ভাবতে চাননি কোচ বিবিয়ানো। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভারতের ইতিহাস খুবই খারাপ। কখনওই এর আগে জেতেনি কোনও বয়স ভিত্তিক ম্যাচেই। এ বার তাঁর ব্যাতিক্রম ঘটাতেই নেমেছিল টিম বিবিয়ানো। কিন্তু ইতিহাস বদলানো গেল না। ৬৭ মিনিটে সেই সব আশায় জল ঢেলে দিল কোরিয়ার সুপার সাব জিয়ন সাং বিন।

গোলকিপার নীরজ কুমার প্রথম থেকে প্রায় চারটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথমার্ধে চোইয়ের শটকে অল্পের জন্য গোলে ঢোকার হাত থেকে বাঁচালেন। সেই নীরজ যে গোলটি হজম করলেন সেটি তাঁকে মানায় না। প্রথম শটটা বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর নিজের দক্ষতায়। কিন্তু বল দখলে রাখতে পারেননি। তাঁর হাত থেকে ছিটকে যাওয়া বল গোলে ঠেলেন কোরিয়া ফুটবলার। ভারতীয় রক্ষণেরও এখানে একটা ভূমিকা থাকতে পারত। কিন্তু কেউই সেই বল ক্লিয়ার করতে জায়গায় পৌঁছতে পারেনি।

পুরো ম্যাচে ভারত তেমনভাবে আক্রমণে উঠতে পারেনি। প্রথমার্ধটা বড্ড রক্ষণাত্মক দেখাল বিবিয়ানোর ছেলেদের। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে রবি বাহাদুরের ৩০ গজ দুর থেকে নেওয়া একটা শট কোরিয়া গোলকিপার শিন সং-হুনকে পরীক্ষার মুখে ফেলে। দ্বিতীয়ার্ধে তেমনভাবে সুযোগ দিল না কোরিয়া। ৫২ মিনিটে গিভসন সিং মইরাংথেমের হাফভলি বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ সফল ভারতীয় দলের সেমিফাইনালে যাওয়া হল না। দরজা খোলা হল না বিশ্বকাপেরও। কোরিয়ার সামনে খুলে গেল বিশ্বকাপের দরজা। সেমিফাইনালে কোরিয়াকে খেলতে হবে বৃহস্পতিবার তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে।