শুরু হয়ে গিয়েছে মহিলা দাবা জাতীয় চ্য়াম্পিয়নশিপ ২০২৫। দুর্গাপুরের সিধু কানু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্টে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছেন ২৭ রাজ্যের ১৩৯ জন প্রতিযোগী। আর তাঁদের মধ্যেই অন্যতম বাংলার মেয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। টুর্নামেন্ট শুরুর ১২ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত এখানে শীর্ষ বাছাই প্রতিযোগী ছিলেন তামিলনাড়ুর নন্ধিধা পিভি। গতবারের চ্যাম্পিয়নও তিনিই। তবে সময় গড়াতেই বদলে গেল ছবিটা। ফিডে রেটিংয়ে নন্ধিধাকে পিছনে ফেলে শীর্ষে পৌঁছে গেলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)। বাংলার বুকে মহিলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আসর আর সেখানেই শীর্ষ বাছাই হিসেবে খেলতে বসলেন বাংলার এই মেয়ে। যা এই টুর্নামেন্টের জন্য বাড়তি পাওনা তো বটেই।
তাহলে কি শীর্ষ বাছাই হয়ে খেলতে নামাটা বাড়তি চাপ তাঁর কাছে? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী অর্পিতা। বলছিলেন, ‘‘যেহেতু এত বড় টুর্নামেন্ট, তাও আবার বাংলার মাটিতে সেখানে একটু চাপ তো থাকবেই। তবে ফলাফলের উপর আমাদের কোনও হাত নেই। আমরা শুধু বোর্ডে নিজেদের সেরাটা দিতে পারি। আমিও সেটাই চেষ্টা করব সব গেমে।’’ এই টুর্নামেন্টে যে নেক টু নেক ফাইট হবে সেটাও মেনে নিচ্ছেন তিনি।
বলছিলেন, ‘‘এটা খুবই ক্লোজ ইভেন্ট। আমার মনে হয় আমরা যে সেরা ১০ জন আছি তাদের মধ্য়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তো হবেই কারণ সবাই খুব ভালো প্লেয়ার। সঙ্গে তার পরেও যারা রয়েছেন তারাও পিছিয়ে নেই। তারাও চেষ্টা করবে সেরাটা দিতে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’’
টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম অর্পিতার হোটেলে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই মায়ের সঙ্গে এলেন তিনি। দাবার বোর্ডে সাফল্য তাঁকে বদলে দিতে পারেনি। বরং সেই পাশের বাড়ির মেয়েটিই রয়ে গিয়েছে। আফসোস আছে, অনেকদিন ধরে আটকে রয়েছে মহিলা গ্র্যান্ড মাস্টার হওয়ার রাস্তা। র্যাঙ্ক হয়ে গেলেও নর্ম পাচ্ছেন না। তবে নিজের খেলা দিয়েই সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে চান ২৪ বছরের মহিলা ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার। বলছিলেন, ‘‘সময় লাগলে লাগুক, আমি খেলে, জিতে তবেই নর্ম পেতে চাই। অন্য কোনও উপায়ে নয়।’’
তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে তখন তাঁর সমবয়সী ভারতের দুই সেরা মহিলা দাবা প্রতিভা দিব্যা দেশমুখ ও বৈশালী প্রসঙ্গ যে উঠে আসবে সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের প্রতি যথেষ্ট সমীহও রয়েছে তাঁর। মেনে নিলেন, তাঁরা দেশের সেরা প্রতিভা। বলছিলেন, ‘‘অবশ্যই দিব্যা ও বৈশালি বড় প্লেয়ার। ওরা গ্র্যান্ডমাস্টার। ফিডে টাইটেল ও রেটিংয়ের নিরিখেও আমার থেকে ওরা অনেক এগিয়ে। তবে নিশ্চিত যদি কখনও ওদের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয় তাহলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
আজও গড়গড় করে বলে যেতে পারেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নাম। ঠিক সিকোয়েন্স মেনে। ছোটবেলা থেকেই এই অনুশীলনটা করেছিলেন। যা এখনও একই রকমভাবে, একই দক্ষতার সঙ্গে পারেন। আর সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নামের সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে তাঁর দাবা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার খিদেও। তাই হয়তো এখনও একই রকমভাবে সেরাটা দিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। ২০১৯-এ মহিলা ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হয়েছিলেন। অনেকের সঙ্গেই বাংলার দাবাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনিও। আর সে কারণে সামনে বেশ কিছু বড় টুর্নামেন্ট থাকলেও আপাতত তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেই মনোযোগ দিতে চাইছেন।
বলছিলেন, ‘‘আমি বেশ কিছু টুর্নামেন্ট বিদেশে খেলে এসেছি কয়েক মাস আগে। আমি ইউরোপে এর আগে চারটি ও একটি সার্বিয়াতে খেলে এসেছি। এই বছর আর কিছু নেই। আবার আগামী বছর মার্চ, এপ্রিলে যাব।’’ তবে এখন সাফল্যের জন্য কোনও কোচের উপর নির্ভর করছেন না তিনি। বরং নিজে নিজেই নিজেকে তৈরি করছেন।
বলছিলেন, ‘‘আগে আমি অর্ঘ্যদীপ স্যারের কাছে কোচিং নিতাম। এখন উনি একটু ব্যস্ত ছিলেন, বিশ্বকাপে কাউকে সাহায্য করছিলেন। তাই নিজে নিজেই শুরু করি। এখনও সেটাই চালিয়ে যাচ্ছি। তবে দিব্যেন্দু স্যারের নাম আলাদা করে নেওয়ার কিছু নেই কারণ তিনি আর ডিবিসিএ সেই ছোটবেলা থেকেই পাশে রয়েছেন। আর বাবাও আমাকে সব সময় সাহায্য করেন। এভাবেই চলছে।’’
তবে কোচ না নেওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি তাই নিজে নিজেই করার চেষ্টা করছি। কোচিংয়ের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমার মনে হয় আমি চেষ্টা করলে নিজেও পারব, কারণ আমি এখন একটা জায়গায় পৌঁছেছি। আর আমি যদি সঠিক পথে খাটি তাহলে আমি ডব্লুজিএম বা আইএম হতে পারব। আমি নিজেই কাজ করার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় এখন আমি যেখানে রয়েছি সেখানে আমি নিজে খাটলে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।’’
এই আত্মবিশ্বাসটাই বাংলার দাবাকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। দাবা কোচিং প্রতিদিন টাকার নিরিখে আকাশ ছুচ্ছে। অনেকেরই তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণের কাছে তো অলীক স্বপ্ন বটেই। বিদেশি কোচিংয়ের কথা তো ছেড়েই দিলাম, দেশীয় সেরা তারকা দাবাড়ুরাও যথেষ্টই উচ্চমূল্যের কোচ। তাই অর্পিতা যে পথ বেছে নিয়েছেন ভবিষ্যতে তা পরবর্তী প্রজন্মকেও পথ দেখাবে নিশ্চিত।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google
